শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৩৮ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাশিয়ায় চাকরির কথা বলে পাঠানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধে

অলক কুমার, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের কুরমুশী গ্রামের নাজির উদ্দিনকে রাশিয়ার একটি প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির কথা বলে নেয়া হয় রাশিয়ায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পাঠানো হয় সামরিক প্রশিক্ষণে। ১৪ দিন প্রশিক্ষণ দেয়ার পর পাঠানো হয় ইউক্রেন রণাঙ্গনে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ নেই নাজিরের। তার চিন্তায় অস্থির তার বাবা, নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তার স্ত্রী। শিশু সন্তান চেয়ে আছে বাবার অপেক্ষায়। 

নাজির উদ্দিন ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের একমাত্র সন্তান। এর আগে তিনি সৌদি আরব ও ২০১৭ সালে ইরাক গিয়েছিলেন। তিন বছর সেখানে চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। নিজ এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু সফল হননি। তাই আবার বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার সাথে ঢাকার মিরপুর এলাকার এসপি গ্লোবাল নামক একটি জনশক্তি রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের মামুন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

গত ১৫ ডিসেম্বর নাজির উদ্দিন রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। দুবাই হয়ে রাশিয়া পৌঁছান তিনি। তারপর একটি ক্যাম্পে কয়েকদিন রাখা হয়। কিছুদিন পর সেখান থেকে বিমানে আরেক জায়গায় নেয়া হয়। ওই জায়গায় ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন সীমান্তে নেয়া হয় তাদের। গত ১৬ এপ্রিল সকালে নাজির উদ্দিন টেলিফোন কান্না করে বাবা ও স্ত্রীকে জানান, তাদের ইউক্রেনের সম্মুখ সমরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিনের পর থেকে বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ নেই নাজির উদ্দিনের। 
মঙ্গলবার দুপুরে ঘাটাইলের কুরমুশী গ্রামে নাজিরদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের চিন্তায় উদ্বিগ্ন বাবা ফয়েজ উদ্দিন। ছেলের খবরের আশায় প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন। স্বামীর চিন্তায় অস্থির স্ত্রী কুলসুম।

ফয়েজ উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে প্যাকেজিং কোম্পানীতে চাকরির আশা নিয়ে রাশিয়া গেছে। তাকে কেন যুদ্ধে পাঠানো হলো। তাকে যারা চাকরি দেয়ার মিথ্যা কথা বলে রাশিয়া নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছে, তাদের বিচার চাই। তিনি তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকার ও রাশিয়ান দূতাবাদের প্রতি দাবি জানান।
নাজির উদ্দিনের স্ত্রী কুলসুম বেগম জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নাজির। রাশিয়া যাওয়ার পর তাকে যখন যুদ্ধের প্রশিক্ষণে পাঠানোর কথা জানতে পারে, তখন থেকে প্রতিদিন টেলিফোন করে কান্নাকাটি করতেন। ১৬ এপ্রিলের পর থেকে তার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, সে সম্পর্কেও কোন খোঁজ পাচ্ছেন না। 

প্রতিবেশী সোহাগ নামে এক ব্যক্তি বলেন, সে অনেক ভালো লোক ছিলো, তার সাথে দালাল চক্রের এরকম করা ঠিক হয়নি৷ আমরা এলাকাবাসী হিসেবে চাচ্ছি নাজিরকে যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। 

নাজিরের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। সেও প্রতিদিন বাবার খবরের আশায় মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সরকার প্রধানের কাছে আমার দাবি, আমার স্বামীকে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়