আশরাফুল হক : আমরা গরিব দেশের মানুষ, এতো পয়সা খরচ করে ওদের দেশে যাবো কেন? ওদের অনেক পয়সা, ওরা এসে আমাদেরটা দেখে যাক।Ñযামিনী রায়। বাঙালি এ চিত্রশিল্পী বাংলার বিখ্যাত লোকচিত্র ‘কালীঘাট পটচিত্র’ শিল্পকে বিশ্বনন্দিত করে তোলেন। পটুয়া না হয়েও তিনি নিজেকে পটুয়া হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করতেন।
যামিনী রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ১১ এপ্রিল এক মধ্যবিত্ত বাঙালি জমিদার পরিবারে, জন্মস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রাম।
১৯০৬ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত যামিনী রায় কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতিতে পড়াশোনা করেন। আর্ট স্কুলে ইতালীয় শিল্পী গিলার্দি ও পরে অধ্যক্ষ পার্সি ব্রাউনের সান্নিধ্যে তিনি প্রাচ্য-প্রতীচ্যের শিল্পের কলা-কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হন। ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতি শিখলেও শেষ পর্যন্ত দেশজ সরল রীতিতেই আঁকতেন তিনি। প্রথমদিকে বিদেশি ভাবধারায় আঁকলেও পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ দেশীয় তথা গ্রামবাংলার প্রতিরূপ তার ছবিতে ফুটে উঠেছিলো। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তার লক্ষ্যে তিনি লোক ও নৃ-গোষ্ঠীদের সংস্কৃতি বেছে নেন। নিজস্ব বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাবধারার জন্য তিনি গর্বিত ছিলেন। তিনি নানা সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণ পেলেও কখনও বিদেশে যাননি।
বাংলার লোকজ পুতুল, শিশু, গ্রাম বাংলার সরল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখের চিত্র তার চিত্রে আঙ্গিক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তিনি বিষয় হিসেবে বেছে নেন গ্রাম বাংলার সরল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখের চিত্র, ধর্মাশ্রয়ী কাহিনী যেমন : রামায়ণ, শ্রীচৈতন্য, রাধা-কৃষ্ণ ও যিশু। এছাড়া বেলিয়াতোড় গ্রামের আশপাশের গ্রামগুলোর সাঁওতালদের জীবনের চিত্ররূপও ‘সাঁওতাল জননী ও শিশু’ ‘মাদলবাদনরত সাঁওতাল’, ‘নৃত্যরত সাঁওতাল’ ইত্যাদি। বর্ণাঢ্য রঙ ও ছন্দময় রেখার ঐকতানে চিত্রে তিনি এক নিজস্ব ভাবের উন্মেষ ঘটাতেন।
যামিনী রায় ১৯৫৪ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পান, ১৯৫৫ সালে পান চারুশিল্পের শ্রেষ্ঠ সম্মান ‘ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার’। বরেণ্য চিত্রশিল্পী যামিনী রায় ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল কলকাতায় মারা যান। ফেসবুক থেকে