শিরোনাম
◈ হায়দার আকবর খান রনো মারা গেছেন ◈ ডোনাল্ড লু’র ছয়দিনের সফর শুরু, ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ আসছেন ১৪ মে ◈ লোহাগড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু ◈ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস  ◈ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা চার জয় বাংলাদেশের ◈ বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের তথ্য-ছবি ফাঁস ◈ গাজার রাফাহজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও বোমাবর্ষণ ◈ কোনো ভর্তুকি ছাড়াই নিজস্ব আয় থেকে উড়োজাহাজের মূল্য পরিশোধ করছে বিমান ◈ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে: ওবায়দুল কাদের ◈ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা শেষ, এখন চলবে ফাইজার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:৩১ সকাল
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আমি সেই বাংলাদেশ-ভারতের স্বপ্ন দেখি, যেখানে বর্ডার নেই, সেনা নেই, পুলিশ নেই বা নামে মাত্র আছে, যেদিন ভারত এবং বাংলাদেশের বাঙালির মার্কেট, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একসঙ্গে মিশে যাবে

বিপ্লব পাল : ১. ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেট টিমকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে অদ্ভুত সব মন্তব্যের সম্মুখীন হলাম। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালি এবং বাংলাদেশের মুসলমান বাঙালিদের অনেকেই আমাকে জানালেন, আমি বৃথাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ আনছি। কারণ বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ইসলামিক নেশন। বাঙালিত্ব দেশটির ভিত্তি নয়। অবশ্যই সব হিন্দু এবং মুসলমান বাঙালি এই মত পোষণ করেন না। কিন্তু যে জাতি বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে নতুন দেশ ছিনিয়ে নিলো, তাদের সিটিজেনরা, ভারতের সিটিজেনদের অধিকাংশই যদি মনে করে বাংলাদেশের ভিত্তি বাঙালি জাতিগোষ্ঠী নয়, তাহলে হয় আমি অন্ধকারে আছি না হলে তারা ঘৃণার রাজত্বে বাস করছে।

২. ধর্মের যে উৎপাত বাংলাদেশ এবং ভারতে দেখা যাচ্ছে সেটা বেশিদিন থাকবে না। খুব বেশি হলে আরেক প্রজন্ম। কারণ সেই অটোমেশন। আসলে কৃষিভিত্তিক সমাজে উত্তরণের পর আমাদের সিস্টেমটা এমনভাবে তৈরি এখানে একদম নিরেট মাথামোটা, মানে যাদের আইকিউ ৮০-এর নিচে, তারাও চাকরি পায়। কোনো না কোনোভাবে করে খেতে পারে। এই ব্যাপারটা আর থাকবে না। আস্তে আস্তে চাকরি বা পেশার বিবর্তনটাই এমনভাবে হবে শুধু যারা চিন্তা করতে পারে, কবিতা গল্প লিখতে পারেÑ সৃজনশীল লোকজন তারাই করে খেতে পারবে। কারণ বাকি কাজ করবে সফটওয়্যার-রোবট-নানাবিধ বট। আমরা আলরেডি সেই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা যারা এই লাইনে আছি তারা এটা এখন বুঝছি। বাকিরা আস্তে আস্তে বুঝবে। ফলে ‘মার্কেটের’ নিয়মেই স্বাধীন চিন্তার লোকজনের চাহিদা বাড়বে হু হু করে।

এখন মার্কেটের চাহিদা এই যে ভারত-বাংলাদেশের লোকজন ধর্মপ্রাণ হোক। কারণ এই মার্কেট ব্ল লেবার মার্কেট। সস্তা লেবারের মার্কেট। এখানে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বুদ্ধীজীবী, কবি আসলে সবাই ক্লার্ক। তারা ধার্মিক হবে এতে আশ্চর্য কী। স্বাধীন চিন্তা কাউকে করতে হয় না। আস্তে আস্তে সেটা বদলাচ্ছে চোখের সামনেই। কৃষি, টেক্সটাইল, সব শিল্পেই অটোমেশনের জন্য লেবারদের চাহিদা কমছে। আগে ভারতে আইটির কাজ মানে তৃতীয় শ্রেণির মেইন্টেন্যান্সের কাজ ছিলো। আইটি কুলির কাজ। বর্তমানে প্রচুর উন্নত স্টার্টাপ তৈরি হচ্ছে। চাহিদা আছে টালেন্টেড লোকদের। যোগান নেই। মার্কেটে ভ্যাকুয়াম থাকে না। ট্যালেন্টেড লোকদের চাহিদা থাকলে উৎপাদনও হবে। সুতরাং ম্যান পাওয়ারের এই বিপ্লব অথবা বিবর্তন সাধিত হলে বাংলাদেশ এবং ভারতে ধর্মের এই প্রাবল্য ফিকে হতে বাধ্য। কতোদিন লাগবে সেটা প্রশ্ন। ২০ বছরও হতে পারে, ৫০ বছরও লাগতে পারে। কিন্তু এটা হবেই।

