পণ্য ক্রয়, বিভিন্ন সেবা গ্রহণ, শপিংমল ও অনলাইন কেনাকাটা এমনকি রেস্তোরায় খেতে গিয়েও ভোক্তা অনেক সময় প্রতারিত হন, সমস্যায় পড়েন। অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না সেক্ষেত্রে কোথায় অভিযোগ করবেন, কীভাবে করবেন।
এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ পারভীন মৌ।
কী কী কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দাখিল করা যাবে
আইনজীবী মমতাজ পারভীন মৌ বলেন, যেকোনো পণ্য বা পরিষেবা কেনার ক্ষেত্রে প্রতারিত হলেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যায়। যেমন:
১. ওজন, পরিমাপ ও পরিমাণে কম দেওয়া।
২. পণ্যের মোড়কে মূল্য ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকা বা ভুল তথ্য দেওয়া।
৩. ভুল বা নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করা।
৪. সেবার ক্ষেত্রে মানসম্মত না হওয়া এবং বিক্রির সময় বাধ্যতামূলকভাবে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা ইত্যাদি।
এছাড়াও অন্যান্য যেসব কারণে অভিযোগ করতে পারবেন সেগুলো হলো—পণ্যের মান খারাপ বা ত্রুটিপূর্ণ হলে, প্রতারণামূলকভাবে ভুল বা নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করা হলে, পণ্যের গায়ে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য নেওয়া হলে, মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারিত করা হলে, সেবার ক্ষেত্রে সেবা মানসম্মত না হলে, সেবার জন্য অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হলে বা পেমেন্ট নেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা না দিলে, কোনো রেস্তোরায় মূল্য তালিকার বাইরে অতিরিক্ত বিল নেওয়া হলে, ভোক্তার পছন্দের অধিকার লঙ্ঘন করা হলে অভিযোগ দাখিল করা যাবে।
এমনকি অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রতারিত হলে বা নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে, অ্যাডভান্স টাকা ফেরত না দিলেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যাবে।
অর্থাৎ ভোক্তা হিসেবে কোনো ব্যক্তির কোনো একটা অধিকার লঙ্ঘিত হলে ওই সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারবেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকেই অভিযোগ করতে হবে। অন্য কেউ করলে হবে না।
ধারের টাকা ফেরত পাওয়ার উপায়
আইনজীবী মমতাজ পারভীন মৌ বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে হলে অভিযোগটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৭৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, 'যেকোনো ব্যক্তি, যিনি সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীনে ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজ সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এই উদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের কাছে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।'
এছাড়া ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইট বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমেও অভিযোগ জানানো যায়।
তবে, অভিযোগের সঙ্গে অবশ্যই পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে। অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পেজ বা ওয়েবসাইটের লিংক, বিক্রেতার সঙ্গে করা কেনাকাটা সংক্রান্ত কনভারসেশনের স্ক্রিনশট বা কেনাকাটা সংক্রান্ত অন্য যেকোনো প্রমাণপত্র, টাকা লেনদেনের প্রমাণ যুক্ত করতে পারলে ভালো হয়।
এছাড়া অভিযোগকারীকে তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (http://dncrp.portal.gov.bd) গিয়েও 'জাতীয় ভোক্তা-অভিযোগ কেন্দ্র' বক্স থেকে নির্ধারিত 'অভিযোগ ফরম' ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে। অভিযোগ ফরমটি পূরণ করে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে (টিসিবি ভবনের অষ্টম তলায়) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে জমা দিয়ে এলেই হবে।
এই কার্যালয়ে মহাপরিচালকসহ সবগুলো বিভাগীয় শহরের জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা যায়।
এছাড়া ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে ফ্যাক্স, ই-মেইল আইডি সংগ্রহ করে অনলাইনেও অভিযোগ জানাতে পারেন।
ই-মেইলে অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযোগ ফরমটি ডাউনলোড করে সেটা পূরণের পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে অধিদপ্তরের ইমেইল ঠিকানায় ই-মেইল করে পাঠালেও অভিযোগ জমা হয়ে যাবে। ই-মেইলে বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে ফরোয়ার্ড করে দেওয়া হয়। কেউ চাইলে জেলা অফিসে গিয়ে বা সেই জেলার ই-মেইলেও অভিযোগ জানাতে পারেন।
অনলাইন প্রতারণা, অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা, অনলাইন শপিং প্রতারণা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, প্রতারণায় আইনি প্রতিকার, অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ, ভোক্তা অধিকার আইন বাংলাদেশ, অনলাইনে প্রতারণার শিকার, ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা, অনলাইন শপিং প্রতারণা সমাধান, অনলাইন
কত দিনের মধ্যে অভিযোগ জানাতে হবে
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীনে অভিযোগ করতে হলে ঘটনা ঘটার বা কারণ উদ্ভব হওয়ার, পণ্য হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই অভিযোগ করতে হবে। ৩০ দিন পর অভিযোগ করলে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯-এর ৬০ ধারায় বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি কারণ উদ্ভব হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আইনের অধীন ভোক্তা অধিকার-বিরোধী কাজ সম্পর্কে মহাপরিচালক কিংবা অধিদপ্তরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ না করলে ওই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।'
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঠিকানা
কারওয়ান বাজার (টিসিবি ভবন-৮ম তলা), ঢাকা-১২১৫
যোগাযোগ:
হটলাইন (ভোক্তা বাতায়ন): ১৬১২১
ফোন: ৮৮-০২-৫৫০১৩২০ এবং ০২-৫৫০১৩২১৮
মোবাইল: ০১৭৭৭-৭৫৩৬৬৮
ফ্যাক্স: ৮৮-০২-৫৫০১৩২০৭
ইমেইল: info@dncrp.gov.bd এবং nccc@dncrp.gov.bd উৎস: ডেইলি স্টার।