নোয়াখালী প্রতিনিধি: যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে ‘নোয়াখালী বিভাগ’ বাস্তবায়ন আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে হুশিয়ারী দিয়ে নোয়াখালী থেকে অবাঞ্চিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বুধবার সকালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌরাস্তায় নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন চত্বরে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে বক্তারা এই ঘোষণা দেন। দেশের বৃহত্তম বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী এলাকায় দুই ঘন্টার ব্লকেড কর্মসূচির কারণে নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-কুমিল্লা, নোয়াখালী-ফেনী, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কে শত শত যানবাহন চলাচল বন্ধ দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও ব্লকেড কর্মসূচিতে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক কামাখ্যা চন্দ্রদাস, হেফাজতে ইসলাম নোয়াখালী জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত, নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সাইফুর রহমান রাসেল, চৌমুহনী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মহসিন আলম, চৌমুহনী ব্লাড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা টিআই সুজন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ তুষার, সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব মেহেদী হাসান সীমান্ত প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার আন্দোলনকারী, নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন সমন্বয় কমিটি, নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ এবং সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
ব্লকেড কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালীতে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস। নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলন আজ শুধু একটি প্রশাসনিক দাবিই নয়, এটি কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, মর্যাদার লড়াই। দীর্ঘদিন ধরে নোয়াখালীর মানুষ উন্নয়ন বঞ্চনার শিকার। যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শিল্পায়ন সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। অথচ নোয়াখালী ঐতিহ্য, শিক্ষা, কৃষি ও বাণিজ্যে একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নতুন বিভাগ গঠনের পর নোয়াখালীর মানুষও চেয়েছে তাদের নিজস্ব বিভাগ নোয়াখালী বিভাগ। যার আওতায় থাকবে লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলাসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। এই বিভাগ গঠিত হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম হবে আরও দ্রুত ও সহজ, সাধারণ মানুষকে ছোটখাটো কাজের জন্য আর চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা যেতে হবে না। নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন শুধু নোয়াখালীর নয়, পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এটি হবে উপকূলীয় সুরক্ষা, বাণিজ্যিক প্রসার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত। কিন্তু দুঃখজনক হলো, দীর্ঘদিন ধরে এই যৌক্তিক দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে জনগণের ক্ষোভ ও বঞ্চনা দিন দিন বাড়ছে।
বক্তারা বলেন, আমরা চাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে নোয়াখালী বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত আসুক। সরকার এই দাবিকে গুরুত্ব দিক, কারণ এটি দেশের সার্বিক উন্নয়নেরই অংশ। নোয়াখালী বিভাগ শুধু একটি দাবি নয়, এটি নোয়াখালীর মানুষের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন, ন্যায়বিচারের প্রশ্ন, উন্নয়নের প্রশ্ন।
এসময় বক্তারা যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আপনারা যদি আপনাদের জায়গা থেকে কুমিল্লাকে পার্সিয়ালিটি করে বিভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে আমরা আপনাদেরকে নোয়াখালী থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করবো। কুমিল্লা বিভাগ হোক, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নাই। তবে নোয়াখালীকে কুমিল্লার সঙ্গে যুক্ত করে নয়, নোয়াখালীকে আলাদা স্বতন্ত্র বিভাগ ঘোষণা করতে হবে।