৩. এখন একটা প্রশ্ন উঠে যে ভারত-বাংলাদেশে ডাক্তার, ইঞ্জিয়ার, বিজ্ঞানীদের মধ্যেই ধর্মের প্রাবল্য বেশি। তথ্য বলে, ভারতের ৫৪ শতাংশ বিজ্ঞানী ধর্মে বিশ্বাসী। মুসলমান বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই সংখ্যাটা ৯০ শতাংশ। আবদুস সালামের মতো পদার্থবিজ্ঞানীও ধার্মিক ছিলেন। তাহলে কী গ্যারান্টি আছে যে যতো উন্নত ম্যানপাওয়ারের দরকার হবে, ততো ভারত বাংলাদেশের লোকজন নির্ধামিক হবে? এর উত্তর অনেক ভাবেই দেওয়া যায়। প্রথমত আমেরিকাতে বিজ্ঞানীদের ৯৫ শতাংশ + নিধার্মিক বা ঈশ্বর বিশ্বাসী নয়। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশে এর উল্টা। এর কারণ সার্বিক সমাজ। এখানে নিধার্মিক হলে সমাজে ‘ফিট’ করা মুশকিল। কারণ গোটা সমাজটার নির্মাণই হয়েছে ধর্মের উপরে। অর্থাৎ ‘ধার্মিক’ হও বা না হও, ভারত বাংলাদেশে ধর্মিক দেখানোর একটার ‘পজেটিভ’ ইকোনোমিক ভ্যালু আছে। নির্ধামিক হওয়াটা মুসলিম দেশগুলোতে চূড়ান্ত নেগেটিভ ইকোনোমিক ইনটেন্সিভ। দ্বিতীয়ত শিক্ষা ব্যবস্থা। ঈশ্বরে, ধর্মে বিশ্বাস সেদিন যাবে যেদিন ‘প্রশ্ন’ করার সাহস পাবে। এই উপমহাদেশে ক্লাসে প্রশ্ন করলে ছেলেদের ঠাং ভেঙে দেওয়া হয়। অঙ্ক ভুল করলে মারা হয়। ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের মাথায় অসংখ্য ভীতি ঢোকানো হচ্ছে অঙ্ক ভুল করার ভয়, বানান ভুলের ভয়, পরীক্ষায় ফেল করার ভয় এতো ভয়পূর্ণ যাদের মাথা তাদের মাথায় ভূত এবং ভগবান যে স্থায়ী বাসিন্দা হবেন তাতে সন্দেহ নেই। তৃতীয় হচ্ছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা মানুষকে শাসন করতে ধর্মের চেয়ে ভালো টুল আর নেই।

অটোমেশনের সামনে এর তিনটেই আস্তে আস্তে ডাইল্যুউট হবে। স্বাধীন চিন্তার লোকেদের কদর বাড়বে, কারণ মার্কেট। শিক্ষা ব্যবস্থা ভীতিপূর্ণ হলে সৃজনশীল উচ্চ চিন্তার মানুষ কোত্থেকে আসবে? ফলে সেখানেও সংস্কার, আজ না হলে কালকে হবে। মার্কেটের চাপেই হবে। আর যতো অটোমেশন আসবে আস্তে আস্তে রাষ্ট্রের ভূমিকাও আস্তে আস্তে অনেক কমবে। ভারত এবং বাংলাদেশের ব্যবসা এবং মার্কেটের অনেকটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। মার্কেট রেগুলেশনে অটোমেশন এসে গেলে (যা আসছে) রাজনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা কমবে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এ সবের নীট ফল, রাষ্ট্রের প্রয়োজন কমবে। ফলে ধর্মের দরকারও কমবে। ভারত এবং বাংলাদেশের ধর্মের এতো বাড়বাড়ন্তের মূল কারণ রাষ্ট্র এবং যারা রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করতে উৎসুক। তারাই পয়সা দিয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঘৃণা চাষ করে। সবাই যাতে নিজেকে হিন্দু-মুসলমান হিসেবে গর্বিত মানুষ ভাবে, সেটাও পয়সা দিয়ে ‘ম্যানুফাকচারড’। অধিকাংশ মানুষ সেটা বোঝে না। কারণ শিক্ষা-মিডিয়া এখন স্যোশাল মিডিয়া-পুলিশ-আমলা এ সব কিছুর দখল নিয়ে এ সব ঘৃণা তৈরি করা হয়। দুই দেশে একই অবস্থা।

আপনি বলবেন কেন? বাইবেল, ইসলাম, হিন্দু ধর্ম সর্বত্রই ঘৃণার প্রচুর ছত্র আছে। সেখান থেকেই লোকে শিখছে। এটা ভুল ধারণা। কোরআন-গীতা কেউ পড়ে না আর পড়লেও তা বোঝার ক্ষমতা খুব কম লোকের আছে। ফলে ধর্মের ন্যারেটিভও পয়সা দিয়েই তৈরি হয় ক্ষমতা দখলের জন্যই। কালকে যদি বাংলাদেশের সরকার বলে ইসলাম মানে এই এই এইÑ তাহলে সেই দেশের ইসলাম তাই হবে। কোরআনে কী আছে তা কেউ দেখবে না। মোল্লারাও নয়। কারণ শহীদ হওয়ার ইচ্ছা তাদেরও নেই। সুতরাং ধর্ম আসলে কী ধর্ম বলতে লোকে কী বুঝবে সেটাও রাষ্ট্র আর মার্কেটই ঠিক করে দেয়। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দুর্বল করতে না পারলে ধর্ম দুর্বল হবে না। ৪. আমি সেই বাংলাদেশের-ভারতের স্বপ্ন দেখি যেখানে বর্ডার নেই, সেনা নেই, পুলিশ নেই বা নামে মাত্র আছে। রাষ্ট্র দুর্বল। ফলে ধর্মও দুর্বল। কিন্তু মানুষ সবল। সেটা ২০৩০ হতে পারে, ২০৫০ হতে পারে। কিন্তু হবেই। যেদিন ভারত এবং বাংলাদেশের বাঙালির মার্কেট, শিক্ষা, সংস্কৃতি একসঙ্গে মিশে যাবে। ধর্ম নিয়ে লোকজন বৃথায় চিন্তা করছে। ওইসব আর বেশিদিন থাকবে না। শুধু মার্কেটকে তার নিজের হাতে ছেড়ে দিন। মার্কেট তার নিজের প্রয়োজনে, নিজের বিবর্তনেই ধর্মকে ডাইল্যুট করবে। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়