ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্যকোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই ৯ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে করছেন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শুরু হওয়া এই অনশন শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টানা প্রায় ২০ ঘন্টা ধরে চলছে।
পোষ্যকোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অনশনকারীরা।
প্রথমে এককভাবে অনশন শুরু করেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম। পরে আরও আটজন শিক্ষার্থী একাত্মতা প্রকাশ করে অনশনে যোগ দেন। তাঁরা হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সজিবুর রহমান, সমাজকর্ম বিভাগের আরিফ আলভি, আবু রাহাদ ও সৈয়দ ইস্পাহানী, ফলিত গণিত বিভাগের তৌফিকুল ইসলাম, আরবি বিভাগের রমজানুল মোবারক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নাজমুল হক আশিক এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রেদোয়ান আহমেদ রিফাত।
অনশনরত সজিবুর রহমান বলেন,‘আমরা দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে পোষ্যকোটা বাতিল করেছিলাম। অথচ রাকসু নির্বাচনের আমেজে সবাই ব্যস্ত থাকার সময় প্রশাসন আবারও পোষ্যকোটা পুনর্বহাল করেছে। তাঁরা মূলত রাকসু নির্বাচনকে জিম্মি করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি তাঁরা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।’
কাফনের কাপড় গায়ে দিয়ে অনশনে বসা আসাদুল ইসলাম বলেন,‘আমরা মৃত্যু পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। কাফনের কাপড় গায়ে দিয়ে এখানে বসেছি। এই অযৌক্তিক পোষ্যকোটা বাতিল না হলে আমরা এক ফোঁটা পানিও মুখে নেব না।’
তাদের অনশন ভাঙাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক কয়েক দফায় কথা বলেছেন। তবে শিক্ষার্থীরা জানান দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন,‘বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন। রায় না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা যদি অপেক্ষা করে, তবে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এখনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তা যেকোনো একপক্ষের দিকে চলে যাবে, যা অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভর্তি কমিটির সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় (পোষ্যকোটা) ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি।
শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ঔরসজাত/গর্ভজাত সন্তান কোটা সুবিধা পাবে, ভর্তির প্রাথমিক আবেদনের জন্য বিজ্ঞাপিত যোগ্যতা এবং শর্ত পূরণ করতে হবে, মেধার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসনসংখ্যার অতিরিক্ত হিসেবে এ প্রক্রিয়ায় ভর্তির বিষয়টি বিবেচিত হবে, প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করে মেধা তালিকা করা হবে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্ধারিত শর্তাবলীসহ অবশ্যই ন্যূনতম পাস নম্বর থাকতে হবে, কোন বিভাগে ২ জনের অধিক ভর্তির সুযোগ থাকবে না, কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারির সন্তানকে তার কর্মরত বিভাগে ভর্তি করানো যাবে না, ‘অটো মাইগ্রেশন’ ছাড়া শিক্ষার্থীর বিভাগ পরিবর্তনের অন্য কোনো সুযোগ থাকবে না, ভর্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম প্রমাণিত হলে ছাত্রত্ব বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সুবিধার আওতায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী কোনোভাবেই আবাসিক হলে সিটের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেনা।