শিরোনাম
◈ ফ্লোটিলার সর্বশেষ জাহাজটিও আটক করল ইসরাইল ◈ গণ-অভ্যুত্থানের পর পলাতক ৮১ পুলিশ কর্মকর্তা, ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ ◈ এক গাছেই লাখ টাকার ফল, দুই বিঘায় ২০ লাখ টাকা! (ভিডিও) ◈ কী হবে, কে জিতবে আগামী নির্বাচনে? নির্বাচনের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা: ‘সহজ ভেবেছিলাম, কিন্তু ভুল হচ্ছিল’: মাসুদ কামাল ◈ যুক্তরাজ্যে ইহুদি উপাসনালয়ে হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ ◈ ভারতের যে গ্রামে নবীদের কবর রয়েছে! ◈ গাজার দিকে ছুটছে ফ্লোটিলার শেষ জাহাজ; পিছু না হটার ঘোষণা! (ভিডিও) ◈ বিশ্বকাপ বাছাই, দুই ম‌্যা‌চের জন্য দল ঘোষণা ফ্রান্স ও জার্মানির ◈ চল‌ছি‌লো ধর্মীয় উৎসব, গির্জার কাঠামো ধসে ৩৬ জন নিহত ◈ প্রধান উপদেষ্টার কথায় রাজ‌নৈ‌তিক নেতা‌দের ম‌ধ্যে যত বিভ্রান্তি 

প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৩৬ দুপুর
আপডেট : ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

প্রধান উপদেষ্টার কথায় রাজ‌নৈ‌তিক নেতা‌দের ম‌ধ্যে যত বিভ্রান্তি 

এল আর বাদল : ডিজিটাল গণমাধ্যম জেটেওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচন, আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলেও মনে করছেন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে সাইড লাইনে প্রধান উপদেষ্টা জেটেওর মেহেদি হাসানকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে আইন উপদেষ্টা  ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সেসবের ব্যাখ্যা দেন৷ কিন্তু ইতিমধ্যে দেশে ফিরলেও প্রধান উপদেষ্টা নিজে ওসব বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দেননি। ---- ড‌য়ে‌চে‌ভে‌লে

প্রধান উপদেষ্টার যে দুটি বক্তব্য সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তা হলো, নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের ফেরা প্রসঙ্গ। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নেপালে, যেখানে এই বছর কিছুদিন আগে সরকার ক্ষমতাচ্যূত হয়েছে, সেখানকার অন্তর্র্বর্তী নেতা মাত্র ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাংলাদেশে একটি নির্বাচনের জন্য কেন ১৮ মাস লাগছে বা লাগবে? এর জবাবে প্রধান উদেষ্টা বলেন, ‘‘অবশ্যই, আপনি বললেন, মানুষ বলছে অনেক সময় লাগছে। এমন মানুষও আছে, যারা বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন। সুতরাং মানুষ সব ধরনের কথা বলছে। আপনি থাকুন, নির্বাচন কেন? কার নির্বাচন দরকার? আওয়ামী লীগকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল হয়নি, কার্যক্রম স্থগিত  করা হয়েছে। 

তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, সেটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত। তবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ তিনি তুলে নিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘স্থগিতের আদেশ তুলে নেয়ার বিষয়টি একটি সম্ভাবনা।

প্রধান উপদেষ্টার এই সাক্ষাৎকারের নানা দিক নিয়ে ডয়চে ভেলে কথা বলেছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মাহমুদ এবং সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সঙ্গে।

প্রধান উপদেষ্টা ওই সাক্ষাৎকারে কোন পর্যায়ে কোন প্রেক্ষাপটে কী কথা বলেছেন, তার চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তৃতায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে যে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছেন, তার ওপর আস্থা রাখতে চান বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। 

তার কথা, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কোনো শর্তসাপেক্ষ নয়।প্রধান উপদেষ্টা যে তার তিন দায়িত্বের তিন নাম্বারে নির্বাচন রেখেছেন, সেটা তার কথা। সংস্কার সবাই যেটুকুতে একমত সেটুকু হবে। বিচার তো চলছে। ওই দুইটি নির্বাচনের কোনো শর্ত নয়। নির্বাচন আলাদা বিষয়। এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, "কোনো কোনো দল বা গোষ্ঠী নির্বাচন চায় না। নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য তাদের চেষ্টা আছে। আবার আমরা ঈদের জামায়াতে কোনো কোনো গোষ্ঠীর লোকজনকে প্রধান উপদেষ্টাকে পাঁচ বা দশ বছর থাকার কথা চিৎকার করে বলতে শুনি। 

পরবর্তীতে আমরা গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করেও দেখেছি দুই-তিনটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী একইরকম কথা বলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি বা ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। প্রধান উপদেষ্টা হয়তো ওইখান থেকেই বলেছেন। এটা আমলে নেয়ার মতো কোনো বিষয় নয়।

আর প্রধান উপদেষ্টা একদিক থেকে ঠিকই বলেছেন যে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। দল তো নিষিদ্ধ হয়নি। দলের বিচার করার জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। এখন বিচারের জন্য তো অপেক্ষা করতে হবে। আর সরকার স্থগিতাদেশ যদি প্রত্যাহার করে, তাহলে আওয়ামী লীগ ফিরতে পারে। তবে সরকার জনগণের সেন্টিমেন্টের প্রতি আস্থা রেখেই কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারের খণ্ডিত অংশ নিয়ে কনফিউশন তো হতেই পারে। তারপরও সেটাকে আমরা আমলে নিতে চাই না।  তার রোডম্যাপ, জাতির উদ্দেশে ভাষণ এবং জাতিসংঘের ভাষণের ওপর আস্থা রাখতে চাই।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, "আওয়ামী লীগের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর আইন উপদেষ্টা এবং প্রেস সচিব বক্তব্য দিয়েছেন। তারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তারপর আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আর কোনো অস্পষ্টতা নাই। পরিস্কার হয়ে গেছে। আর নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা তো আগেই একটা রোড ম্যাপ দিয়েছেন। 

