শিরোনাম
◈ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ট্রাম্পের ফোন, কী কথা হলো দু’জনের ◈ ট্রাম্পের জয়কে বাংলাদেশের আঙ্গিকে ভারত যেভাবে দেখছে ◈ যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সম্মান করুক: ম্যাথিউ মিলার ◈ শীতকাল এবার কেমন হবে-জানালেন আবহাওয়াবিদরা ◈ লুৎফুজ্জামান বাবর গুরুতর অসুস্থ, মেডিকেল বোর্ড গঠন ◈ আইপিএলে মোস্তাফিজ ২ কোটি, সাকিব-মিরাজ কত…? ◈ পার্বত্য অঞ্চল আমাদের দেশের একটি বিরাট সম্পদ, সেখানকার শান্তির জন্য যা দরকার তাই করা হবে: সেনাপ্রধান (ভিডিও) ◈ ট্রাম্পের ঘোষণায় শঙ্কায় ১০ লাখ ভারতীয় : ‘জন্মসূত্রে আমেরিকান নাগরিকত্ব নয়’ ◈ বাংলাদেশ শিল্পকলার সামনে দু'পক্ষের হাতাহাতি, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ অফিসে শুয়ে থাকে হাগু করে এইটা কেমন কথা, পরিস্কার করতে বললেন শেখ হাসিনা!

প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১০:৩০ দুপুর
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:১১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারের একপাক্ষিক নির্বাচন, বিরোধীপক্ষে কিছু তাঁবেদার তৈরি করা হয়েছে: রুহিন হোসেন প্রিন্স

ভূঁইয়া আশিক রহমান: [২] আমাদের নতুন সময়: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৭টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও সিপিবি সেখানে নেই। কেন নেই?
রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) : এটা তো কোনো নির্বাচনই হচ্ছে না। এটা একটা একপাক্ষিক নির্বাচন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তার একান্ত কাছের লোকদের নিয়েই এ নির্বাচন হচ্ছে। শুধু কাছের লোক নয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু তাঁবেদার লোক ও দল তৈরি করা হয়েছে। তাদের যে নির্বাচন হচ্ছে, এটা আসলে ভাগাভাগির নির্বাচন। আমাদের সংবিধান এ ধরনের নির্বাচন এলাউ করে বলে আমরা মনে করি না। আমাদের সংবিধানে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোটের কথা বলা আছে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখছি আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা ফেইল করে গেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার আন্দোলন অনেকদিন ধরেই চলছে। কিন্তু সরকার একথা কানে তোলেনি। এমনকি মন্দের ভালো একটি নির্বাচন করতে গেলেও দলীয় সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমাদের ওই রকম প্রতিষ্ঠান এখনো দাঁড়ায়নি, যার ওপর জনগণ ভরসা করতে পারবে। আমাদের এমন কোনো বাস্তবতা এখনো দাঁড়ায়নি যে, নির্বাচনের সময় প্রশাসন, সব মহল নির্বাচন কমিশনের কথা শুনবে। আমাদের এমন অবস্থা এখনো দাঁড়ায়নি একটা পলিটিক্যাল কালচার গড়ে উঠেনি যে, আমরা সবাই ভোটে দাঁড়াতে পারবো, প্রার্থী দিতে পারবো, ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। এটা ন্যূনতম হলেও নিশ্চিত করা যেতো, যদি নির্দলীয় তদারকি সরকার প্রতিষ্ঠিত হতো। কিন্তু সরকার সেটি না শুনে একপাক্ষিক নির্বাচন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যেটা আমরা বলছি, একতরফা নির্বাচন। তামাশার নির্বাচন। এরকম তামাশার নির্বাচনে সিপিবির অংশগ্রহণ করার কোনো কারণ নেই বলেই আমরা অংশগ্রহণ করিনি। 

[৩] সরকার তো বলছে, অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে তাদের আস্থা নেই। অতীত অভিজ্ঞতাই তাদের এই আস্থাহীনতার জায়গা তৈরি করেছে। 
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমরা তো এই অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিনের জন্য বলিনি। আমরা বলেছি, অনির্বাচিত নয়, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সিপিবি বা বাম দলগুলোর অবস্থান পরিষ্কারÑআমরা বলেছি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকার দরকার। কেন প্রয়োজন, আগেই ব্যাখ্যা করেছি। হ্যাঁ, একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো। এর মিস ইউজ বা অপব্যবহার হয়েছে। বিএনপি নামক দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্টার মিস ইউজ করেছে। যে কারণে আমরা বলেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মোটা দাগে তিনটি ব্যত্যয় ছিলো। এক. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলে ভিন্ন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বা হতে পারে। দুই. এই সরকার নির্বাচনকালীন সময়ের বাইরেও সময় প্রলব্ধিত করতে পারে। তিন. শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে ২০০১ সালের সংকট আমরা দেখেছি। আমরা বলেছি, যাতে এ ধরনের কোনো সংকট সৃষ্টি না হয়, এজন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও বক্তব্য ঠিক রেখে যদি আমরা নির্দলীয় তদারকি সরকার প্রতিষ্ঠা করি, তাহলে এই সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কোনো সুযোগ থাকবে না। সরকার যদি ইতিবাচকভাবে আমাদের কথা গ্রহণ করতো বা দেখতো, তাহলে একটা পথ বের করা যেতো। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত হলে একটা অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন থাকতে পারার কোনো সুযোগ আমরা দেখি না। দলীয় সরকারের অধীনে যদি ভালো নির্বাচন করার উদাহরণ তৈরি হতো, তাহলে তো এই দাবি আবারও উঠতো না। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে তো ভালো নির্বাচন করার উদাহরণ তৈরি করা যায়নি। এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে নেই। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার নয়, বিএনপি সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। 

[৪] দেশে এখন যে রাজনৈতিক সংকট, তা নিয়ে স্টেকহোল্ডাররা প্রতিনিয়তই কথা বলছেন। গবেষণা, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ করছেন। এতো এতো আলোচনা, বিশ্লেষণÑফাইন্ডিংটা কী? অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগের বিপরীতে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের অভাবে সরকার ভুল বা অন্যায় করলেও জোরালোভাবে চাপ দেওয়া যায় না। ফলে জনগণকেই আল্টিমেটলি ভুগতে হয়। আপনার ব্যাখ্যা কী। 
রুহিন হোসেন প্রিন্স: বাংলাদেশের এখন বড় সংকট হচ্ছে ১ শতাংশ লুটেরা শ্রেণি। এই শ্রেণির কারণে ৯৯ শতাংশ সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী। লুটেররা তাদের লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। এ কারণেই তারা গণতন্ত্রহীনতা কিংবা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে। তারা বৈষম্যের সমাজ করে। বিদেশি আধিপত্য শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়। এ থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হলে ৯৯ শতাংশের মতাদর্শের বিকল্প রাজনৈতিক সমাবেশ লাগবে। ক্ষমতা ও ক্ষমতার বাইরে যে দুই পক্ষ আছে, তারা ক্ষমতার পক্ষের রাজনৈতিক দল। ফলে ক্ষমতার পক্ষের রাজনৈতিক দল দিয়ে আপনি কোনো কিছু করতে পারবেন না। জনগণের চাওয়া পূরণ করতে হলে নীতিনিষ্ঠ বামপন্থীদের বিকল্প শক্তি সমাবেশ লাগবে। সেই অর্থে যে, বাংলাদেশে যে দ্বিদলীয় ধারা চলছেÑ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ধারা, এর বাইরে নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক না থাকাটাই এই সময়ের অন্যতম সংকট। বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি যদি থাকতো, তাহলে ক্ষমতায় যারাই থাকতো, শাসক শ্রেণির আওয়ামী লীগ বা বিএনপি থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে রুখে দাঁড়ানো যেতো। অনেক সময় অনেক অপকর্ম তারা করতে পারতো না। 

[৫] এতো বছরে কেন আপনারা শক্তিশালী একটি বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা তৈরি করতে পারলেন না? একসঙ্গে হতে পারেন না? আপনার কি মনে হয় না, এটা বাম রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা। সিপিবি বাম ধারার নেতৃত্বস্থানীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে এই ব্যর্থতার দায় নেবে কি?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: দেখুন, এককথায় এর কোনো উত্তর নেই। বাংলাদেশের বাম আন্দোলনের দীর্ঘ পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে কথা বলা উচিত। সেই আলোচনায় এখন ঢুকতে চাই না। প্রথম কথা হচ্ছেÑবাম শক্তিশালী রাজনৈতিক ধারা এখনো তৈরি না হওয়াটা একটা সমস্যা। এ ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টি বা বাম রাজনৈতিক দলগুলোর আরও ভূমিকা পালন করা দরকার, মানুষের কাছে গিয়ে লেগে পরে থেকে। সিপিবি সেই কাজটি করছে। খেয়াল করবেন, নব্বইয়ের দশকে সিপিবিকে বিভক্ত করার চেষ্টা হলো। বিভিন্ন সময়ে বামপন্থীদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। লোভ ও ভয় দেখিয়ে তাদের রাজপথ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শাসকেরা চায় না বাংলাদেশে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটুক। এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে আমাদের যে পরিমাণ লড়াই করা দরকার, একসময় অনেকেই ছিলেন, যারা দ্বিদলীয় ধারার বাইরে বিকল্প গড়ে তুলবে বলে আওয়ামী ধারায় যুক্ত হয়ে গেলেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন বিকল্প ধারা তৈরি করবেন বলে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হলো। এতে মানুষের মধ্যে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। ফলে বামপন্থীদের অনেকেই তাদের কাজের মধ্যদিয়ে এমনভাবে কনফিউশন তৈরি করেছেন যে, বামদের নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি দীর্ঘদিন ধরে তার নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে থাকার কারণে অল্প করে হলেও মানুষের মধ্যে রেখাপাত করতে পেরেছে। এই রেখাপাত আরও কতো বড় করে নিয়ে যাওয়া যায় সেই সংগ্রাম আমরা করছি। আমি মনে করি, খুব বেশিদিন লাগবে না যে বুর্জোয়া রাজনীতি, শাসকদের দেউলিয়াত্ব মানুষের কাছে প্রকাশিত। মানুষ এখন বোঝেÑএখন দুঃশাসন অবসান হলে আরেক দুঃশাসনে কোনো সমাধান নেই। দরকার দক্ষ ব্যবস্থাপক। আমরা সেটা নিশ্চিত করার সংগ্রাম করছি। নিশ্চয়ই আত্মসমালোচনা করেই বামপন্থী শক্তির উত্থান আমরা ঘটাবোই। যেটা হবে মানুষের কাছে তার আলোর দিশা। 

[৬] আওয়ামী লীগের সমমনা বামপন্থী অথবা বামপন্থীদের সমমনা আওয়ামী লীগÑএরকম একটা বাস্তবতা দেশে আছে। মতের আকাশ-পাতাল ব্যবধান নেই। কোথাও না কোথাও মিল আছে। এটা নিশ্চয়ই আপনারাও স্বীকার করবেন। আওয়ামী লীগের একটা অভিযোগ-বাম রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগ বা সরকারের সমালোচনা করে, এটা ঠিক আছে। কিন্তু ভালো কাজে প্রয়োজনে তাদের সমর্থন পাওয়া যায় না। যে কারণে তাদের কখনো কখনো আপোস করতে হয়। কখনো কখনো ঝুঁকি নিয়ে ‘একতরফা’ নির্বাচন করার বিকল্পও থাকে না তাদের সামনে। বিএনপির ওপর ভরসা করতে পারে না, ফলে আওয়ামী লীগ ঝুঁকিও নিতে চায় না। এ ব্যাপারটা সিপিবি কীভাবে দেখে?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: এ ধরনের কথা কেউ বলে থাকলে তিনি তার রাজনীতিতে ঠিক কথা বলেছেন। তবে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য তিনি ঠিক কথা বলেননি। কারণ আওয়ামী লীগ যে আওয়ামী লীগের কথা বলছে, সেই সময় বামপন্থীদের সঙ্গে নৈকট্য ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো এখন সেই জায়গায় নেই। আওয়ামী লীগের একসময় ঝোঁক ছিলো বামপন্থার দিকে। সেই সময় বামপন্থীদের সঙ্গে তার কতোগুলো বিষয়ে ঐক্যবদ্ধতা ছিলো। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত যারা আওয়ামী লীগ করছেন, এখনো ক্ষমতায় আছেনÑতাদের ঝোঁক একেবারে ডানপন্থার দিকে। বরং বিএনপির সঙ্গে তাদের অনেক মিল পাই। বামপন্থীদের মিলের কোনো সুযোগ নেই! যেমন ধরুনÑআমাদের লড়াই অসাম্প্রদায়িকতা। তারা তো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোস করছে। আমাদের লড়াই হচ্ছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, কিন্তু তারা গণতন্ত্রের জায়গা স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় আছে! আমাদের লড়াই বিদেশি সাম্রাজ্যবাদ শক্তির বিরুদ্ধে, তারা সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপোস করে। আমরা লুটপাটতন্ত্রের বিরুদ্ধে, কিন্তু আওয়ামী লীগ তো এখন লুটপাটতন্ত্রের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে দেশকে। তারা এখন এসব কথা বলে বামপন্থীদের ক্রেডিবিলিটি নিতে চান। কিন্তু রাজনীতিতে যেহেতু বামপন্থীদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য অনেক বেশি, ফলে তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং বামপন্থীদের আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সম্পর্কে যদি কোনো মোহ থেকে থাকে, সেই মোহ থেকে বের হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় পরিচালিত করতে হবে। গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলাÑ সেটা যদি আমরা করতে পারি তবেই দেশের মানুষ বামপন্থার দিকে আসবে। তখন প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের ধারায় পরিচালিত করতে পারবো। 

[৭] আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়া মানে বিএনপির ক্ষমতায় আসা। এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে বামপন্থীরা সেই বাস্তবতায় নেই যে দুই দলের বাইরে গিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে কি এখনকার চেয়ে ভালো থাকবে বাংলাদেশ?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: এক দুঃশাসন শেষে আরেক দুঃশাসন এলে মানুষের জন্য কখনো ভালো হবে না। কারণ বিএনপির আমল তো আমরা দেখেছি, জামায়াতকে নিয়ে তারা কী করেছিলো। দেশে স্বৈরতন্ত্র, দুঃশাসন কায়েম করেছিলো। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে- এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কার ওপর নির্ভর করবো? ক্ষমতায় কে যাবে তা নির্ধারণ করবে জনগণ। জনগণ যে রায় দেবে সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। মেনে নিয়ে যেকোনো স্বৈরাচারী সরকার, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখে গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। ফলে জুজুর ভয় দেখিয়ে, ওমুক ক্ষমতায় আসবে বলে আমি স্বৈরতন্ত্র পাকাপোক্ত করে রাখবো, ওমুক ক্ষমতায় আসবে বলে আমার অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে আমাকে ক্ষমতায় রাখো, এটার বিরুদ্ধে জনগণের অবস্থান নিতে হবে। এটা জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। জণগণের একবার না হয় দুইবারের অভিজ্ঞতায় বুঝবে, দুইবারে না হলে তিনবারে, তিনবারে না হলে আরও অভিজ্ঞতায় বুঝবে। জণগণের অভিজ্ঞতার ওপর ছেড়ে দিয়ে গণতন্ত্র ও দেশের মুক্তি প্রতিষ্ঠাতার সংগ্রামকে অগ্রসর করতে হবে। 

[৮] আপনার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঝুঁকছে। সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে আপোস করে। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বামপন্থী অনেক দল তো বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। এটা কি বামদের ডানদিকে ঝোঁকার প্রবণতা?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তো অনেক আগেই বলেছেন, পাকা পাকা বামদের নাকি উনি নিয়ে গেছেন! কিছু বামদের তো তিনি আওয়ামী অরিয়েন্টশনে নিয়েছেন। কিছু বাম বিএনপির সঙ্গে যাচ্ছে। এটা আমি আগেই বলেছি। বামদের সম্পর্কে এরকম অনেক প্রশ্ন সামনে আসে। যেটা যথাযথ বলে আমরা মনে করি না। কারণ বাম নামধারী অনেক সংগঠন বাংলাদেশে আছে। দেখতে হবে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য কী। তারা নিজেদের আখের গোছানোর কাজ করছেন, নাকি জনগণের জন্য কাজ করছেন। বামদের কেউ যদি আওয়ামী বলয়, বিএনপি বলয়ে যায়Ñজনগণের উচিত তাদের রিজেক্ট করা। আর নীতিনিষ্ঠ বামদের পক্ষে আসা উচিত জনগণকে। কেবল সমালোচনা করলে হবে না, যারা নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, সেই শক্তিকে মদদ দিয়ে তাকে বড় শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। তারা যদি বড় রাজনৈতিক শক্তি হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে। না হলে দেশের মানুষকে আরও ভুগতে হবে বলে আমার ধারণা। 

[৯] আওয়ামী লীগ বা সরকার আর কোন কাজটি করতে পারতো সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য। কোন জায়গায় তারা ভুল করলেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: বঙ্গবন্ধু বলতেন, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, জনগণের ক্ষমতা চাই। কিন্তু এখন যদি কেউ ঘোষণা দেন, যেকোনোভাবেই হোক, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই, তাহলে আপনার ভূমিকা একরকম হবে। জনগণের পক্ষে ভূমিকা দেওয়ার কথা বললে আরেক রকম ভূমিকা হবে। আমি তো দেখতে পাচ্ছি আওয়ামী লীগ যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ফলে তারা একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে চায় না। জনগণ যদি তাদের আবারও ক্ষমতায় দেখতে  চায় ক্ষমতায় থাকবে, এ নিয়ে তো আমি প্রশ্ন করতে পারবো না। কিন্তু সরকারকে তো জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভোটে দাঁড়ানো, ভোট দেওয়া ও সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করাÑএটাই তাদের সামনে বিকল্প ছিলো। দরকার ছিলো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকার গঠন করা। রাজাকার শক্তি বাদ দিয়ে আন্দোলনকারী শক্তির সঙ্গে আলোচনা করে যদি এগোতো, সিদ্ধান্ত নিতো তাহলে এই সময়ে একটা গণতান্ত্রিক দায়িত্ব তারা পালন করতে পারতো। কিন্তু সেটা তারা করেননি। 

[১০] আমেরিকা, পশ্চিমা শক্তি কিংবা ভারত-রাশিয়ার নির্বাচনকেন্দ্রিক যে তৎপরতা, এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি কিংবা রাষ্ট্রের ওপর হস্তক্ষেপ বলবেন কি আপনি?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: শুধু রাষ্ট্র নয়, এটা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ। একটা স্বাধীন দেশে এটা কাম্য নয়। কিন্তু এই যে বললাম শাসকগোষ্ঠীর কথা। ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে রাজনৈতিক দলের কেউ বলেন, আধিপত্য শক্তি নাকি কারও জন্য ভগবান, অবতার! আবার কেউ বলেন, তলে তলে মীমাংসা হয়ে গেছে। ওরা আমাদের পক্ষে। তারাই ক্ষমতায় থাকা বা আসার জন্য এসব অপশক্তিকে লালন-পালন করেন। এটা আমাদের রাজনীতির অন্যতম বড় সংকটের দিক। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়