আজিজুর রহমান আসাদ: ‘বিশ্ব বই ও গ্রন্থস্বত্ব (কপিরাইট)’ দিবস, ২৩ এপ্রিল। বিশ্ব পুস্তক পাঠ দিবস। ‘বই পড়া’ দিবস। জ্ঞান আহরণ দিবস। সাহিত্য পাঠ দিবস। বই পড়ার সাথে জীবনচর্চার একটি সম্পর্ক আছে। আমি বই পড়ে পণ্ডিত বা বিপ্লবী হওয়ার কথা বলছি না। আজকাল আমরা যাকে ‘সিম্পল লিভিং, হাই থিংকিং’ বলি, ইদানীং অন্যভাবে বলা হয় ‘মিনিমালিস্ট’ জীবনচর্চা। বই পড়ার সাথে সম্পর্ক এই মিনিমালিস্ট জীবনচর্চার। মিনিমালিস্ট জীবনচর্চা কী? আগে আমার এক বন্ধুর মেয়ের মিনিমালিস্ট জীবনচর্চার উদহারন দেই। বাবা বাঙালি মা জার্মান। মেয়েটি ঢাকা এসেছে বাবার সাথে মাসখানেক থাকতে, একটি মাত্র টি-শার্ট নিয়ে। এসে বাবার জামা পরেছে পুরোটা সময়, যখন বাংলাদেশে ছিল। যাওয়ার সময় কাপড়গুলো ধুয়ে বাবাকে ফেরত দিয়েছে। অপত্যস্নেহে বাবা কন্যাকে জামাগুলো নেয়ার জন্য বলেছিল। মেয়েটি নেয়নি। কারণ তার ‘প্রয়োজন’ ফুরিয়েছে।
মিনিমালস্ট হচ্ছে, জীবনের ‘প্রয়োজন’ ও ‘লোভ লালসার’ পার্থক্য বোঝা। বুঝে জীবনের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য কাপড়, খাবার, বাসস্থান, ইত্যাদি পছন্দ করা। সম্পদ ফুটানির জন্য, লোক দেখানোর জন্য, বা লোভের জন্য নয়, কিংবা ‘ব্যক্তি মালিকানা’ প্রতিষ্ঠা করার জন্যও নয়। আমার ‘সাম্যের স্বপ্ন’ উপন্যাসে একটি চরিত্র মনে করে, অন্তর্বাস ও ল্যাপটপ ছাড়া আর কিছুর ব্যক্তিমালিকানা থাকা উচিত না। মিনিমালিস্ট জীবন একদিকে সিম্পল লিভিং এবং অন্যদিকে বইপড়া থেকে আনন্দ সংগ্রহ করে বলে ‘হাই থিংকিং’ও বটে।
তবে প্রধান বিষয় সুখ। এদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো। কারণ লোভ লালসা মুক্ত থাকায় অযথা মানসিক চাপ নিতে হয় না। কাউকে দেখানোর কিছু নেই, প্রমাণ করার কিছু নেই। কেন আজ মিনিমালিস্ট জীবনচর্চা গুরুত্বপূর্ণ? এককথায়, পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। আজ পুঁজিবাদী উৎপাদন ও ভোগলিপ্সা যে মাত্রায়, ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন যে দ্রুত হারে ‘টিপিং পয়েন্ট’ এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেটিকে রুখতে হলে ব্যক্তিউদ্যোগ ও গণউদ্যোগ দরকার। যদি আমরা ব্যক্তিউদ্যোগে ‘মিনিমালিস্ট’ জীবনচর্চা শুরু করি, কী ভোগ করব, কী কিনব বা কীনব না নির্বাচন করি, তাহলে পৃথিবী বাঁচবে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বাঁচবে।
বই আপনার মিনিমালিস্ট জীবনচর্চার একটি অন্যতম উপাদান। আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও বই পড়ার বিকল্প নেই। আপনি নিজেই আপনার কগনিটিভ থেরাপিস্ট, সহায়তা করতে পারেন বন্ধুদেরও। বই পড়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা, আপনি যখন অন্ধবিশ্বাসী, অথবা যখন সবজান্তা। বই পড়া নিয়ে মাও সে তুং এর একটি উক্তি আছে। ‘আত্মতুষ্টি’ হচ্ছে জ্ঞানঅর্জন বা বই পড়ার প্রধান বাঁধা। মানে, নিজেকে সবজান্তা ভাবার ‘আত্মতুষ্টি’। গাছ লাগান, তা পৃথিবীর জন্য উপকারী। কিন্তু তার চেয়েও বেশি উপকারী আপনার ‘মিনিমালিস্ট’ জীবনচর্চা। লোভ লালসা বর্জিত, ব্যক্তি মালিকানা বর্জিত, দায়িত্বশীল জীবনবোধ প্রসূত। পুস্তক পাঠ হোক আপনার আনন্দের একটি উৎস। লেখক: গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :