শিরোনাম
◈ আনিসুল, রুহুল আমিন ও চুন্নুকে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি ◈ তরুণ ভোটারদের পছন্দের শীর্ষে বিএনপি: জরিপ ◈ খালেদা জিয়ার কন্ঠ নকল করে ২৬ কোটি টাকা হাতিয়েছে একটি চক্র (ভিডিও) ◈ জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলো কি নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চাইছে ◈ নেপালের বিরু‌দ্ধে দু‌টি আন্তর্জা‌তিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ◈ চিঠিতে মূলত আমার যুক্তিগুলো তুলে ধরি, এটাকে অপব্যাখ্যা করা হয়েছে : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ◈ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমলেই ব্যাংক খাতে তৈরি হওয়া ঝুঁকি কমবে: গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ◈ এনসিপির নেতাকর্মীর জন্য আমরা সবাই জীবন দিতে প্রস্তুত: হাসনাত আব্দুল্লাহ ◈ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম: দুর্ভোগ কমানোর বদলে সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যস্ত ঠাকুরগাঁও প্রশাসন

প্রকাশিত : ০৭ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৫৯ রাত
আপডেট : ০৮ জুলাই, ২০২৫, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের নীরব ঘাতক ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি: ৫৭% এর বেশি পুরুষ ঝুঁকিতে

আধুনিক জীবনযাত্রার চাপে কর্মজীবী পুরুষদের স্বাস্থ্য ক্রমশ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫৭% পুরুষ কর্মী এই অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টির অভাবে ভুগছেন, যা তাদের অজান্তেই কর্মক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

কেন এই উদ্বেগ?

ভিটামিন বি১২, যা কোবালামিন (Cobalamin) নামেও পরিচিত, শরীরকে সচল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি লোহিত রক্তকণিকা তৈরি, ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এর ঘাটতি হলে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারে না, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে ও পেশাগত দক্ষতায়।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. মার্ক হুইলারের মতো গবেষকরা বলছেন, "ভিটামিন বি১২ আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষীয় প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। এটিকে 'এনার্জি ভিটামিন' বলা হলেও এটি সরাসরি শক্তি জোগায় না, বরং শরীর যে খাবার গ্রহণ করে তা থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। এর ঘাটতি হলে শরীরের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে অ্যানিমিয়া (রক্তস্বল্পতা), স্নায়বিক সমস্যা এমনকি হৃদরোগের মতো জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে।"

ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির প্রধান লক্ষণসমূহ

এর ঘাটতি প্রাথমিক পর্যায়ে সহজে বোঝা যায় না। তবে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি:

  • দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি ও অবসাদ: পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও সারাদিন ক্লান্ত থাকা এর প্রধান লক্ষণ।

  • মনোযোগের অভাব ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস: কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, ছোটখাটো বিষয় ভুলে যাওয়া বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা।

  • মাথা ঘোরা ও ভারসাম্যহীনতা: হঠাৎ করে মাথা ঘুরে ওঠা বা হাঁটতে গিয়ে ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হওয়া।

  • স্নায়বিক সমস্যা: হাত-পা ঝিনঝিন করা, অবশ হয়ে যাওয়া বা সুঁই ফোটানোর মতো অনুভূতি হওয়া।

  • হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক গতি: বুক ধড়ফড় করা বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।

  • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া: রক্তস্বল্পতার কারণে ত্বকের রঙ হলদে বা ফ্যাকাশে দেখাতে পারে।

  • ক্ষুধামন্দা ও ওজন হ্রাস: খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া এবং কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া।

  • মেজাজের পরিবর্তন: অকারণে খিটখিটে মেজাজ, বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া।

কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট কারণে পুরুষদের মধ্যে এই ঘাটতির ঝুঁকি বেশি:

১. ডায়েট: যারা নিরামিষাশী (vegetarian) বা ভেগান (vegan), তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারণ ভিটামিন বি১২ প্রধানত প্রাণিজ উৎসে পাওয়া যায়।
২. বয়স: বয়স ৪০ পেরিয়ে গেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন কমে যায়, যা খাবার থেকে বি১২ শোষণে বাধা দেয়।
৩. অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ: অ্যালকোহল বি১২ সহ অন্যান্য পুষ্টির শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৪. হজমের সমস্যা: যাদের ক্রোন'স ডিজিজ, সিলিয়াক ডিজিজ বা গ্যাস্ট্রাইটিসের মতো হজমজনিত রোগ রয়েছে।
৫. কিছু ঔষধ: ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহৃত মেটফরমিন বা অ্যাসিডিটির জন্য ব্যবহৃত কিছু ঔষধ দীর্ঘমেয়াদে সেবন করলে বি১২-এর ঘাটতি হতে পারে।

ঘাটতি পূরণে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

তবে আশার কথা হলো, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে এই ঘাটতি সহজেই পূরণ করা সম্ভব।

  • প্রাণিজ প্রোটিন আবশ্যক: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ (বিশেষ করে সামুদ্রিক), মাংস (বিশেষ করে কলিজা), ডিম এবং দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার (দই, পনির) রাখুন। এগুলো ভিটামিন বি১২-এর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস।

  • ফর্টিফায়েড খাবার বেছে নিন: বর্তমানে অনেক খাবারে কৃত্রিমভাবে বি১২ যোগ করা হয়। যেমন: ফর্টিফায়েড ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, সয়া মিল্ক, আমন্ড মিল্ক এবং কিছু ব্রেড। নিরামিষাশীদের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প।

  • ফেরমেন্টেড খাবার: দই, কিমচি, টেম্পে-এর মতো গাঁজানো খাবারে সামান্য পরিমাণে বি১২ থাকতে পারে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

  • অ্যালকোহল ও প্রসেসড ফুড বর্জন: সুস্থ থাকতে এবং শরীরে পুষ্টির সঠিক শোষণ নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত অ্যালকোহল, কোমল পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: আপনার যদি উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো থাকে বা আপনি ঝুঁকির তালিকায় পড়েন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বি১২-এর মাত্রা জেনে নিন।

  • সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ: যদি খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত বি১২ পাওয়া সম্ভব না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট, ইনজেকশন বা স্প্রে আকারে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ অনুচিত।

শেষ কথা:
ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি একটি নীরব ঘাতক, যা আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনকে স্থবির করে দিতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন, সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সুস্থ শরীরই আপনার সেরা কর্মক্ষমতার মূল চাবিকাঠি।

সূত্র:

  1. National Institutes of Health (NIH), Office of Dietary Supplements, USA.

  2. Harvard T.H. Chan School of Public Health - The Nutrition Source.

  3. World Health Organization (WHO) - Guideline on Vitamin B12.

  4. Johns Hopkins Medicine Health Library.

  5. The British Medical Journal (BMJ) - Research on Vitamin Deficiencies.

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়