আধুনিক গবেষণা বলছে, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধের অন্যতম সেরা উপায়। নির্দিষ্ট কিছু খাবার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সরবরাহ করে কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সরাসরি সাহায্য করে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত এমন চারটি খাবার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
বেরি জাতীয় ফলকে বলা হয় "অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস"। এগুলোতে থাকা ভিটামিন ‘সি’, ফাইবার এবং বিশেষ করে ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ নামক উপাদানটি শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। এই ফ্রি র্যাডিক্যালগুলো কোষের ক্ষতি করে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষত, দেশীয় ফল আমলকিতে থাকা উচ্চমাত্রার পলিফেনল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং লিভারকে সুরক্ষিত রাখে।
কীভাবে খাবেন: প্রতিদিন একমুঠো বেরি স্মুদি, সালাদ, ওটস বা স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন।
ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপির মতো ক্রুসিফেরাস সবজিতে ‘সালফোরাফেন’ ও ‘গ্লুকোসিনোলেটস’ নামক শক্তিশালী উদ্ভিদ যৌগ থাকে। এই উপাদানগুলো শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে (ডিটক্স) এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কোলন, স্তন এবং ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এই সবজিগুলো বিশেষভাবে কার্যকর।
কীভাবে খাবেন: সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে হালকা ভাপে, অল্প সেদ্ধ করে বা সালাদে মিশিয়ে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
রসুন ও হলুদ—এই দুটি মসলা হাজার বছর ধরে তাদের ঔষধি গুণের জন্য পরিচিত। রসুনে থাকা ‘অ্যালিসিন’ নামক যৌগ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি抑制 করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। অন্যদিকে, হলুদের সক্রিয় উপাদান ‘কারকিউমিন’ একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ایجنٹ, যা শরীরের প্রদাহ কমায় এবং টিউমার তৈরি হতে বাধা দেয়।
কীভাবে খাবেন: রান্নায় প্রতিদিন তাজা রসুন ও হলুদের গুঁড়ো ব্যবহার করাই এর উপকারিতা পাওয়ার সহজতম উপায়।
নিয়মিত বাদাম খাওয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর একটি কার্যকর অভ্যাস। আখরোট, আমন্ড এবং অন্যান্য বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ই, সেলেনিয়ামের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান থাকে। আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পলিফেনল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ধীর করে। অন্যদিকে, আমন্ড ফাইবার সরবরাহ করার পাশাপাশি হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
কীভাবে খাবেন: প্রতিদিন একমুঠো (প্রায় ২৫-৩০ গ্রাম) কাঁচা বা হালকা ভাজা বাদাম খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের মত: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো একটি খাবারই ক্যান্সার নিরাময়ের জাদুকরী সমাধান নয়। তবে, এই খাবারগুলো একটি সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে নিয়মিত গ্রহণ করলে তা শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে এবং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সূত্র: আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চ (AICR), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিভিন্ন পুষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে সংকলিত।