প্রযুক্তি ডেস্ক: স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ‘স্পার্ককিট্টি’ (SparkKitty) নামের একটি ভয়ংকর ম্যালওয়্যার। দেখতে সাধারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাপের মতো হলেও এর আড়ালে লুকিয়ে আছে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার এক ভয়ংকর ফাঁদ। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস—উভয় প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীরাই এই ম্যালওয়্যারের শিকার হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই অ্যাপটি একবার ফোনে ইনস্টল হয়ে গেলে আপনার অজান্তেই গ্যালারিতে থাকা ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও থেকে শুরু করে স্পর্শকাতর তথ্য মুহূর্তেই চলে যেতে পারে হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে।
‘স্পার্ককিট্টি’ মূলত একটি ছদ্মবেশী স্পাইওয়্যার। ব্যবহারকারীরা যখন এটিকে একটি সাধারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাপ ভেবে ডাউনলোড করেন, তখনই শুরু হয় এর আসল কাজ। অ্যাপটি ইনস্টল হওয়ার সাথে সাথেই ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ক্যামেরা, ফটো গ্যালারি, মাইক্রোফোন এবং লোকেশন ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে নেয়।
একবার অনুমতি পেয়ে গেলে এটি ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে সবসময় সক্রিয় থাকে এবং ব্যবহারকারীর অজান্তেই একটি রিমোট সার্ভারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। এরপর সুযোগ বুঝে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য সেই সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়। যেহেতু অ্যাপটি প্লে স্টোর বা অন্যান্য নির্ভরযোগ্য অ্যাপ প্ল্যাটফর্মেও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাই সাধারণ ব্যবহারকারীদের পক্ষে এর আসল উদ্দেশ্য বোঝা প্রায় অসম্ভব।
আপনার ফোনে ‘স্পার্ককিট্টি’ বা এই জাতীয় কোনো স্পাইওয়্যার সক্রিয় আছে কি না, তা বোঝার জন্য কিছু লক্ষণ রয়েছে। নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি:
অস্বাভাবিক ব্যাটারি ড্রেন: কোনো কারণ ছাড়াই ফোনের ব্যাটারির চার্জ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া।
ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধি ও নেটওয়ার্ক সমস্যা: হঠাৎ করে ফোনের ইন্টারনেট ডেটা বেশি খরচ হওয়া বা ওয়াই-ফাই কানেকশন ধীরগতির হয়ে যাওয়া।
অচেনা অ্যাপ বা ফাইল: আপনার ফোনে এমন কোনো অ্যাপ বা ফাইল দেখতে পাওয়া, যা আপনি নিজে ইনস্টল করেননি।
ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনের অস্বাভাবিক ব্যবহার: আপনি ব্যবহার না করলেও ফোনের ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনের ইন্ডিকেটর (সবুজ বা কমলা বাতি) জ্বলে ওঠা।
যদি আপনার ফোনে উপরের লক্ষণগুলো দেখা দেয় বা আপনি সন্দেহ করেন যে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করেছে, তাহলে तुरुন্ত কিছু পদক্ষেপ নিন:
১. পারমিশন ম্যানেজার চেক করুন (অ্যান্ড্রয়েড):
Settings → Privacy → Permission Manager-এ যান।
এখানে দেখুন কোন কোন অ্যাপ আপনার ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, এবং লোকেশন ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। কোনো অ্যাপের অনুমতি সন্দেহজনক মনে হলে তা বাতিল করুন (Revoke)।
২. সন্দেহজনক অ্যাপ ডিলিট করুন:
যদি আপনার ফোনে ‘স্পার্ককিট্টি’ বা অন্য কোনো অচেনা অ্যাপ আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকে, তাহলে দেরি না করে এখনই সেটি আনইনস্টল বা ডিলিট করুন।
৩. নিয়মিত প্রাইভেসি সেটিংস পর্যালোচনা:
ফোনের প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোকে সংবেদনশীল তথ্যে প্রবেশাধিকার দেওয়া থেকে বিরত রাখুন।
৪. সতর্কতার সাথে অ্যাপ ডাউনলোড:
শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস (Google Play Store, Apple App Store) থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন। যেকোনো অ্যাপ ডাউনলোডের আগে তার রিভিউ এবং রেটিং দেখে নিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল প্রতারণার ধরন প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে। তাই অনলাইন জগতে সুরক্ষিত থাকতে ব্যবহারকারীদের নিজেদেরই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সূত্র: প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট।