নিজস্ব প্রতিবেদক : তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহার চেয়েছেন টেক্সটাইল মালিকরা। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ শিল্পের বাস্তবতা ও অবদান জানিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন তারা। শনিবার (৫ জুলাই) দুপুর ১২টায় গুলশান ক্লাবের ক্রিস্টাল প্যালেস হলরুমে আয়োজিত বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল এ খাতের মালিকদের দাবি ও অবস্থান তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও বক্তব্য দেন।
তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ এটিআই আরোপ, টেক্সটাইল সেক্টরের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার (করপোরেট ট্যাক্স) সম্পর্কিত এসআরও নম্বর-১৫৯-আইন/আয়কর/২০২২, তারিখ ১ জুন, ২০২২-এর মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ ও অন্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৫ টাকা আরোপের ওপর বিটিএমএর অবস্থান তুলে ধরেন বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগামী সোমবারের মধ্যে যদি ট্যাক্স প্রত্যাহার না হয়, তাহলে সরকার যে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নিয়েছে তার ফল হিতে বিপরীত হবে। ইতোমধ্যে বন্দর থেকে কেউ তুলা খালাস করছে না।
সরকার এই ট্যাক্সকে সমন্বয়যোগ্য বললেও তা বাস্তবে ফেরত পাওয়ার নজির নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই ট্যাক্স পরিশোধ করতে গেলে আমাদের নতুন করে ব্যাংকঋণ নিতে হবে। বর্তমানে টেক্সটাইল খাতে করপোরেট ট্যাক্সের হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও নতুন এই এআইটির কারণে কার্যকর কর হার প্রায় ৫৯ শতাংশে পৌঁছে যাবে।
তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, দামের ঊর্ধ্বগতি, শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধি, রপ্তানি প্রণোদনা কমানোসহ নানা চাপে শিল্প খাত ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তার ওপর নতুন করে ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলো টেক্সটাইল খাতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশের শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এখনই অন্তত ৯০ শতাংশ মালিক তাদের কারখানা বিক্রি করে দিতে আগ্রহী।
সংগঠনের আরেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ্দিন জামান খান অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য কেউ এই ধরনের কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমার নিজের একটি টেক্সটাইল মিল আছে, যেখান থেকে সুতা নিয়ে আমি নিজস্ব ডেনিম ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে আমাকে সুতা কিনতে হবে ভারত থেকে। এই পরিস্থিতিতে দেশের কোনো টেক্সটাইল মিল টিকে থাকতে পারবে না। তিনি অবিলম্বে নতুন ট্যাক্স ও ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।
তিনি প্রধানত তিনটি দাবি তুলে ধরেন। প্রথমত, তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ এআইটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা। দ্বিতীয়ত, বস্ত্র উৎপাদনে জড়িত কোনো সুতা উৎপাদন, সুতা ডাইয়িং, ফিনিশিং, কোনিং, কাপড় তৈরি, কাপড় ডাইয়িং, প্রিন্টিং অথবা এ ধরনের এক বা একাধিক প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কোনো মিল/কোম্পানির শিল্পের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার একই শিল্প খাত হিসেবে (এসআরও নম্বর ৪৪-আইন/আয়কর-২৫/২০২৪, তারিখ: মার্চ ৪, ২০২৪) অনুযায়ী আরএমজি সেক্টরের সমপরিমাণ (১২ শতাংশ) ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা।
তৃতীয়ত, দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ ও অন্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৫ টাকা অব্যাহতি দেওয়া।