শিরোনাম
◈ দেশে এলো তারেক রহমানের ‘বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন’ ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার গাড়ি! ◈ এবার নিজের নামে ভুয়া মাহফিলের প্রচারণায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী ◈ গুম মামলার শুনানিতে তাজুল–পান্না বাগবিতণ্ডা, ট্রাইব্যুনালের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ◈ ইন্ডিগোর কর্মী সংকটে তিন দিনে ৩০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল, দুর্ভোগে হাজারো যাত্রী ◈ প্রতিযোগীদের আগ্রাসী বাজার দখল, বাংলাদেশের রফতানিতে চাপ বাড়ছে ◈ সিইসির সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির সাফ বার্তা: সময়মতো নির্বাচন চাই ◈ ভোক্তা অধিদপ্তরে কী কী ক্ষেত্রে অভিযোগ করতে পারবেন, কীভাবে করবেন ◈ বন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় দুটি যুগান্তকারী অধ্যাদেশ পাস ◈ হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে ‘গুলি কর’ বলতে থাকে তিন ব্যক্তি: রাজস্ব কর্মকর্তার ভাষ্য ◈ ডিএমপি’র ৫০ থানার ওসি পদে রদবদল

প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:০১ রাত
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:০২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গুম মামলার শুনানিতে তাজুল–পান্না বাগবিতণ্ডা, ট্রাইব্যুনালের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ

আওয়ামী লীগের আমলে সংঘটিত গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর গতকাল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়েছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তবে এদিন পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী সশরীরে হাজির না হওয়ায় তলব করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সূত্র: মানবজমিন

ট্রাইব্যুনাল বলেন, রেজিস্ট্রার এই ট্রায়ালের অংশ নয়, পান্নাকে এখানে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে তিনি কেন এই মামলা থেকে সরে যেতে চান। এ সময় বেঞ্চ অফিসারকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, পান্নাকে ফোন করে জানাতে যে ট্রাইব্যুনাল তাকে তলব করেছে। পরে বেঞ্চ অফিসার তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না- এমন কিছু জানালে ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে দিয়ে তাকে ডেকে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। পরে ১০ মিনিটের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন তিনি। 

শুনানির একপর্যায়ে তাজুল ইসলাম ডায়াসের সামনে গেলে পান্না বলেন, লাফিয়ে উঠার কি আছে। তখন তাজুল বলেন, ‘মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ’। এসময় ট্রাইব্যুনাল থামিয়ে দেন তাজুলকে। পরে তাজুল তার বক্তব্য ট্রাইব্যুনালে পেশ করেন। এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান তাকে বলেন, মিস্টার পান্না আপনি চাইলে যেতে পারেন। জবাবে তিনি না সূচক জবাব দিয়ে ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামি পক্ষের আইনজীবীদের জন্য রক্ষিত বেঞ্চে বসে তা পর্যবেক্ষণ করেন। বুধবার দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে গুমের মামলায় শুনানির সময় এসব ঘটনা ঘটে।

শুনানিতে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের নৃশংস বর্ণনা তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কীভাবে গুম করা হতো, কোথায় নিয়ে যাওয়া হতো। একটু পরই তাজুলকে থামিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর কথা জানতে চান ট্রাইব্যুনাল।

জবাবে তাজুল বলেন, একজন স্বপ্রণোদিত হয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হওয়ার আবেদন করেছেন। পরে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু তিনি চিঠি পাঠিয়ে এ মামলায় না লড়ার কথা জানিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, তিনি আগ্রহী না অনাগ্রহী তা ট্রাইব্যুনালে এসে জানাতে হবে। তাকে অফিসিয়ালি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি আজ আসেননি কেন? এ সময় চিঠি দেখতে চান ট্রাইব্যুনাল। পরে চিঠি দেখে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন আইন-টাইন জানে না কিছু। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জানি না। ওনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেছেন। তবে অন্যজনকে নিয়োগ দেয়ার প্রার্থনা করি আমরা। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘যেহেতু এক নম্বর আসামির (শেখ হাসিনা) আইনজীবী নেই। সেহেতু আমরা আগে তার বক্তব্য শুনবো। এখন আপনাকে শুনলেও পরে আবার তার উপস্থিতিতে শুনবো। এরপর আবারো শুনানি চালিয়ে যান তাজুল ইসলাম। 

এসময় ট্রাইব্যুনাল তাজুলকে থামিয়ে বেঞ্চ অফিসারকে বলেন, পান্না সাহেবকে ফোনে পাওয়া যায় কিনা দেখেন তো। ফোন করে এখনই আসতে বলেন। এ সময় বেঞ্চ অফিসারকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, পান্নাকে ফোন করে জানাতে, যে ট্রাইব্যুনাল তাকে তলব করেছে। পরে বেঞ্চ অফিসার তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না- এমন কিছু জানালে ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে দিয়ে তাকে ডেকে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। ফের শুরু হয় শুনানি। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় হুইলচেয়ারে করে এজলাসকক্ষে ঢোকেন জেড আই খান পান্না। তার সঙ্গে জুনিয়র আইনজীবীরাও ছিলেন। ঢুকতেই তার শারীরিক খোঁজখবর নেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। 

ট্রাইব্যুনাল: আপনি সুস্থ আছেন? 

পান্না: না, আমি ইতিমধ্যে ভিসা নিয়েছি। দেশের বাইরে যাবো চিকিৎসা করতে। 

ট্রাইব্যুনাল: আপনি শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। 

পান্না: না। 

ট্রাইব্যুনাল: এখানেই তো ছিলেন ওই দিন। 

পান্না: মৌখিক ভাবে নিয়োগ পেয়েছি। 

ট্রাইব্যুনাল: চিঠি পেয়েছেন?

পান্না: না। 

ট্রাইব্যুনাল: দ্যাট ইজ দ্য অর্ডার অব ট্রাইব্যুনাল।

পান্না: আমি ফিজিক্যালি আনফিট। চিঠি দেয়ায় আজ আসিনি।

ট্রাইব্যুনাল: আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি হয় না। তবু হয়েছে। আবার হবে। আপনি না পারলে আদালতে প্রতিনিধি পাঠাতেন। আপনার মতো সিনিয়র আইনজীবী দু’-তিনজন আছেন। আসামিও আসবে না। আইনজীবী নিয়োগ দিলে সমালোচনা হবে। আমরা কী করবো। একইসঙ্গে ভিডিও বার্তায় দেয়া পান্নার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এটা কি আপনি বলতে পারেন। আপনি বলেছেন যে, আপনার ক্লায়েন্ট (শেখ হাসিনা) এই ট্রাইব্যুনাল মানেন না। এজন্য আপনিও মানেন না। আপনি নিজেই আইনজীবী হওয়ার আবেদন করেছেন। জবাবে পান্না বলেন, আমি আনকন্ডিশনালি অ্যাপোলজি চাই।

একপর্যায়ে ফের তার কাছে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে লড়ার কথা জানতে চাওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাহলে কি আপনি করবেন না। না সূচক জবাব দেন পান্না। তখন তার কাছে সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশা করে অন্য কাকে নিয়োগ দেয়া যায়, সেজন্য মতামত চাওয়া হয়। তখনো না জবাব দেন শেখ হাসিনার হয়ে লড়তে চাওয়া এই আইনজীবী। পরে আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ সময় আমির হোসেনের আপত্তি আছে কিনা জানতে চান চেয়ারম্যান। ট্রাইব্যুনাল ফিট মনে করলে নিয়োগে নিজের কোনো আপত্তি নেই বলে জানান দেন আমির হোসেন। তিনি জুলাই গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার আরেক মামলায়ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন। 

গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে নতুন আইনজীবী নিয়োগের পরই পান্নার ইস্যু ফের সামনে আনেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভিডিও বার্তায় পান্না যেসব কথা বলেছেন, তা আদালত অবমাননার শামিল। তিনি যদি এই নিয়োগ গ্রহণ করেন, তবে আদালতের ব্যতিরেকে তিনি এটি ডিনাইল করতে পারেন না। 

তখন পান্নার উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা আপনাকে আইডল ভাবি। আপনার কাছ থেকে অনেক শিখেছি। অথচ আপনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনা এই ট্রাইব্যুনাল মানেন না। এজন্য আপনিও মানবেন না। তাহলে কি ধরে নেবো আপনার সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হয়। এই আদালত থেকে কি আপনার ক্লায়েন্ট বড়।

এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, আপনি বিচার-বিচারক নিয়ে সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আইন মানেন না- এ কথা বলতে পারেন না। এসময় ট্রাইব্যুনাল সংবিধানের ৪৭ ধারার বিষয়বস্তু বর্ণনা করেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি যে আইন মানেন, সেটা কোন দেশের। কারণ এই আইন তো সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। তখন পান্না বলেন, আমি ’৭২-এর সংবিধানের কথা বলছি। ট্রাইব্যুনাল বলেন, সংবিধান একটাই। এই সংবিধান ’৯০ বা ’২৪-এর নয়, ’৭২-এর সংবিধান। রাজনৈতিক নেতারা যা ইচ্ছা তা-ই বলতে পারেন। এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু বিচারক কিংবা আইনজীবীদের আইনানুযায়ী কথা বলতে হবে। আমরা আপনার কমেন্টগুলো ইগনোর করেছি। ভবিষ্যতে আর এ ধরনের মন্তব্য করবেন না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়