মনজুর এ আজিজ: রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দেশের ব্যাংক খাতের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, “ব্যাংক খাতে জবাবদিহিমূলক ও ঝুঁকি-সচেতন সংস্কৃতি গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রযুক্তিনির্ভর তদারকি কাঠামো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে দেশে রিস্ক বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু হবে।”
তিনি জানান, ৬১টি তফসিলি ব্যাংককে ১২টি গ্রুপে ভাগ করে ঝুঁকিভিত্তিক নিরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে ২০টি ব্যাংকের পাইলট কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ব্যাংকের ওপর পাইলটিং কার্যক্রম সম্পন্ন হবে, জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আরবিএস কার্যকর হবে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ না করা পর্যন্ত আর্থিক খাত রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়বে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমলেই ব্যাংক খাতে ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আরবিএস কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, আইনগত, পরিচালনাগত ও কৌশলগত ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হবে। ঝুঁকি চিহ্নিত হলে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হবে।”
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ তদারকি বিভাগ—এই চারটি নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, “প্রতিটি ব্যাংকের জন্য আলাদা তদারকি দল গঠন করা হবে। তৈরি করা হবে একটি কেন্দ্রীয় তথ্য প্ল্যাটফর্ম, যা তথ্য বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।”
এ সময় গ্রাহকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ রয়েছে। কিছু দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়তো টিকবে না, তবে আমানতকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী দিনে প্রযুক্তিনির্ভর, ঝুঁকিসচেতন এবং জবাবদিহিতামূলক ব্যাংকিং খাত গড়তে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।