শিরোনাম
◈ ট‌রে‌ন্টো‌তে হোঁচট খে‌লো মেসির ইন্টার মায়া‌মি ◈ ব্রিটিশ মেয়রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি আত্মীয়-স্বজনের জন্য ‘ভিসা জালিয়াতির’ অভিযোগ ◈ বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ গ্রহণে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করল আইএমএফ ◈ বেনজীরের অর্থপাচার মামলায় মার্কিন নাগরিক এনায়েত ৪ দিনের রিমান্ডে ◈ প্রকাশ্যে নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী, বললেন দেশ ছেড়ে পালাব না ◈ ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট ছাপানো নিয়ে বিতর্ক, যা বললেন উপাচার্য ◈ জনসভায় মৃত্যুর রোল, অবশেষে মুখ খুললেন থালাপতি বিজয় ◈ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক এগিয়ে নিয়েছি: সিইসি ◈ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা, করা হলো সতর্ক ◈ ড. ইউনুসের কথা শুনে মনে হয়েছিলো, আমি জিয়াউর রহমানের কথা শুনাছিলাম: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:২২ দুপুর
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্রিটিশ মেয়রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি আত্মীয়-স্বজনের জন্য ‘ভিসা জালিয়াতির’ অভিযোগ

লন্ডনের এনফিল্ড কাউন্সিলের মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪১ জন আত্মীয়–স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জন্য ভিসা আদায়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ তথ্য। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমটি জানায়, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজের পদমর্যাদা ও কাউন্সিলের অফিসিয়াল লোগো ব্যবহার করে একাধিক ভিসা আবেদনকে “বিশেষভাবে বিবেচনা” করার জন্য ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে চিঠি পাঠান। সূত্র: টেলিগ্রাফ

টেলিগ্রাফের হাতে আসা চিঠিগুলোতে দেখা যায়, আমিরুল ইসলাম ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের কর্মীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন—তার আত্মীয়–স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ভিসা আবেদন যেন দ্রুত ও সহজে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন তারা মেয়র পদে অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তারা। এসব চিঠির কিছু ছিল অফিসিয়ালভাবে পাঠানো, আবার কিছু তিনি নিজেই জালিয়াতি করে পাঠিয়েছিলেন, যাতে সেগুলো অফিসিয়াল চিঠির মতো দেখায়।

২০২৪ সালের মে মাসে ব্রিটিশ হোম অফিস এনফিল্ড কাউন্সিলকে জানায় যে ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাস কিছু সন্দেহজনক চিঠি পেয়েছে। এরপর কাউন্সিল একটি ১৬০ পৃষ্ঠার গোপন তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মেয়র হওয়ার আগেও আমিরুল ইসলাম এ ধরনের একাধিক চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

তদন্তে উঠে আসে, অনেক চিঠিতে ভিসা প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পাসপোর্ট নম্বর ও জন্ম তারিখের মতো সংবেদনশীল তথ্যও যোগ করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৪১ জনকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র একজন বাংলাদেশি অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

তদন্তে জানা গেছে, মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন, অতীতে এনফিল্ডের যেসব মেয়র দায়িত্বে ছিলেন, তারাও তাদের আত্মীয়–স্বজনদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য মেয়রের দপ্তর ব্যবহার করতেন। সেই নজির অনুসরণ করেই তিনিও একই কাজ করেছেন বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মেয়রের দপ্তর থেকে মোট ১৩টি ভিসা সুপারিশপত্র পাঠানো হয়েছিল। এর বাইরে আমিরুল নিজে আরও ৬টি চিঠি তৈরি ও প্রেরণের কথা স্বীকার করেছেন। বাকি ১১টি চিঠির বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও তদন্তকারীদের ধারণা, সেগুলোর সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

কাউন্সিলের কিছু কর্মকর্তা যখন এসব চিঠি প্রস্তুত করতে অস্বস্তি প্রকাশ করেন, তখন আমিরুল নিজেই এগুলো ‘জাল’ করে পাঠানোর পথ বেছে নেন। এসব চিঠিতে বলা হয়েছিল, ভিসাপ্রার্থীদের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিতি তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে তিনি অতিথিদের সব ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তাদের নিজের বাড়িতে রাখার কথাও উল্লেখ করেন। চিঠিগুলোতে হয় তার নিজস্ব স্বাক্ষর, নয়তো তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছিল।

আমিরুল বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে জন্মেছি এবং মেয়র হওয়ায় আমার পরিবার ও বন্ধুরা গর্বিত ছিল। তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আগ্রহী ছিল। তবে বাস্তবে তাদের কারও ভিসা মঞ্জুর হয়নি।’

তদন্তে বলা হয়েছে, মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের আনতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু আমিরুল ইসলাম ব্যক্তিগত স্বার্থে সেই সীমা অতিক্রম করেছেন। তিনি তার পদমর্যাদা ও ক্ষমতা ব্যবহার করে সুবিধা দিতে চেয়েছেন পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের।

এছাড়া তদন্তকারীরা দেখেছেন, কিছু চিঠির তারিখ শপথ অনুষ্ঠানের প্রায় এক বছর আগের। এতে করে এসব চিঠির উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সাধারণত যুক্তরাজ্যের স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসায় কোনো ব্যক্তি ছয় মাস পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন, যা মূলত আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা সংক্ষিপ্ত সফরের জন্য হয়ে থাকে।

আমিরুল ইসলাম ২০২৫ সালের মে মাসে মেয়র হিসেবে এক বছর পূর্ণ করেন। অভিযোগ ওঠার পর তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হলেও তিনি তা করেননি। তিনি বলেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। বরং দাবি করেন, বাংলাদেশে একটি এজেন্সি তার সই জাল করে ভিসা প্রক্রিয়ায় সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছিল। তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছেও অভিযোগ করেছেন বলে জানান।

এই ঘটনা প্রকাশের পর স্থানীয় রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এনফিল্ড কাউন্সিলের কনজারভেটিভ গ্রুপের নেতা ক্লার জর্জিও আলেসান্দ্রো বলেন, ‘কাউন্সিল এ অভিযোগ সম্পর্কে আগেই জানত, তবুও তাকে মেয়র হতে দেয়া হয়েছে। এটি কাউন্সিলের জন্য এক বড় লজ্জা। তার উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা।’

অভিযোগ প্রকাশের পর ২০২৫ সালের জুনে লেবার পার্টি আমিরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এনফিল্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্তের ফলাফলের প্রতি তারা পূর্ণ সমর্থন জানায়। সেইসঙ্গে আমিরুলকে কিছু বিধিনিষেধ মানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—আর কোনো ভিসার জন্য সুপারিশ না করা, আচরণবিধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং আগের মেয়রের ব্যাজ না পরা। অনুবাদ: চ্যানেল24

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়