ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ডিএসটি) স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মোহালির ইনস্টিটিউট অব ন্যানো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (আইএনএসটি) নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, একবার ব্যবহারযোগ্য বা পিইটি বোতল থেকে পাওয়া ন্যানো-প্লাস্টিকগুলো মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক ব্যবস্থাগুলোকে সরাসরি ব্যাহত করতে পারে।
ন্যানো প্লাস্টিক কী:
ন্যানো প্লাস্টিক হচ্ছে ন্যানোমিটার-আকারের (১-১০০০ ন্যানোমিটার) কৃত্রিম পলিমার কণা, যা সরাসরি পরিবেশে নির্গত হয় বা বড় ধরনের প্লাস্টিক ভেঙে তৈরি হয়। এসব কণাগুলো প্যাকেজিং, পোশাক, খেলনা বা প্রসাধনী সামগ্রীর মতো দৈনন্দিন পণ্যের ভাঙন থেকেও তৈরি হতে পারে। আর পরিবেশের বিভিন্ন অংশে এসবের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যেমন- নদী, সমুদ্র এমনকি খাবার ও পানিতেও থাকে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য ও পানি থেকে পাওয়া ন্যানো-প্লাস্টিক বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের বিষয় এবং শরীরে ক্রমবর্ধমানভাবে এর উপস্থিতি শনাক্ত হচ্ছে। যদিও এর সঠিক প্রভাব এখনো খুব একটা বোঝা যায়নি। আবার অনেক গবেষণায় প্লাস্টিক কীভাবে পরিবেশ দূষণ করে বা পোষক টিস্যুর ক্ষতি করে থাকে, এর ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এরপরও শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকারী অন্ত্রের জীবাণুর ওপর তাদের সরাসরি প্রভাব সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায়নি।
এদিকে আইএনএসটির কেমিক্যাল বায়োলজি ইউনিটের প্রশান্ত শর্মা ও সাক্ষী দাগরিয়ার নেতৃত্বে দলটি শরীরের স্বাস্থ্যের ওপর এর গভীর প্রভাবের প্রথম স্পষ্ট প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। গবেষকরা দেখেছেন, দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি, উপনিবেশ স্থাপন ও প্রতিরক্ষামূলক কার্যকারিতা হ্রাস পায়। একইসঙ্গে চাপের প্রতিক্রিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
ন্যানোস্কেল অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকরা বলেছেন, একসঙ্গে অনুসন্ধানগুলো ব্যাখ্যা করে যে- প্রতিদিনের প্লাস্টিক থেকে পাওয়া ন্যানো-প্লাস্টিকগুলো জৈবিকভাবে সক্রিয় কণা যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য, রক্তের স্থিতিশীলতা এবং কোষের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ ফেলতে পারে।
দলটি পরীক্ষাগারে পিইটি বোতল থেকে ন্যানো-প্লাস্টিক পুনরায় তৈরি করেছে এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক মডেলে সেসব পরীক্ষা করেছে। ন্যানো-প্লাস্টিক কীভাবে মাইক্রোবায়োমকে প্রভাবিত করে সেটি দেখার জন্য একটি উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া, ল্যাকটোব্যাসিলাস র্যামনোসাস ব্যবহার করা হয়েছিল।
এতে দেখা গেছে, অধিক মাত্রার ঘনত্বে ন্যানো-প্লাস্টিকগুলো লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লি ব্যাহত করে এবং কোষগুলোর অকাল ধ্বংস করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়াও গবেষক দলটি আরও দেখেছে, দীর্ঘক্ষণ ধরে ব্যবহারের কারণে ডিএনএ ক্ষতি, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, অ্যাপোপটোসিস ও প্রদাহজনক সংকেতের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি শক্তি ও পুষ্টির বিপাকের পরিবর্তন ঘটে থাকে।
গবেষকরা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্পর্শে থাকার কারণে ন্যানো পার্টিকেলগুলো মানুষের এপিথেলিয়াল কোষগুলোতে ডিএনএ ক্ষতি, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এসব মানবদেহের স্বাস্থ্যের এমন ঝুঁকি তৈরি করে, যা আগে জানা ছিল না।
সূত্র: চ্যানেল ২৪