সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা ও সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চকবরুভেংড়ী গ্রামে দাদিকে কুপিয়ে মাথা বিচ্ছিন্ন করেছে তারই নাতি। মামলার বাদীর ভাষ্যমতে, দাদিকে তার নাতি প্রশ্ন করেছিল ‘তোমার রব কে?’ দাদি এর উত্তর দিতে না পারায় কুপিয়ে হত্যা করে নাতি।
ভুক্তভোগীর নাম মোছা. সন্দেশ বেগম (৮৫)। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে নাতি সজিব আলী মোল্লা (২২)।
বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। নিহত সন্দেশ বেগম ওই গ্রামের মৃত নওশের মোল্লার স্ত্রী। পুলিশ ঘাতক নাতি সজিব মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে আইয়ুব আলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে সজিব মোল্লাকে একমাত্র আসামি করে সলঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে বাদী আইয়ুব আলী জানান, বুধবার রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে তার মা সন্দেশ বেগম তার তৃতীয় ছেলে আহাম্মদ মোল্লার একতলা বাসভবনের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। তার শয়ন কক্ষের পাশের কক্ষে থাকেন আহাম্মদ মোল্লার ছেলে নাতি সজিব আলী মোল্লা।
তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে সজিব গরু জবাই করার ধারালো একটি বড় ছুরি হাতে দাদির কক্ষে প্রবেশ করে। এরপর তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জানতে চায়, ‘তোমার রব কে’। সন্দেশ বেগম এর উত্তর বলতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে সে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘তাহলে তো তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না’।
এরপর হাতে থাকা ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দেহ থেকে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তার চিৎকার শুনে তিনি ঘর থেকে দৌড়ে বেড় হয়ে দেখতে পান তার মায়ের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। আর ঘাতক সজিব ট্যাপের নিচে মাথা দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই পানি ঢালছে।
তিনি আরও বলেন, সজিব এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ঢাকায় কোচিং করছিল। সম্প্রতি সে কিছুটা অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়ায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে সে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।
তিনি বলেন, এই হত্যার আগে ও পরের ছবি তুলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তার ছেলে মামুন আলীসহ একাধিক ব্যক্তির ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়েছে বলেছে ‘দেখ আমি পাড়ি কি না দেখিয়ে দিলাম’।
এ বিষয়ে পুলিশ ও এলাকাবাসি জানায়, সজিব তার ফেসবুক আইডিতে ‘আল্লাহু আকবার’ লিখে একটি স্ট্যাটাস দেয়। কিছুক্ষণ পর আবারও ‘ইনশাআল্লাহ একটাও ছাড় পাবে না’ লিখে আরেকটি স্ট্যাটাস দেয়। এর কিছুক্ষণ পর বিষয়টি সজিবের বাবা আহম্মাদ আলীর নজরে এলে তিনি চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করেন। সবাই ছুটে এসে এই নৃশংস হত্যার ঘটনা দেখে সলঙ্গা থানায় পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে নিহতের লাশ উদ্ধার ও এ হত্যায় জড়িত নাতি সজিবকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার এসআই শহিদুল ইসলাম ও এসআই মাফিজুর রহমান বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এ হত্যার সাথে জড়িত নাতি সজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সলঙ্গা থানার ওসি এরামুল হক বলেন, এ ঘটনায় ঘাতক সজিবকে আসামি করে নিহতের ছোট ছেলে আইয়ুব আলী বাদি হয়ে সলঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।