নিজস্ব প্রতিবেদক : ৩৭ সৌর বিদ্যুৎপ্রকল্প বাতিল করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে দফায় দফায় টেন্ডার করেও নতুন দরদাতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতি (বিএসআরইএ)। শনিবার (৫ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ৫৫টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে, এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে আমরা লক্ষ্য করছি, এসব প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয়। কিছু প্রকল্পে মাত্র একজন দরদাতা অংশ নিয়েছে, আবার কিছুতে কেউই আগ্রহ দেখাননি। আমরা মনে করছি, আগের প্রকল্পগুলো বাতিল করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাতিলকৃত প্রকল্পগুলোতে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ হয়েছে। আমরা বাতিলকৃত প্রকল্পগুলো পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আগের সরকারের সময়ে বিশেষ আইনের আওতায় চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা ৩৭টি প্রকল্প বাতিল করে দেয়। যেগুলোর বিপরীতে এলওআই ইস্যু করা হয়েছিল, অনেক প্রকল্পের বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টি পর্যন্ত জমা হয়েছিল।
মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির নীতিমালা-২০২৫ প্রকাশ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। এটি দেশের নবায়নযোগ্য খাতের জন্য ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। বিশেষভাবে সব সরকারি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর ঘটবে।
তিনি বলেন, বাজেটে ইনভার্টারের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার জন্য ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি সোলার শিল্পের অন্যান্য যন্ত্রপাতির ওপর করহ্রাসের প্রতিফলন থাকা দরকার। মাউন্টিং স্ট্রাকচার, ডিসি ক্যাবল, কন্ট্রোলার, ব্যাটারি ও সোলার পাম্পের ওপর উচ্চ শুল্ক বিদ্যমান। এসব পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমিয়ে সহায়ক কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।
তিনি বলেন, নেট মিটারিং বাস্তবায়নে নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও বিলম্ব প্রত্যক্ষ করছি। অনেক ক্ষেত্রে মাসের পর মাস লেগে যায় গ্রিড সংযোগ অনুমোদন পেতে। আমরা এই প্রক্রিয়া সহজ ও ভোক্তাবান্ধন করার দাবি জানাই। পরিপত্র অনুযায়ী নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে ১০ কিলোওয়াট বা তার বেশি হলে ন্যূনতম ১ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এটি বিএনবি কোর্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, বর্তমানে কাস্টমসে অধিকাংশ পণ্যের মূল্যায়ন পিআই (প্রোফর্মা ইনভয়েস) ভ্যালুর ভিত্তিতে করা হলেও সোলার প্যানেল ও অন্যান্য পণ্য কেজি ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও বাস্তবতা বিরোধী, বাস্তব মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যায়িত হচ্ছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সোলার প্যানেল ও অন্যান্য পণ্যের ওপর থেকে ৭.৫ শতাংশ ট্রেড ভ্যাট অব্যাহতি, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ওপর থেকে কর হ্রাস করা, হাইকোর্ট কর্তৃক ঘোষিত দেশের সকল ভবনের ছাড়ে সৌর প্যানেল স্থাপনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য রোডম্যাপ ও গাইডলাইন প্রকাশ, নিম্নমানের সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। একটি স্থিতিশীল বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন। যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারিরা আস্থা পাবে। আমরা সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করতে চাই। যাতে ২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সম্ভব হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান সরকার রোজেল, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ উর রহমান ভূঁইয়া, অর্থ সম্পাদক নিতাই পদ সাহা প্রমুখ।