এ রোগ সচরাচর দেখা যায় বয়স ৫০ পেরনোর পরে। তবে সলমন জানাচ্ছেন, তিনি ওই রোগের যন্ত্রণা প্রথম অনুভব করেন 'পার্টনার' ছবির সেটে। 'পার্টনার' মুক্তি পেয়েছিল ২০০৭ সালে। হিসাব মতো সলমনের বয়স তখন ৪২।
ব্যথা-জ্বালা-যন্ত্রণার সামনে সবাই অসহায়। সে সাধারণ মানুষ হোন বা তারকা। শরীরে যন্ত্রণা শুরু হলে কুঁকড়ে যান প্রত্যেকেই। সলমন খান তেমনই এক যন্ত্রণার শিকার। তাঁর রোগের নাম ট্রাইজেমিনাল নিউর্যালজিয়া। যে রোগে মুখের স্নায়ুতে যন্ত্রণা শুরু হয়। সেই ব্যথা কতটা তীব্র, তা বোঝাতে সলমন বলেছেন, ‘‘যখন ব্যথা শুরু হত, তখন মনে হত এমন দুর্ভাগ্য যেন আমার সবচেয়ে বড় শত্রুরও না হয়।’’
তবে ট্রাইজেমিনাল নিউর্যালজিয়া যে কোনও মানুষেরই হতে পারে। এই রোগ নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এর নেপথ্যে মূলত তিনটি কারণ থাকে। আমেরিকার প্রিন্সটন ব্যাপ্টিস্ট মেডিক্যাল সেন্টার এবং ইউমা রিজিওনাল মেডিক্যাল সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত দুই ভারতীয় গবেষক নিধি শঙ্কর কিক্কেরি এবং শিবরাজ নাগাল্লি জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রোগ হয় মস্তিষ্কের প্রবেশপথে থাকা ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুর গোড়ায় রক্তবাহী জালিকা কিংবা ধমনীর চাপ পড়লে।
তবে এ ছাড়াও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস হলে বা মস্তিষ্কে টিউমার বা সিস্ট তৈরি হলে এমন হতে পারে। কোনও মানসিক আঘাত, সরাসরি মুখে আঘাত লাগা, অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে হওয়া সমস্যা বা স্ট্রোক থেকেও এমন হতে পারে।
এমনিতে যে কোনও রোগই যন্ত্রণাদায়ক। তবে ট্রাইজেমিনাল নিউর্যালজিয়া আক্ষরিক অর্থেই অসহ্য যন্ত্রণার কারণ হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে সবিস্তার কথা বলেছেন সলমন। তিনি বলেছেন, ‘‘এ রোগের যন্ত্রণা এতটাই বেশি হতে পারে, যে রোগীর মনে হতে পারে এর থেকে মৃত্যু শ্রেয়। তাই এই রোগকে সুইসাইডাল ডিজ়িজ়ও বলা হয়।’’
সলমনের ক্ষেত্রে ওই ব্যথা হত প্রতি ৪-৫ মিনিট অন্তর। তিনি বলছেন, ‘‘কোনও দিন সকালে ওই ব্যথা শুরু হলে আমার তা থেকে নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে ঘণ্টা দেড়েক লেগে যেত। কথা বলা তো দূর, সেই সময়ে আমি প্রাতরাশও করতে পারতাম না। এক এক দিন এমনও হত, সারা দিনই কিছু না খেয়ে একেবারে রাতের খাবার খেতাম। তা-ও জোর করে। কারণ, খাবার চিবোতে পারতাম না। খাবার গেলাটাই একটা কষ্টকর কাজ হয়ে দাঁড়াত।’’ প্রায় সাড়ে সাত বছর এই রোগ এবং তার যন্ত্রণা সহ্য করার পরে সলমন অস্ত্রোপচার করান এবং যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান।
গবেষণা বলছে, এ রোগ সচরাচর দেখা যায় বয়স ৫০ পেরনোর পরে। পরিবারের কারও ওই রোগ থাকলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। তবে সলমন জানাচ্ছেন, তিনি ওই রোগের যন্ত্রণা প্রথম অনুভব করেন 'পার্টনার' ছবির সেটে। 'পার্টনার' মুক্তি পেয়েছিল ২০০৭ সালে। হিসাব মতো সলমনের বয়স তখন ৪২। অভিনেতা বলছেন, ‘‘'পার্টনার'-এ লারা দত্ত আর আমার একটা গানের দৃশ্যের শুটিং ছিল। একটা শটে ও আমার মুখ থেকে চুল সরিয়ে দিচ্ছিল। ও মুখ থেকে চুল সরাতেই আমার মধ্যে বিদ্যুতের মতো ব্যথাটা চলে গেল। কিছু ক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে, আমি লারাকে বলেছিলাম, আরে তুমি তো ইলেক্ট্রিফাইং। কিন্তু পরে বুঝলাম, আসলে রোগটা প্রথম জানান দিয়েছিল সেই দিনই।’’
সূত্র: আনন্দবাজার