বাংলাদেশের মাটিতে উচ্চমূল্যের বিদেশী ফল অ্যাভোকাডো চাষ করে রীতিমত চমক সৃষ্টি করেছেন ঝিনাইদহের এক স্কুল শিক্ষক। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের কাগমবাড়ি গ্রামের হারুনুর রশিদ মুসা অ্যাভোকাডো চাষ করে শুধু অর্থনৈতিকভাবে লাভবানই হচ্ছেন না, বরং দেশের বাজারে ভেজালমুক্ত ফলের জোগান দিচ্ছেন।
উচ্চ লাভজনক ফলন ও শুরু কথা
মুসা জানান, তার বাগানের একটি অ্যাভোকাডো গাছ থেকে এ বছর আনুমানিক ১০০ কেজি ফলন আশা করা হচ্ছে। ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে এই একটি গাছ থেকেই ৫০ হাজার টাকার ফল পাওয়া সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন অ্যাভোকাডো বর্তমান সময়ে অন্যতম লাভজনক ফসল বলে মনে করেন তিনি।
২০১৭ সালে সাবেক কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এনামুল স্যারের একটি প্রতিবেদন দেখে তিনি বাংলাদেশে অ্যাভোকাডো চাষের সম্ভাব্যতা নিয়ে আগ্রহী হন। তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে আট বছর আগে এই বাগান শুরু করেন। শুরুতে ১২ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অ্যাভোকাডো চাষ শুরু করেন, যা বাংলাদেশে প্রথম বলে জানান তিনি।
চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
অ্যাভোকাডো চাষ পদ্ধতি অনেকটা আম চাষের মতোই। এর জন্য অতিরিক্ত কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আমের মুকুল আসার সময়েই এর ফুল আসে এবং জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। তবে চারা রোপণের ক্ষেত্রে জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে, যেখানে পানি জমে থাকবে না, কারণ এই গাছের শিকড় পচে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।
ফলকে মাছি পোকার (যা ফলের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর) আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে তিনি জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে রয়েছে:
মাছি পোকা দমনে বিভিন্ন ধরনের ফেরোমন ফাঁদ, যেমন ইয়েলো বোর্ড, সেরানাক ও জোনাটাক ব্যবহার।
ফলগুলোকে ব্যাগিং (প্যাকেটজাত) করে রাখা। এতে ঔষধ ব্যবহার করতে হয় না এবং ফলের রংও ভালো আসে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা ও বাজারজাতকরণ
মুসা অ্যাভোকাডোকে একটি 'ঔষধী ফল' হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও এর স্বাদ বা মিষ্টতা কম, তবে এর উচ্চ পুষ্টিমান এটিকে বিশেষ করে তুলেছে। এটি চর্বিযুক্ত ফল (Fat Fruit) নামে পরিচিত, যা মানবদেহে জমে থাকা ক্ষতিকর চর্বি অপসারণে সাহায্য করে। উন্নত বিশ্বে এর তেল মেডিসিন ও রূপচর্চায় ব্যবহার হয়।
আমদানিকৃত অ্যাভোকাডোর দাম যখন ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি, তখন মুসা তার বাগানের ফল সরাসরি ভোক্তার কাছে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এই দাম রাখার কারণ হিসেবে তিনি জানান, অ্যাভোকাডোর একটি নির্দিষ্ট বাজার তৈরি করতে এবং ভোক্তারা যেন দেশের তাজা ফল কম দামে পায় সেই লক্ষ্যেই তিনি সরাসরি অনলাইনে বিক্রি করেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ
নতুন যারা ফল চাষে আগ্রহী, তাদের উদ্দেশ্যে মুসা পরামর্শ দেন যে কোনো ফল চাষের ক্ষেত্রে সবার আগে সঠিক জাতের চারা নির্বাচন করা উচিত। নার্সারিগুলোতে ভেজাল চারা বিক্রির প্রবণতা থাকায়, তিনি সঠিক উৎস (মাতৃগাছ আছে এমন উৎস) থেকে জেনে বুঝে চারা কেনার উপর জোর দেন।
এছাড়াও, মুসা তার ৭ বিঘা জমিতে অ্যাভোকাডোর পাশাপাশি ভিয়েতনামিজ বারোমাসি কাঁঠাল, রাম্বুটান, লংগান ও এবিউ-এর মতো উচ্চমূল্যের বিদেশী ফলও চাষ করছেন। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে রাম্বুটান ও লংগান চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।