তোতলামি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী প্রায় সাত কোটি মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন ও দার্শনিক অ্যারিস্টটলের মতো ব্যক্তিও তোতলামির শিকার ছিলেন।
তোতলামির কারণ
তোতলামির সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে কিছু বিষয়কে এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
• বংশগত কারণ: গবেষকরা বলছেন, মা-বাবা, ভাইবোন বা নিকটাত্মীয়দের কারও এ সমস্যা থাকলে সন্তানের হওয়ার আশঙ্কা তিন গুণ থাকে। কিছু গবেষণায় জিনের মিউটেশন বা রূপান্তরকে দায়ী করা হয়।
• মস্তিষ্কের কার্যকলাপ: সম্প্রতি বলা হচ্ছে, মস্তিষ্কের যে অংশ কথা বলার জন্য কাজ করে, তোতলা ব্যক্তিদের সেই অংশ কম কাজ করে।
• মানসিক অবস্থা: মানসিক চাপ ও ভীতি তোতলামির জন্য সরাসরি দায়ী না হলেও এ সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়।
শিশুর তোতলামি ও এর প্রভাব
তোতলামির সমস্যা সাধারণত শিশু বয়সে বেশি দেখা দেয়। তবে প্রায় ৮০ শতাংশ শিশু ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। বাকি ২০ শতাংশ আজীবন তোতলাতে পারে।
তোতলামি হলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় যোগাযোগ স্থাপন করা। কথা বলতে বেশি সময় লাগায় মনের ভাব প্রকাশ করা কঠিন হয়। এতে অনেকে বিরক্ত হন। ফলে তোতলানো ব্যক্তি দমে যান এবং বিষণ্নতায় ভোগেন। কর্মক্ষেত্রে সুবিধা করতে না পারার কারণেও অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন।
পারিবারিক ও সামাজিক ভূমিকা
মা-বাবা অনেক সময় তোতলা শিশুকে নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন বা সমাজের অন্যদের থেকে দূরে রাখেন। এতে সমস্যা আরও বাড়ে। এটি করা ঠিক নয়। শিশুকে অন্যদের সঙ্গে মিশতে দিন এবং কেউ উত্ত্যক্ত করলে ব্যবস্থা নিন। শিশুকে সাহস দিন। সে আত্মবিশ্বাসী হলে তোতলামির সমস্যা কমতে পারে।
চিকিৎসা ও কুসংস্কার
তোতলামি দূর করার কোনো চূড়ান্ত চিকিৎসা নেই। তবে স্পিচ থেরাপির মতো কিছু ব্যায়াম বেশ ভালো কাজ করে। এর মাধ্যমে তোতলামি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এর জন্য ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে।
অনেকে তোতলামিকে পাপের ফসল মনে করেন, যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। শিশুর চিকিৎসার জন্য মুখের মধ্যে পয়সা রাখার মতো কুসংস্কারও প্রচলিত আছে, যার কার্যকারিতা কোনো গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি। উল্টো এতে পয়সা গিলে ফেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারাও যেতে পারে।
সূত্র: সমকাল