এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাতবিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে সমুদ্রগামী জেলেদের ২২ দিন মা ইলিশ ধরা বন্ধ। অবরোধকালিন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জেলে পল্লীতে কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার জেলে পরিবার। নিষেধাজ্ঞা চলাকালিন জাল নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। জীবনযাত্রা মান পরিবর্তনে বিকল্প কর্মসংস্থান ও খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধির দাবি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। এখানকার মানুষের আয়ের উৎস কৃষি ও মৎস্য সেক্টর থেকে হলেও জেলে পেশার ওপর নির্ভরশীল নদী ও সমুদ্রগামী জেলেদের যুগের পর যুগ সংগ্রামী জীবন। পরিবর্তন হয়নি তাদের জীবনযাত্রার মান।
এ উপজেলার বিশেষ করে চিংড়াখালীর পূর্ব চন্ডিপুর পশুরিপাড়া জেলে পল্লী, খাউলিয়ার কুমার খালি, ফাসিয়াতলা, পূর্ব আমতলী, পশুরবুনিয়া বারইখালী জালিয়াঘাটা, কাষ্মির, বলইবুনিয়ার শ্রেনীখালী, পুটিখালীর সোনাখালী, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা, হোগলাপাশার নাইয়াপাড়াসহ প্রায় ২০ টি জেলে পাড়ায় ৮/১০ হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। তারা নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে যুগের পর যুগ। অনেকে আবার বাপ দাদার পেশা ধরে রাখেছে।
৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন সাগরে মা ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় অলস সময় পার করছেন এ সব জেলে পল্লীর জেলেরা। অবরোধকালিন কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। বছরের অধিকাংশ সময়ই সাগরে কাটে এ সব জেলেদের। মহাজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ অগ্রিম দাদন নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায় জেলেরা। জালে মাছ বেশী ধরা পড়লে মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করে কিছু টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারে। মাছ না পেলে বছরের পর বছর দেনাগ্রস্ত থাকতে হয় তাদের।
খাউলিয়া ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা জেলে পল্লীর জেলে আব্দুস সোবাহান গাজি, পূর্ব বরিশাল গ্রামের আব্দুর রহিম হাওলাদার, মন্টু আকন, পূর্ব আমতলীর মোতালেব মাঝি, মাসুদ তালুকদারসহ একাধিক জেলেরা বলেন, নদীর তীরবর্তী, ফাসিয়াতলা, কুমারখালীসহ ৪টি জেলে পল্লীতে তাদের প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বসবাস। বিএলসি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২০ টি ছোট বড় ট্রলারে কয়েকশ’ জেলে শ্রমীক সাগরে ১৫-২০ বছর ধরে মাছ ধরে আসছে। অথচ এদের মধ্যে অনেকেই জেলে নিবন্ধন (কার্ড) আওতায় আসতে পারেনি। প্রকৃত জেলেরা খাদ্য সহায়তা থেকে বাদ পড়েছে অনেকে। অপেশাদার অনেকে নাম রয়েছে জেলেদের খাদ্য সহায়তার তালিকায়। অবরোধকালিন ২২ দিনে সরকারিভাবে মানবিক সহায়তা শুধুমাত্র ২৫ কেজি চালে তাদের সংসার চলছে না। তারা বিকল্প কর্মসংস্থান, ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা সুদে লোন খাদ্য সহায়তার বৃদ্ধিসহ প্রকৃত জেলেদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানান সরকারের প্রতি।
খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বিটুল বিশ^াস বলেন, তার ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী ৪টি গ্রাম জেলে পল্লী। এদেরকে সরকারিভাবে যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয় তা চাহিদা অনুযায়ী অপ্রতুল। প্রতিটি জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তার অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানান উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি।
এদিকে মৎস্য অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলায় ৯ হাজার ৮শ’ ৫০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে সমুদ্রেগামী জেলে ১ হাজার ৭২ জন, ইলিশ মাছ ধরার জেলে ২১শ’ ২৭ জন, জাটকা ধরা থেকে বিরতকারি ৩ হাজার ৪শ’ জন এ সব জেলেদের ৩ ক্যাটাগরিতে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার বলেন, এ উপজেলায় সমুদ্রগামী জেলেরা সরকারি খাদ্যসহায়তার সুবিধার আওতায় রয়েছে। ২২ দিন অবরোধকালিন প্রতিটি জেলে পরিবার ২৫ কেজির চালের বরাদ্দ এসেছে।ঝাটকা বিরতকারি ৩ হাজার ৪শ’ জেলে পরিবার বছরে ২ বার ১৬০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। জেলেদের বিকল্প
কর্মসংস্থানের জন্য ইতোমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গত বছর ৩২ টি বকনা বাছুর প্রদান করা হয়েছে।