শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ০৩:৩৫ রাত
আপডেট : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ

আসন্ন ৯ জুলাইয়ের সময়সীমাকে সামনে রেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হতে যাওয়া এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ৩-৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই আলোচনা, যেখানে শুল্কসীমা, পণ্যের তালিকা এবং আইনি বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।

দুই দেশের অবস্থানে বিস্তর ফারাক

দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও দুই দেশের নীতিগত অবস্থানে বড় ধরনের পার্থক্য থাকায় সমঝোতা সহজ হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ২৮টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু মতপার্থক্য রয়েই গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দাবিগুলো হলো:
১. বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম মার্কিন আইন অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে।
২. যুক্তরাষ্ট্র কোনো তৃতীয় দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক আরোপ করলে বাংলাদেশকেও একই ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্যে শুল্কছাড় পাবে, সেই সুবিধা অন্য কোনো দেশকে দেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশের অবস্থান:
১. যুক্তরাষ্ট্রের দাবিগুলো বাংলাদেশের বহুপক্ষীয় বাণিজ্যনীতি ও কৌশলগত অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২. উভয় দেশ পারস্পরিক পণ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবে।
৩. কোনো পক্ষই একতরফাভাবে শাস্তিমূলক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
৪. বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান মেনেই সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার, তাই আলোচনা চলছে। তবে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো চুক্তি হবে না। ডব্লিউটিওর সদস্য হিসেবে আমাদের সীমাবদ্ধতা যুক্তরাষ্ট্রও জানে।"

বাণিজ্য ঘাটতিই মূল কারণ

বিশ্লেষকদের মতে, এই চাপের পেছনে মূল কারণ হলো দুই দেশের মধ্যকার বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন ডলার, যার বিপরীতে আমদানি ছিল মাত্র ২.২ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল রপ্তানি উদ্বৃত্ত কমানোকেই যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখছে।

চুক্তিতে ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, এলএনজি, বোয়িং বিমান ও মূলধনি যন্ত্রপাতির মতো উচ্চমূল্যের পণ্য আমদানির আশ্বাস দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের এই পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন দেশের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, "একতরফাভাবে শুল্ক বাড়ালে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না। আমরা ভারসাম্যপূর্ণ একটি চুক্তি চাই। ৯ জুলাইয়ের মধ্যে তা সম্ভব না হলে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হোক।"

এ বিষয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য রাষ্ট্রীয় অবস্থান জলাঞ্জলি দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে সংবেদনশীল অথচ সাহসী কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর পদক্ষেপের দিকেও নজর রাখতে হবে।"

ভবিষ্যৎ কী?

যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯ জুলাই থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কথা জানিয়েছেন, ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। প্রয়োজনে তারা চুক্তির কার্যকারিতা আরও ৯০ দিন বা তার বেশি সময়ের জন্য স্থগিত রাখতে পারে। ফলে, আসন্ন বৈঠকটিই এই বাণিজ্য সংকটের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উৎস: আজকের পত্রিকা।

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়