শিরোনাম
◈ মুরাদনগরে নিখোঁজের একদিন পর বড় ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার, মাটিচাপা অবস্থায় মিলল ছোট ভাইয়ের ঘরে ◈ ইরান কেন আমেরিকার কাছে নতিস্বীকার করে না: তাস‌নিম নিউজ এজ‌ন্সির প্রতি‌বেদন ◈ যে কারণে জোরপূর্বক লাখ লাখ আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠাচ্ছে ইরান! ◈ সাঁথিয়ায় ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে ৩ জন নিহত, আহত অন্তত ১০ ◈ ক্রিকেটার জা‌ভেদ মিয়াঁদাদ আমার বিয়ে বরবাদ করে দিয়েছিলেন, প্রথম বিয়ে নিয়ে অ‌ভি‌নেতা আমির খান ◈ দে‌শের রাজনী‌তি‌তে এনসিপি কি 'মব' দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চায়? ◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’

প্রকাশিত : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ০৩:০০ রাত
আপডেট : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কিডনি রোগের নীরব লক্ষণ: কখন হবেন সতর্ক?

কিডনি আমাদের দেহের ‘সুপার ফিল্টার’ বা পরিশোধন কেন্দ্র। এই ছোট অঙ্গ দুটি প্রতিদিন প্রায় ১৮০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ (যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন) এবং অতিরিক্ত পানি অপসারণ করে। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করা এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) একটি নীরব ঘাতক। এর কারণ হলো, কিডনির কার্যক্ষমতা ৫০-৬০ শতাংশ নষ্ট হওয়ার আগে অনেক ক্ষেত্রেই কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। তবে কিছু সতর্কতামূলক বা গোপন লক্ষণ রয়েছে, যা আগে থেকে কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। সময়মতো এই লক্ষণগুলো চিনতে পারলে এবং চিকিৎসা শুরু করলে কিডনি বিকল হওয়ার মতো ভয়াবহ পরিণতি এড়ানো সম্ভব।

আসুন, কিডনি নষ্ট হওয়ার ৬টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ এবং এর পেছনের বৈজ্ঞানিক কারণগুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

১. প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন

লক্ষণ: ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতে (Nocturia); অথবা প্রস্রাবের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া (Oliguria)।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা: কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য ফিল্টার করে মূত্র তৈরি করা। যখন কিডনির ফিল্টারগুলো (নেফ্রন) ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, তখন প্রস্রাব ধরে রাখার বা ঘন করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিবার প্রস্রাবের বেগ আসে, বিশেষ করে রাতে ঘুমের সময়। রোগের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে কিডনির মূত্র তৈরির ক্ষমতাই লোপ পেতে থাকে, যার ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যায়। এটি একটি গুরুতর লক্ষণ।

২. পা, গোড়ালি, মুখ বা চোখের নিচে ফোলাভাব (Edema)

লক্ষণ: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের নিচে বা মুখ ফোলা থাকা, যা বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়। পায়ে বা গোড়ালিতে চাপ দিলে চামড়া ডেবে যাওয়া এবং সহজে আগের অবস্থায় ফিরে না আসা।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা: কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম (লবণ) ও পানি নিষ্কাশনে সাহায্য করে। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীর থেকে এই অতিরিক্ত সোডিয়াম ও পানি বের হতে পারে না। ফলে সোডিয়াম ও পানি শরীরের কোষকলায় জমতে শুরু করে, যাকে এডিমা (Edema) বা শোথ বলা হয়। সাধারণত মাধ্যাকর্ষণের কারণে এই পানি পায়ের পাতা ও গোড়ালিতে বেশি জমে।

৩. অস্বাভাবিক ক্লান্তি, দুর্বলতা ও মনোযোগের অভাব

লক্ষণ: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও শরীর অত্যন্ত দুর্বল লাগা, অল্প কাজেই হাঁপিয়ে ওঠা, কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা এবং সারাক্ষণ ঘুম ঘুম ভাব।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা: এর পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে:

  • রক্তে বর্জ্য জমা: কিডনি অকেজো হয়ে পড়লে রক্তে ইউরিয়া ও অন্যান্য টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থ জমতে থাকে। এই অবস্থাকে ইউরেমিয়া (Uremia) বলা হয়, যা শরীরকে দুর্বল করে দেয় এবং মস্তিষ্ক ও পেশির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

  • রক্তস্বল্পতা (Anemia): সুস্থ কিডনি ‘এরিথ্রোপোয়েটিন’ (Erythropoietin) নামক একটি হরমোন তৈরি করে, যা অস্থিমজ্জাকে (Bone Marrow) লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সংকেত পাঠায়। ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি পর্যাপ্ত পরিমাণে এই হরমোন তৈরি করতে পারে না। ফলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন কমে যায় এবং রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। লোহিত রক্তকণিকার অভাবে শরীরের কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে তীব্র ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়।

৪. প্রস্রাবে ফেনা বা রক্ত যাওয়া

লক্ষণ: প্রস্রাব করার পর টয়লেটে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া, যা সহজে মিলিয়ে যায় না; অথবা প্রস্রাবের রঙ গোলাপি, লাল বা কালচে হয়ে যাওয়া।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা:

  • ফেনা যুক্ত প্রস্রাব (Foamy Urine): এটি প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নামক এক প্রকার প্রোটিনের উপস্থিতির লক্ষণ (Proteinuria)। কিডনির সুস্থ ফিল্টারগুলো রক্তের প্রোটিনকে ছেঁকে শরীরে রেখে দেয়। কিন্তু ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রোটিন প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে আসে এবং ফেনা তৈরি করে।

  • রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব (Hematuria): কিডনির ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তকণিকাও প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে আসতে পারে। এর ফলে প্রস্রাবের রঙ লালচে বা কালচে দেখাতে পারে। এটি কিডনিতে পাথর, ইনফেকশন বা আরও গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে।

৫. ঘুমের সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট

লক্ষণ: রাতে ঘুমাতে না পারা (Insomnia), ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি (Sleep Apnea), অথবা সামান্য পরিশ্রমে বা বিশ্রামের সময়েও শ্বাসকষ্ট হওয়া।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা:

  • ঘুমের সমস্যা: রক্তে টক্সিন জমে যাওয়ায় এটি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দেয় এবং ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ রোগীদের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা।

  • শ্বাসকষ্ট: এর পেছনেও দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, কিডনি ফেইলিওরের কারণে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে তা ফুসফুসে জমা হতে পারে (Pulmonary Edema), যা শ্বাসপ্রশ্বাসকে কঠিন করে তোলে। দ্বিতীয়ত, উপরে উল্লিখিত রক্তস্বল্পতার কারণে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, ফলে শরীর অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে দ্রুত শ্বাস নিতে চেষ্টা করে এবং শ্বাসকষ্ট হয়।

৬. ত্বকে তীব্র চুলকানি ও শুষ্কতা

লক্ষণ: সারা শরীরে, বিশেষ করে পিঠে ও পায়ে তীব্র চুলকানি হওয়া, যা সাধারণ কোনো চর্মরোগের ওষুধে সারে না এবং ত্বক খসখসে ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা: কিডনি শুধু বর্জ্যই নয়, রক্তে খনিজ পদার্থের (Minerals) ভারসাম্যও রক্ষা করে। কিডনি রোগ চরম আকার ধারণ করলে রক্তে ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। রক্তে ফসফরাসের মাত্রা বেড়ে গেলে তা ত্বকের নিচে জমা হয়ে তীব্র চুলকানির (Uremic Pruritus) সৃষ্টি করে। এছাড়া শরীরের খনিজ ও পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা ত্বককে শুষ্ক ও প্রাণহীন করে তোলে।

বিশেষ পরামর্শ ও করণীয়

উপরের যেকোনো এক বা একাধিক লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায়, তবে অবহেলা না করে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের (নেফ্রোলজিস্ট) পরামর্শ নিন। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস আছে, তাদের বছরে অন্তত একবার কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।

ডাক্তার সাধারণত একটি রক্ত পরীক্ষা (Serum Creatinine) এবং একটি প্রস্রাব পরীক্ষা (Urine for ACR)-এর মাধ্যমে কিডনির কার্যক্ষমতা সহজেই নির্ণয় করতে পারেন। মনে রাখবেন, কিডনি রোগ যত আগে ধরা পড়বে, চিকিৎসার মাধ্যমে এর জটিলতা প্রতিরোধ করা এবং কিডনিকে ভালো রাখা ততটাই সহজ হবে।


তথ্যসূত্র:

  1. National Kidney Foundation (USA): "Signs and Symptoms of Kidney Disease"

  2. National Institute of Diabetes and Digestive and Kidney Diseases (NIDDK), USA: "Symptoms of Chronic Kidney Disease"

  3. Mayo Clinic: "Chronic kidney disease - Symptoms and causes"

  4. World Health Organization (WHO): Publications on Non-communicable Diseases, including Kidney Disease.

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়