ডেস্ক রিপোর্ট : সিনেট, রেজিস্ট্রার গ্রাজুয়েট, শিক্ষক প্রতিনিধিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অংশের যথা নিয়মে নির্বাচন হলেও হচ্ছে না ছাত্র সংসদের নির্বাচন। ছাত্র সংসদ নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের অংশীদার বললেও এ বিষয়ে কার্যত উদ্যোগ নেই কারও। হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার নির্দেশ দিলেও এ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষেরও।
‘যথারীতি হবে’ বলেই দায়িত্ব শেষ করে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অন্যরাও ‘কর্তৃপক্ষের’ দোহাই দিয়ে দায় সারছেন। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলও এ বিষয়ে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) আগামী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভিসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশনা ইতোমধ্যে ঢাবির কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছেও। কিন্তু এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা।
খবর নিয়ে জানা গেছে, এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাথায়ও নেই। তারা এ নিয়ে ভাবছেনও না।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাবির আইন উপদেষ্টার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা দেয়ার পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের কর্তৃপক্ষের মনোভাব জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে কোনো আপিল করবেন কি-না বা পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এখনই আপিল নয় বলে জানিয়েছে।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত ২০ বছরে ছয়জন অধ্যাপক উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন কিন্তু কেউই ডাকসুর নির্বাচন দেননি। তেমনি এ উপাচার্যও দেবেন না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইনামুজ্জামান বলেন, ‘কোর্টের রায় আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে আইন বিভাগ বলছে, আমাদের কাজটি রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তারাই করছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলরা দেখছেন। বাস্তবায়নের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘ডাকসু শুধু নয়, সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হোক এটা আমরা চাই।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, নির্বাচন হোক আর না হোক। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকই অঘোষিত ভিপি-জিএস। এজন্য তাদের মধ্যেও তেমন আগ্রহ নেই। বরং জাতীয় রাজনীতি ও ক্ষমতার চেয়ার ধরে রাখার স্বার্থে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো শান্ত রাখতে চান। আর নির্বাচন দিলে সেটি হবে না, পরিবেশ অশান্ত হবে বলে তাদের ধারণা। এজন্য এড়িয়ে চলছেন।
১৯৯১, ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে তিন দফায় তফসিল ঘোষণা করলেও নির্বাচন হয়নি। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রদল নেতা আরিফ হোসেন তাজ খুনের পর একটি তদন্ত কমিটি ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার সুপারিশ করলেও সেই ছয় মাস আসেনি ২০ বছরেও। ২০০৫ সালের মে মাসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ ওই বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণার পর ছাত্র সংগঠনগুলো নড়েচড়ে বসে। ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে একাধিকবার মিছিল সমাবেশ এবং ভিসির কাছে স্মারকলিপিও দেয়। তবে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো এগিয়ে আসেনি।
সর্বশেষ ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থীর করা একটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলার যাবতীয় সহায়তা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশ দেন আদালত। পরিবর্তন