প্রথমে বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন। পরে বলেছেন এপ্রিলের মধ্যে, সর্বশেষ তিনি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের কথা বলেছেন। এটা থেকে তো আর  সরে যাওয়ার সুযোগ নেই।  তিনি তো তার ওই সাক্ষাৎকারেই ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কথা বলেছেন। 

ফলে, এখানে কোনো বিভ্রান্তি আমি আর দেখি না।” "আর তিনি ঠিকই কলেছেন, বাংলাদেশ তো ভারতীয় অপপ্রচারের শিকার। ভারতের মিডিয়া তো ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, বলেন তিনি।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মাহমুদ মনে করেন, "প্রধান উপদেষ্টা ৫, ১০ বা ৫০ বছরের যে কথা বলেছেন, তা হলো, কথার পিঠে কথা। প্রশ্ন ছিল - নেপাল ছয় মাসে নির্বাচন দিতে পারলে তার কেন দেড় বছর লাগছে? এর জবাবে প্রথমে তিনি কনটেক্সটটা বলেছেন। তারপর বলেছেন, মানুষ তো ১০ বছর , ৫০ বছরের কথাও বলছে। এটা একটা রেটোরিক। তিনি মিন করে বলেছেন বলে আমার মনে হয় না।উনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ এগুলোও বলছে। কিন্তু আমরা পাত্তা দিাচ্ছ না। আমরা ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন দিচ্ছি।”

"বাংলাদেশে ভূরাজনৈতিক নতুন সমীকরণের যে ইঙ্গিত আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেখান থেকেই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে তিনি উদ্বিগ্ন নন। উনি উদ্বিগ্ন হলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ডিষ্টার্বিং এলিমেন্টে। উনি মোদীকে যেভাবে আইডেন্টিফাই করেছেন, তার মাধ্যমে উনি স্বাভাবিকভাবেই ভূরাজনৈতিক যে নতুন সমীকরণে বাংলাদেশ পা ফেলেছে, তার দিকেই যাওয়ার ইঙ্গিত করেছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে,” বলেন তিনি।

তার কথা, "বিচার তো চলছে। নভেম্বরের মধ্যে রায়ও এসে যাবে আর বিচার চলবে। সংস্কার প্রক্রিয়া তো এগোচ্ছে। ঐকমত্য কমিশন তো জুলাই সনদ চূড়ান্ত করেছে। সেখানে তো জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটমেন্ট থাকবে। তাহলে নির্বাচনে তো আর ফেব্রুয়ারিতে কোনো সমস্যা নাই।

বাইরের শক্তি যদি ডিষ্টার্ব করে, তাহলে এখানে একটা সংক্রামক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে- এখানে কিন্তু একটা কনফিউশন তার কথায় হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের ব্যাপারে  তিনি কূটনৈতিক ভাষায় কথা বলেছেন। উনি তো সব কিছু নিজের অথরিটির মধ্যে নিতে পারেন না। তার অথরিটির মধ্যে যেটুকু আছে, তিনি সেটুকু বলেছেন। সব দায়িত্ব তো তার নয়। আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগ নিয়ে তিনি ঠিকই বলেছন, বলেন তিনি।

তার কথা, নির্বাচন নিয়ে তার কথায় যে সংশয় আছে, সেটা প্রস্তুতির দিক থেকে। আমরা কিন্তু বড় দলকেও নির্বাচনের জন্য তৃণমূলে প্রস্তুতি নিতে দেখছি না। বিএনপি যে শঙ্কা থেকে এখনো প্রার্থী ঠিক করছে না, সেই একই  শঙ্কা নির্বাচন নিয়ে আমরা উপদেষ্টাদের মধ্যেও দেখতে পাই।

এদিকে সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "উনি একেক সময় একেক কথা বলেন এবং বিদেশের মাটিতে বলেন। আমরা গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা শুরু করেছি, সেই যাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। উনি বাংলাদেশে যা বলেন, মানুষ সেটা বিশ্বাস করে না। সেইখান থেকে ওনার ফিরে আসা দরকার বলে মনে করি।

তার কথা, "নির্বাচনই এখন প্রধান বিষয়। অন্য কোনো কথা না বলে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করা।  উনি সেটা করছেন না। এটা একটা বড় সংকট বলে মনে করি।

উনি বলছেন দেশের মানুষ তাকে ১০-২০ বছর ক্ষমতায় চায়। কে চায় আমি তো জানি না। আমি তো এখন গ্রামে আছি। গ্রামের মানুষ তো জানতে চায় নির্বাচন কবে? উনি মনের মাধুরি মিশিয়ে  একটা বললে তো হবেনা,” বলেন তিনি।

তার কথা, কোনো দল রাজনীতি করবে কি করবেনা এটা জনগণের বিষয়। নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে আমরা নই। কিন্তু কনফিউশন তো ওনারাই সৃষ্টি করেছেন। এখন এই সিদ্ধান্ত ওনাদেরই নিতে হবে যে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার তারা কীভাবে রক্ষা করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়