শিরোনাম
◈ মালদ্বীপ থেকে সব সেনা সরিয়ে নিয়েছে ভারত ◈ গাজায় বোমা হামলা, চার ইসরায়েলি সেনা নিহত ◈ হায়দার আকবর খান রনো মারা গেছেন ◈ ডোনাল্ড লু’র ছয়দিনের সফর শুরু, ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ আসছেন ১৪ মে ◈ লোহাগড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু ◈ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস  ◈ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা চার জয় বাংলাদেশের ◈ বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের তথ্য-ছবি ফাঁস ◈ গাজার রাফাহজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও বোমাবর্ষণ ◈ কোনো ভর্তুকি ছাড়াই নিজস্ব আয় থেকে উড়োজাহাজের মূল্য পরিশোধ করছে বিমান

প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:১৮ সকাল
আপডেট : ০৪ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উন্নয়নের মহাসড়কে মানুষের ভোগান্তি

ফাহমিদা হক : বিশ্ব যখন পারমাণবিক ক্ষমতার দাম্ভিকতায় হুঙ্কার ছড়িয়ে দিচ্ছে, এদেশের মিডিয়ায় তখন ১২ বছরের কণিকার ভাতের অভাবে আত্মহত্যার খবর আসে। কাগজের পাতা ভরে আসে আর্থিক সংকটে একই পরিবারের তিনজনের বিষপানে আত্মহত্যার সংবাদ, কিছু মানুষের স্বচ্ছলতা আর সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি মানেই এদেশের আপামর জনগনের ভাগ্য পাল্টে যাওয়ার গল্প নয়। সমাজের সর্বস্তরের জনগনের চাপা ক্ষোভের কাছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের সফলতার, স্বচ্ছলতার, এগিয়ে যাওয়ার গল্প কোনোরকম স্বস্তি দেওয়া দূরে থাক অস্থিরতা, হতাশা আর মানবিকতার অবক্ষয়কে উসকে দিচ্ছে। সরকার বলছে, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই মহাসড়কে নাগরিকের জীবেনযাত্রা কেমন চলছে?
জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বল্পআয়ের মানুষ, বেঁচে থাকার নুন্যতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে অস্থির হয়ে উঠছে মানুষের আচার আচরণ, মানবিক অবক্ষয় বেড়েই চলছে, সেই সাথে বাড়ছে মানুষের হতাশা। আর যে কোনোরকম হতাশা থেকেই ঘটে থাকে নানারকম অঘটন। আর একটা দেশের সকল জনগণের মৌলিক চাহিদা রক্ষা করার দায়িত্ব যখন সরকারের হাতে তখন যে কোনো অভাব অভিযোগের খেয়াল সরকারকেই রাখতে হবে, সেক্ষত্রে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখেই সকল পরিকল্পনা নিতে হবে, মনে রাখতে হবে সরকারি চাকরিজীবী অল্পসংখ্যক মানুষের বেতন বৃদ্ধি মানেই গোটা দেশের আয় বৃদ্ধি নয়, বরং বর্তমানে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ। বর্তমানে ৬০ টাকা কেজির নিচে খুব কম সবজিই আছে, এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা, চালের দাম কিছুটা কমলেও তা এখনো অনেক বেশি। এছাড়া গত এক বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য কয়েক দিন আগেই শেষ হয়েছে গণশুনানি। একই ভাবে বছর বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাড়ি ভাড়া। সেই সাথে বাড়ির মালিকদের সাথে ভাড়াটের দ্বন্ধ তো আছেই। সন্তানদের স্কুলের বেতন- ভাতাও বেড়েছে। এ অবস্থায় নি¤œবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তদের মধ্যেও হতাশা বাড়ছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের ভারসাম্য রাখতে কাটছাট করতে হচ্ছে প্রতিদিনের বাজার তালিকা। কিন্তু আমাদের আয় কি সেই হারে বেড়েছে? তারা বলছেন, ব্যয় এতোটাই বেড়েছে যে জীবন চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

টিসিবি- এর হিসেবে উল্লেখযোগ্য নিত্যপন্যের মধ্যে বর্তমানে মোটা চাল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা, সরু চাল ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা, আটা ২৮ থেকে ৩৪ টাকা, ময়দা ৩৪ থেকে ৪৪ টাকা, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১০৪ থেকে ১০৯ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৮৫ টাকা, গরুর মাংস ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসেবে গত আট বছরে (২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল) রাজধানীতে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৭১ শতাংশ। এই হিসেব ১১৪টি খাদ্য পন্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবার তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত ব্যয় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এদিকে দেড় বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত মার্চ মাস থেকে কার্যকর হয় এ দাম। বর্ধিত দর অনুযায়ী আবাসিক গ্রাহকদের বর্তমানে সিঙ্গেল চুলার জন্যে ৭৫০ টাকা এবং ডাবল চুলার জন্যে ৮০০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আগে যা ছিল ৬০০ ও ৬৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি, ৬০ শতাংশ, বাড়ানো হয়েছে মিটার ভিত্তিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম। এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। বিবিএস এর সর্বশেষ হাল নাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২১ ভাগ, শহরে এই হার ৫ দশমিক ৯৫ ভাগ। দেশের সার্বিক মূল্য স্ফীতির হার ৬ দশমিক ২ ভাগে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়টি স্বীকার করে, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অতি বৃষ্টির জন্য খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘিœত হয়েছে, ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। চলতি মাস থেকে তা কমে আসবে। আমরা উনার দেওয়া আশায় আশান্বিত হতে চাই। দেশে বন্যা, অতিবৃষ্টি, তার উপর বর্তমান সময়ে যুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা, সবমিলিয়ে এই সময়ে দেশের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে, জিনিষ পত্রের দাম বেড়েই চলছে, তবে যে হারে বাড়ছে তাতে সরকারের কঠোর তদারকি করা উচিত। কারণ এ সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অযথা দাম বাড়িয়ে সুযোগ নিচ্ছে। এভাবে সব কিছুর দাম বেড়ে সীমা ছাড়িয়ে মানুষের দুর্গতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠবে। আর অবিলম্বে এর মোকাবেলায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পুরো পরিস্থিতি একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমরা আশা করি, বাজার-গুদামের নিয়মিত মনিটরিং, মজুতদার- মুনাফাখোর ও অসৎ সিন্ডিকেট দমনসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাও অবিলম্বেই গ্রহণ করা হবে, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকুক আর গণমানুষের নিত্য দুর্ভোগ কমে আসুক।

লেখক : পরিচালক, সিসিএন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়