বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ ম্যাগাজিন: গত জন্মদিনে তুমি কী উপহার পেয়েছিলে মনে আছে? কিংবা গত সপ্তাহে মজার কী খাবার খেয়েছিলে? সবকিছু স্পষ্ট মনে না থাকলেও কিছু কিছু নিশ্চয়ই মনে আছে। কারণ, তোমার মাথায় আছে মস্তিষ্ক। এই মস্তিষ্ক সবকিছু মনে রাখে। কিন্তু গাছের তো মস্তিষ্ক নেই! তাহলে গাছের কি কিছুই মনে থাকে না? শুনলে অবাক হবে, গাছেরও একধরনের স্মৃতিশক্তি আছে!
গাছের স্মৃতি আসলে কী
আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে একধরনের ঘাস আছে। সে গাছ আগুন দেখলে মোটেও ভয় পায় না। দাবানলে যখন সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তখনো সেই ঘাসগুলো মরে না। খুব তাড়াতাড়ি মাটির নিচ থেকে নতুন পাতা বের করে আবার সবুজ হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, এর পেছনের রহস্যটা জানতে চাইলেন। তাঁরা গবেষণা করে দেখলেন, ঘাসগুলোর বারবার আগুনে পোড়ার অভিজ্ঞতা আছে। মানে ওই ঘাসগুলো আগেও অনেকবার আগুনে পুড়েছে। তাই ওগুলো বেশির ভাগ শক্তি মাটির নিচে থাকা শিকড়ের মধ্যে জমা করে রাখে। আগুন নিভে গেলেই সেই জমানো শক্তি ব্যবহার করে আবার দ্রুত বেড়ে ওঠে। যেন ঘাসগুলো আগুন লাগার কথা ‘মনে’ রাখতে পারে।
আসলেই ঘাসগুলো পুড়ে যাওয়ার স্মৃতি মনে রাখতে পারে কি না, তা বলার আগে আরেকটা মজার গল্প বলি। জিরাফ যখন আফ্রিকার অ্যাকাসিয়া গাছের পাতা খায়, তখন গাছটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে না। আক্রান্ত পাতাগুলো থেকে গাছটি একধরনের গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। সে গ্যাসের নাম ইথিলিন। এ গ্যাসটা হলো একধরনের ‘সতর্কসংকেত’। আশপাশের অন্য অ্যাকাসিয়া গাছগুলো যখনই এই গ্যাসের গন্ধ পায়, তারা বুঝে যায় যে বিপদ আসছে। আর মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই ওগুলো নিজেদের পাতার ভেতর ট্যানিন নামে একধরনের তেতো রাসায়নিক তৈরি করে ফেলে। ফলে জিরাফ আর সেই পাতাগুলো খেতে পারে না। এটাও তো গাছের একধরনের স্মৃতিশক্তি, তাই না? নাহলে বিপদে পড়লেই পাতাগুলো গ্যাস ছাড়তে পারত না।
গাছের স্মৃতি কীভাবে কাজ করে
বিজ্ঞানীরা গাছের এই অদ্ভুত স্মৃতিশক্তিকে বলেন ‘এপিজেনেটিক পরিবর্তন’। শব্দটা একটু কঠিন শোনালেও বিষয়টা সহজ। ধরো, তোমার কাছে একটা গল্পের বই আছে। বইয়ের গল্পের নাম ডিএনএ। এখন তুমি যদি গল্পের কোনো গুরুত্বপূর্ণ লাইনের নিচে দাগ দিয়ে রাখো বা কোনো পাতা একটু ভাঁজ করে রাখো, তাহলে কিন্তু গল্পটা বদলে যাচ্ছে না। কিন্তু পরেরবার পড়ার সময় তোমার ঠিকই মনে পড়বে কোন শব্দ বা লাইনটা গুরুত্বপূর্ণ।
এপিজেনেটিকসও ঠিক সে রকম। গাছের ডিএনএ বদলে যায় না, কিন্তু পরিবেশের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে ডিএনএর কিছু নির্দেশনা চালু বা বন্ধ হয়ে যায়। এই দাগ বা চিহ্নগুলোই হলো গাছের ‘স্মৃতি’।
সবচেয়ে অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, গাছেরা এই স্মৃতি তাদের সন্তানদেরও দিয়ে যেতে পারে! নরওয়ের বিজ্ঞানীরা একধরনের পাইনগাছ (নরওয়ে স্প্রুস) নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, যে গাছগুলো ঠান্ডা পরিবেশে বড় হয়েছে, সেগুলো এই স্মৃতি মনে রাখে। আর বীজের মধ্যেও সে স্মৃতি পাঠিয়ে দেয়! ফলে পরের প্রজন্মের গাছগুলো আগে থেকেই জানে, ওদের খুব তাড়াতাড়ি বসন্তে নতুন পাতা বের করতে হবে। ঠিক যেন বাবা-মা তাদের সন্তানদের বিপদের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে!
অর্থাৎ ব্রেন বা মস্তিষ্ক না থাকলেও গাছেরও কিন্তু দারুণ স্মৃতিশক্তি আছে। এরা বিপদ মনে রাখে, একে অপরকে সতর্ক করে, এমনকি নিজেদের অভিজ্ঞতা পরের প্রজন্মের কাছেও পাঠিয়ে দেয়। প্রকৃতি সত্যিই অবাক করার মতো, তা–ই না?
অনুবাদ: কিশোর আলো