পায়ুপথের রোগগুলোর মধ্যে পাইলস ও ফিস্টুলা অন্যতম। এই রোগে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা না নিতে পারলে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেক সময় ক্যান্সারও হতে পারে।
সাধারণত বৃহদান্ত্রের শেষাংশে রেকটামের ভেতরে ও বাইরে থাকা কুশনের মতো একটি রক্তশিরার জালিকা থাকে। যা প্রয়োজন সাপেক্ষে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এর নাম হেমোরয়েডস বা পাইলস।
যখন পায়ুপথে এসব শিরার সংক্রমণ এবং প্রদাহ হয়, চাপ পড়ে তখন হেমোরয়েডস বা পাইলসে প্রদাহ হয়। যাকে সাধারণ ভাষায় অর্শ্বরোগ বলা হয়।
পাইলসের কারণ ও লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বৃহদান্ত ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক।
যেসব কারণে পাইলস হয়
পাইলসের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিণ্যে ভোগা, পুরনো ডায়রিয়া, মলত্যাগে দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারি মালপত্র বহন করা, স্থুলতা, কায়িক শ্রম কম করা।
গর্ভকালীন সময়ে, পায়ুপথে যৌনক্রিয়া, যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস ইত্যাদি কারণে পাইলসের আশংকা বেড়ে যায়।
সর্বোপরি পোর্টাল ভেনাস সিস্টেমে কোনো ভাল্ব না থাকায় উপরিউক্ত যে কোনো কারণে পায়ু অঞ্চলে শিরাগুলোতে চাপ ফলে পাইলস সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
পাইলসের যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচ্ছে- পায়ুপথের অন্ত্র বা ভেতরের অর্শরোগে সাধারণত তেমন কোনো ব্যথা বেদনা, অস্বস্তি থাকে না, অন্যদিকে পায়ুপথের বহিঃঅর্শরোগে পায়ুপথ চুলকায়, বসলে ব্যথা করে, পায়খানার সঙ্গে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায় বা শৌচ করা টিস্যুতে তাজা রক্ত লেগে থাকে, মলত্যাগে ব্যথা লাগা, পায়ুর চারপাশে এক বা একের অধিক থোকা থোকা ফোলা থাকে।
পাইলস সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
* পায়ুপথের বহিঃঅর্শরোগ
* পায়ুপথের অন্ত বা ভেতরের অর্শরোগ
* আবার কখনও দুই অবস্থা একসঙ্গেও থাকতে পারে।
পায়ুপথের ভেতরের অর্শরোগ বা পাইলস ফুলে মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসাকে ৪টি পর্যায় ভাগ করা হয়।
* প্রথম পর্যায় (পাইলস ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে না বা প্রলেপস হয় না)
* দ্বিতীয় পর্যায় (পায়খানার পর পাইলস ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে এবং তারপর আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়)
* তৃতীয় পর্যায় (পাইলস ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে এবং নিজে ঠিক করতে হয়)
* চতুর্থ পর্যায় (পাইলস ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে বা প্রলেপস হয়ে এবং তা আর নিজে ঠিক করা যায় না)
চিকিৎসা
পাইলস শনাক্ত করার জন্য প্রক্টোস্কোপি ও সিগময়ডস্কোপি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। অধ্যাপক একেএম ফজলুল হক বলেন, মলদ্বারের ভেতর এন্ডোস্কোপি যন্ত্র দিয়ে এ পরীক্ষা ব্যতীত কখনই সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়।
প্রাথমিকভাবে রোগীর মলদ্বার ও আশপাশের অংশ ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়, বাহ্যিক পাইলস বা ফুলে যাওয়া শিরা দেখা যায় কিনা সেটিও পরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পাইলস শনাক্ত, ধরন এবং রোগের পরিস্থিতির জানার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
পাইলসের চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে রোগের ধরণ ও স্তরের উপর। ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ, ফোলা কমাতে ও কোষ্ঠাকাঠিন্য দূর করতে সেই অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয় পাইলস রোগীকে।
একইসঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন ও খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে। পায়ুপথের যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।