দীপক চৌধুরী : ছাগল ছিনতাইয়ে জড়িত ছাত্রলীগ, ডেঙ্গুর প্রকোপ, মিরপুরের ঝিলপাড়া বস্তির দেড়কোটি টাকা ভাগাভাগি, চামড়া নিয়ে নানাকথা এখন বাজারে। এর মূলে যা পাওয়া গেলো তা ভয়ঙ্কর। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধাবাদীদের এখন পোয়াবারো। এর মধ্যেই কেউ কেউ বিশুদ্ধ মশকরায় নেমেছেন। অবশ্য মশকরা, জোকার, ম্যাজিক মানুষকে আনন্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু এর তো সময়-গময় বিবেচনা করা উচিত। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক মন্তব্য করেছেন, ‘মওদুদরা এদেশের জিনিয়াস এভিল।’ শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বলেছেন, ‘বিএনপি চামড়া কিনে ফেলে দিয়েছে’। শোকের মাস আগস্টে একটু সংযম আশা করে বাঙালি। কিন্তু এই মাসেও অনেকের কণ্ঠে লাগামহীন উচ্চারণ শোনে অবাক হই। পাল্টাপাল্টি দোষারপ করার প্রবণতা কোনোভাবেই কমছে না। বিএনপি-জামায়াত বড় ধরনের ষড়যন্ত্র করছে এটা সত্যি। কিন্তু সস্তা উচ্চারণ আর অভিযোগ বিবেকবান মানুষকে বিস্মিত করে। লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সকল অনুভূতি, ত্যাগ, সংগ্রাম, অদম্য স্পৃহা, দৃঢ় প্রত্যয়, বাঙালি জাতির জন্য, মানুষের জন্য। মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা, ছিল তাঁর মমত্ববোধ। কিন্তু এখন চারদিকে তো কেবল জিনিয়াস এভিল দেখছি।
বিএনপির বড় বড় নেতারাও চামড়া ব্যবসায় জড়িত, বিএনপির আমলে এই চামড়া বেচা-কেনা নিয়ে খুনোখুনি হওয়ার রেকর্ডও আছে অনেক। তাই তাদের কারসাজি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু দেখলাম চামড়ায়ও বিএনপি খুঁজছেন শিল্পমন্ত্রী। এ সব দেখা এবং নিয়ন্ত্রণ করা কী মন্ত্রীর ও দায়িত্ববানদের নয়! বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিজেই একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। গত বছর চামড়ার দাম আশঙ্কাজনকভাবে নেমে যায় আর এ বছর যা হয়েছে অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়েই। এরপরও তিনি কেন নীরব ছিলেন? যারা এসব কারসাজি করেছে, তাদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। চামড়ার দাম কমে যাওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তাহলে সরকার জিনিয়াস এভিলদের থামালো না কেন? ব্যবসায়ীরা কারসাজি করবে আর সরকারের সংশ্লিষ্টরা আঙ্গুল চুষবে নাকি? ঝিলপার বস্তিতে আগুনের পর অনেকে ঘটনা জানা গেছে। তারা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির টাকা ঠিকই দিতেন। কিন্তু সেখান থেকে দেড় কোটি টাকা তুলে ভাগাভাগি করা হতো স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের মধ্যে। এরচেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে? কোরবানির ঈদের আগে ছাগলবোঝাই একটি ট্রাক ছিনতাই করে পাঁচ ব্যাপারীকে ১৩ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখার অভিযোগে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি যেমন গুরুতর, তেমনি লজ্জাজনকও। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ওই ব্যবসায়ীরা যশোর থেকে ২১২টি ছাগল নিয়ে ঢাকায় এলে ওয়াকিটকিধারী ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বলে দাবি করেন এবং ছাগল বহনকারী ট্রাক আটক করে মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লার একটি ক্লাবঘরে নিয়ে যান। তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করেন। ১৩ ঘণ্টা জিম্মি থাকার পর এলাকায় টহলরত র্যাব সদস্যরা ২১২টি ছাগলসহ ট্রাকটি জব্দ ও ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করেন। কী ভয়ঙ্কর সর্বনাশা কথাবার্তা। এবার সরাসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ভাঙিয়ে ওয়াকিটকি ব্যবহার করে যে কাজটি তারা করলেন, সেটি পেশাদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এরপরও পুলিশ র্যাব নীরব থাকে কীভাবে? লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :