উচ্চ কোলেস্টেরল প্রায়শই নিঃশব্দ হুমকি হিসেবে কাজ করে। প্রাথমিক কোনো লক্ষণ না দেখালেও এটি ধীরে ধীরে হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে নিয়ে যায়। তবে ভালো খবর হলো, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সবসময় ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হয় না। ছোট ছোট, ধারাবাহিক পরিবর্তন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ২৪ বছরের অভিজ্ঞ ফ্যামিলি মেডিসিন ফিজিশিয়ান সহকারী ডা. ম্যাডিসন ব্রাউন প্রমাণিত ও সহজ এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলি সুপারিশ করেছেন।
সলুবল ফাইবার বেশি খাওয়া
সলুবল ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওটস, মসুর ডাল, চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্স সিডের মতো খাবারে থাকা সলুবল ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় কোলেস্টেরলকে যুক্ত করে শরীরের বাইরে বের করতে সাহায্য করে। আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র ৫–১০ গ্রাম সলুবল ফাইবার LDL বা “খারাপ” কোলেস্টেরল প্রায় ৫% কমাতে পারে। ফাইবার অন্ত্রে জেল তৈরি করে, যা কোলেস্টেরলকে রক্তে প্রবেশের আগে আটকে দেয়। ওটমিল বা স্মুদি-তে ফ্ল্যাক্স সিড যোগ করা একটি সহজ এবং সুস্বাদু উপায়।
প্ল্যান্ট-ভিত্তিক খাবার খাওয়া
ফল, শাকসবজি, বাদাম ও সিডে থাকা প্ল্যান্ট স্টেরল ও স্ট্যানল কোলেস্টেরলের শোষণ কমাতে সাহায্য করে। ন্যাশনাল কোলেস্টেরল এডুকেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক প্রায় ২ গ্রাম প্ল্যান্ট স্টেরল গ্রহণ করলে LDL কোলেস্টেরল ১০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এছাড়াও এগুলোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রক্তনালীকে সুরক্ষা দেয় এবং অতিরিক্ত কোলেস্টেরল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করুন
প্রসেসড স্ন্যাকস, ভাজা খাবার বা কিছু মার্জারিনে থাকা ট্রান্স ফ্যাট LDL বাড়ায় এবং HDL বা “ভাল” কোলেস্টেরল কমায়। এর পরিবর্তে ওলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, আখরোট এবং ফ্যাটি ফিশ যেমন স্যামন বা সারডিন খাওয়া উচিত। এই খাবারের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদয় সুস্থ রাখে, ট্রাইগ্লিসারাইড কমায় এবং HDL বাড়াতে সাহায্য করে।
নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম করুন
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য জিমে কঠোর ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা HDL বাড়াতে এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত করতে সাহায্য করে। শারীরিক কার্যক্রম LDL কে লিভারে স্থানান্তর করে, যেখানে এটি প্রক্রিয়াজাত হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
চিনি ও পরিশোধিত কার্ব কমান
উচ্চ চিনি ও পরিশোধিত কার্ব ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়, যা হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ক্যালোরির ২৫% এর বেশি চিনি গ্রহণ করে, তাদের হৃদয়জনিত ঝুঁকি বেশি থাকে। চিনি যুক্ত পানীয়, ক্যান্ডি, সাদা রুটি ও পেস্ট্রি কমানো ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ডা. ব্রাউন বলেন, কোলেস্টেরল কমানো রাতারাতি সম্ভব নয়। এটি ধারাবাহিক, টেকসই পরিবর্তনের ফলাফল, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদয়কে সুস্থ রাখে এবং জীবনমান বাড়ায়।
সূত্র: জনকণ্ঠ