মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) বিতর্কিত প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দেওয়ার বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, "চিঠিতে শুধুমাত্র প্রকল্প সংশ্লিষ্ট যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছি, এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি বা আমার মন্ত্রণালয় কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।"
সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রকল্প বাস্তবায়নে জোরালো যুক্তি তুলে ধরার দাবি
ফয়েজ আহমদ বলেন, “বিটিসিএলের সক্ষমতা সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি। প্রতিযোগীরা যেখানে নেটওয়ার্ক আপগ্রেড করছে, বিটিসিএল পিছিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি যদি নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন না করে, তাহলে বাজার থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
চলমান ‘অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় নেওয়া যন্ত্রপাতি সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় ফাইবার নেটওয়ার্ক এখনো স্থাপন না হওয়ায় ৩০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অচল হয়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি। “এই কাজ সম্পন্ন না হলে আরও ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে,” বলেন ফয়েজ আহমদ।
তিনি আরও জানান, “বিটিসিএলের মূল প্রকল্পের দুটি অংশ—আইপি নেটওয়ার্ক ও ফাইবার ডিডিডব্লিউিএম নেটওয়ার্ক। আইপি নেটওয়ার্কের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হলেও ফাইবার সংযোগ না থাকায় তা কার্যকর করা যাচ্ছে না।”
‘চিঠি ছিল মতামত, কোনো নির্দেশ নয়’
দুদক চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠি প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “চিঠিতে শুধু মতামত ব্যক্ত করেছি, কোনো নির্দেশনা দিইনি। আমি এবং আমার মন্ত্রণালয় পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত। এখানে যত কাজ হয়েছে, সবই হয়েছে পূর্ববর্তী সরকারের আমলে। বর্তমান প্রশাসন কেবল যুক্তি দিয়ে মতামত জানিয়েছে।”
তিনি বলেন, “কিছু মহল ও গোষ্ঠী বিটিসিএলকে বাজার থেকে সরিয়ে দিতে চায়। সেই প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি কার্যকর রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে দুদকের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।”
‘চরিত্রহননের চেষ্টা করা হয়েছে’
সাম্প্রতিক গণমাধ্যম প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “এই চিঠিকে ঘিরে আমাকে এবং আমাদের মন্ত্রণালয়কে অপপ্রচারের মাধ্যমে চরিত্রহননের অপচেষ্টা হয়েছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”
মামলা না থাকলেও আশঙ্কা প্রকাশ
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, প্রকল্পটির বিপরীতে দুদকের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে প্রকল্পটি স্থবির থাকলে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ক্ষতির মুখে পড়বে এবং বিটিসিএলের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রিফর্ম পলিসি ২০২৫ প্রসঙ্গে বক্তব্য
সংবাদ সম্মেলনে টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি, ২০২৫ সম্পর্কেও আলোচনা করেন বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, “নতুন নীতিমালার লক্ষ্য হচ্ছে—নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, প্রতিযোগিতামূলক বাজার গঠন এবং রাষ্ট্রীয় টেলিকম প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা। বিটিসিএলের আধুনিকায়ন ছাড়া টেলিযোগাযোগ খাতের দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতি সম্ভব নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।