শিরোনাম
◈ আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ◈ ভয়ানক অভিযোগ জাহানারার, তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন (ভিডিও) ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা ◈ ভার‌তের কা‌ছে পাত্তাই পে‌লো না অস্ট্রেলিয়া, ম‌্যাচ হার‌লো ৪২ রা‌নে ◈ শুল্ক চুক্তির অধীনে মা‌র্কিন উ‌ড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ ◈ টিটিপাড়ায় ৬ লেনের আন্ডারপাস, গাড়ি চলাচল শুরু শিগগিরই (ভিডিও) ◈ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বার্তা ◈ ভালোবাসার টানে মালিকের সঙ্গে ইতালি যাওয়া হলো না সেই বিড়াল ক্যান্ডির! ◈ ৬৬ পর্যবেক্ষক সংস্থা পেল নিবন্ধন, নতুন নীতিমালায় পুরনো ৯৬টির নিবন্ধন বাতিল

প্রকাশিত : ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:০০ রাত
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আবরাহার নকল কাবার ব্যর্থতা ও পরিণতি

দি ইসলামিক ইনফর্মেশন ডট কম : ইসলামের আগমনের অনেক আগে, আরব উপদ্বীপে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। আজও সেটি মুসলিমদের জন্য একটি জীবন্ত স্মৃতি। এটি আবরাহা নামে এক আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) সেই শাসকের গল্প, যিনি ইয়েমেন শাসন করে মক্কার কাবাকে প্রতিস্থাপন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

আবরাহা ইয়েমেনে একটি বিশাল গির্জা তৈরি করে সেটিকে ‘নতুন কাবা’ হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু তাঁর এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধুলিসাৎ হয়ে যায়, যখন আল্লাহর অলৌকিক হস্তক্ষেপে তাঁর সেনাবাহিনী ধ্বংস হয়।

এই ঘটনা কোরআনের সুরা ফিলে (১০৫ নম্বর সুরা) বর্ণনা করা হয়েছে। বিখ্যাত তাফসিরকার ইবনে কাসিরের ব্যাখ্যায়ও এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। আজও এই গল্প আমাদের শেখায় যে সত্যিকারের ইমানের স্থানকে কোনো মানুষীয় ক্ষমতা বা প্রাসাদ দিয়ে সরানো যায় না।

আবরাহা একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করেন, যার নাম ‘আল-কালিস’। গির্জাটি এত উঁচু ছিল যে এর চূড়া দেখার চেষ্টায় মানুষের মাথার পাগড়ি খসে পড়ত!

আবরাহার রাজনৈতিক সংকট ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা

ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, আবরাহা (যাকে আরবিতে আবরাহা আল-আশরাম বলা হয়) ইয়েমেনের আবিসিনিয়ার ভাইসরয় ছিলেন। তিনি একজন খ্রিষ্টান শাসক, যাঁরা অক্সুম সাম্রাজ্যের অধীনে আরবের বড় অংশ শাসন করতেন।

ইবনে কাসিরের তাফসির অনুসারে, আবরাহা তার আবিসিনিয়ান প্রভু নেগুসের সঙ্গে এক গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে পড়েন। নেগুস তার ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁকে শাস্তি দেওয়ার হুমকি দেন। আবরাহা তাঁর প্রভুর ক্রোধ প্রশমনের জন্য ব্যয়বহুল উপহার পাঠান, কিন্তু তা যথেষ্ট হয় না।

তিনি একটি বড় পরিকল্পনা করেন: ইয়েমেনে একটি অত্যাধুনিক খ্রিষ্টান গির্জা তৈরি করা, যা আরবের হজযাত্রীদের মক্কা থেকে দূরে সরিয়ে আনবে। এটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমন্বয়—প্রভুর প্রীতি লাভ ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ।

ইয়েমেনের ‘নতুন কাবা’: আল-কালিস গির্জা

সানা শহরে (বর্তমান ইয়েমেনের রাজধানী) আবরাহা একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করেন, যার নাম ‘আল-কালিস’। সেটি ছিল একটি মায়াফিসাইট খ্রিষ্টান গির্জা, যা ৫২৭ থেকে ৫৬০-এর দশকের মধ্যে নির্মিত হয়। গির্জাটি এত উঁচু ছিল যে এর চূড়া দেখার চেষ্টায় মানুষের মাথার পাগড়ি খসে পড়ত!

এটি ছিল সাদা পাথরে তৈরি, অলংকৃত ও প্রাসাদের মতো। আবরাহা ঘোষণা করেন যে এটি এখন আরবের নতুন তীর্থস্থান—মক্কার কাবার প্রতিরূপ। তিনি চান যে আরব উপজাতিরা হজের পরিবর্তে এখানে আসবে, যাতে ইয়েমেন অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নেয়নি।

আবরাহা নিজেও আহত হন এবং খাত’আম অঞ্চলে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সেনাবাহিনী ধ্বংস হয়ে যায় এবং মক্কা অক্ষত থাকে।

আরব উপজাতিদের প্রত্যাখ্যান ও কুরাইশির প্রতিবাদ

আরব উপজাতিরা আবরাহার এই ‘নকল কাবা’–কে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে। মক্কার কাবা তাঁদের জন্য ছিল পবিত্রতার প্রতীক—হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর নির্মিত ঘর, যা ইমানের কেন্দ্রবিন্দু। কুরাইশ উপজাতি, যারা কাবার রক্ষণাবেক্ষণ করত, বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ হয়।

ইবনে কাসির বর্ণনা করেন, একজন কুরাইশ যুবক (যাঁর নাম উলাইল বিন উহাব আল-কুরাইশি বলে মনে করা হয়) ইয়েমেন যাত্রা করে আল-কালিস গির্জায় প্রবেশ করেন এবং তা অপবিত্র করে দেন—মলত্যাগ করে চলে আসেন। এই ঘটনা আবরাহাকে ক্রোধান্ধ করে তোলে। তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন যে মক্কার কাবা ধ্বংস করবেন।

সেনাবাহিনীর অভিযান ও অলৌকিক পরাজয়

আবরাহা এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন, যার মধ্যে কয়েকটি হাতিও (যার জন্য সুরা ফিলের নামকরণ করা হয়) ছিল। তিনি মক্কার দিকে অগ্রসর হন। আরবেরা ভয় পেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

ইবনে কাসিরের তাফসিরে বর্ণিত, আল্লাহ আবাবিল পাখির দল পাঠান, যারা সিজ্জিল (পোড়া মাটির পাথর) নিয়ে আক্রমণ করে। এই পাথরগুলো সৈন্যদের স্পর্শ করতেই তাদের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত—যেন খড়কুটো।

আবরাহা নিজেও আহত হন এবং খাত’আম অঞ্চলে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সেনাবাহিনী ধ্বংস হয়ে যায় এবং মক্কা অক্ষত থাকে। এই ঘটনা ঘটে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে, যা মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মবর্ষ নামে পরিচিত ‘আম আল-ফিল’।

আবরাহার সেই গৌরবময় গির্জা আজ আর নেই। সানা শহরের একটি প্রাচীরঘেরা এলাকায় এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যা ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষিত।

আজকের আল-কালিস: ধ্বংসাবশেষের স্মৃতি

আবরাহার সেই গৌরবময় গির্জা আজ আর নেই। সানা শহরের একটি প্রাচীরঘেরা এলাকায় এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যা ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষিত। যদিও কিছু লোককথায় বলা হয় যে এখানে আবর্জনা ফেলা হয়, বাস্তবে এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যা অক্সুমাইট সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে।

তবু এর পরিণতি আবরাহার ব্যর্থতার প্রতীক—যেখানে তিনি তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন, আজ তা শুধু ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ। বিপরীতে, মক্কার কাবা প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলিমকে আকর্ষণ করে, যা ইমানের অটুট শক্তির প্রমাণ।

ইমান অপ্রতিরোধ্য

ইবনে কাসিরের তাফসির এই কাহিনী আমাদের শিক্ষা দেয় যে ধর্মীয় বিশ্বাসকে কোনো রাজনৈতিক চাপ বা বিলাসবহুল নির্মাণ দিয়ে পরিবর্তন করা যায় না। আরবদের মক্কার প্রতি ভালোবাসা ছিল গভীর—এটি ছিল তাদের ঐতিহ্যের অংশ। আবরাহার ব্যর্থতা দেখায় যে সত্যিকারের পবিত্রতা মানুষের হৃদয়ে থাকে, প্রাসাদে নয়। এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আল্লাহর সুরক্ষায় কোনো শত্রু সফল হতে পারে না। অনুবাদ: প্রথম আলো

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়