চঞ্চল চৌধুরী : শুদ্ধের চেয়ে শুয়ে থাকা এই ডিভানটার বয়স বেশি। গদিটা আগের মতো নরম বা আরামদায়ক নেই। তার পরও স্মৃতিময়, মায়াময় এই আমি, এই আসবাবটিকে আমার মতোই পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রেখে দিয়েছি। কিনেছিলাম ১৫ হাজার টাকায়, এখন মেরামত করতে লাগবে ২২ হাজার টাকা। ঠিক আছে, আরাম দেওয়ার ক্ষমতা কমে গেলেও, কৃতজ্ঞতার খাতিরে তুই আরও কিছুদিন এই পরিবারের সদস্য হিসেবেই থাক। যতোদিন তোর নিয়তি আছে আমার সংসারে। বছর দশেক আগে কোনো এক পত্রিকার সাংবাদিক আমার সত্য জীবন আবিষ্কার করতে এসে এই ছবিটা তুলেছিলেন।
সযতেœ ছবিটা আমি বাঁধিয়ে, টানিয়ে রেখেছি আমার ওয়ালে। ছবিটার দিকে তাকালেই একটা নির্ভরতা আর বিশ্বাসের শব্দ শুনি আমি। যা আমাকে তৃপ্তি দেয়, শান্তি দেয়। হঠাৎ আজ শুদ্ধকে বললাম, বাবা, আসো এই ছবির মতো করে আরেকটা ছবি তুলি। শুদ্ধ একই অজানা বিশ্বাসে আমার শরীরজুড়ে আশ্রয় নিলো এই ছবিতে। তার বিশ্বাসে কোনো কমতি নেই।
কিন্তু তার বুকের স্পর্শে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। তার মা ছবিটা তোলার পর অদ্ভুত এক আনন্দে হাসি দিয়ে বললো, একই রকম হয়েছে, কিন্তু তুমি বুড়া হয়ে গেছো। তোমার সেই চেহারা নেই। সত্যিই তো।
আমি আর সেই আমি নেই। আমার হাসিটা অনেক ম্লান হয়ে গেছে আগের তুলনায়। এই করোনা দুশ্চিন্তা আমাদের সবার চিন্তা, চেতনা, স্বপ্নগুলো ম্লান করে দিচ্ছে। অজানা আশঙ্কায় চোখ দুটো ভিজে উঠে আমার। সময়টা ঠিক রাখার জন্য হেসে উঠি আমি। এই সংকট কবে দূর হবে জানি না। আশা নিয়ে বেঁচে থাকার সময় গুনি। আমরা সবাই এখন এভাবেই বেঁচে আছি বাধ্য হয়ে। কোনো ক্ষমতাই এখন আর আমাদের দোসর নয়। মানবিকতাই সবচেয়ে বড় আশ্রয়। এই গভীর রাতে স্বপ্ন গুনি। সবাই নিরাপদে থাকুক। ভালো থাকুক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :