স্পোর্টস ডেস্ক: টেস্ট ম্যাচ হার, সিরিজ হার এবং হোয়াইটওয়াশ, ঘরের মাঠে ভারতকে রীতিমতো লজ্জায় ডুবিয়েছে নিউজিল্যান্ড। টম লাথামের দলের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ায় রোহিত শর্মাদের মুখ লুকানোর জায়গা ছিল না। প্রতিপক্ষের সামনে মাথানত হয়ে মাঠ ছাড়ার সঙ্গে সমালোচকদের কটু কথাও তীরের মতো বিদ্ধ হচ্ছিলো ভারতের দল কিংবা ক্রিকেটারদের দিকে। আঙুল উঠেছে রোতিত কিংবা ছন্দে না থাকা বিরাট কোহলির মতো ক্রিকেটারের দিকেও। দেশের মাটিতে এমন ভরাডুবির পর অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে ভারত ঘুরে দাঁড়াবে এমনটা হয়ত খুব কম মানুষই ভেবেছিলেন। - ক্রিকফ্রেঞ্জি
পার্থে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর যতটা আশা ছিল সেটাও বোধহয় একেবারে তলানিতে নেমেছিল। তবে সমর্থক, প্রতিপক্ষ কিংবা সমালোচকদের ভুল প্রমাণিত করে প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারত জয় পেয়েছে ২৯৫ রানে। এমন জয়ের পর অনুমেয়ভাবেই প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে ভারত। রিকি পন্টিংও প্রশংসা করতে কৃপণতা করলেন না। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক একটি দাবিও তুলেছেন। পন্টিংয়ের মতে, ভারতের ব্যাটাররা এখন দেশের চেয়ে দেশের বাইরে ভালো খেলেন।
পন্টিংয়ের এমন কথা পরিসংখ্যানের সঙ্গে কতটা মিলে সেটাই খানিকটা দেখে নেয়া যাক। সবশেষ ১০ বছরে ১০২ টেস্ট খেলে ৫৯ জয়ের বিপরীতে কোহলিরা হেরেছেন ২৭ ম্যাচে। দেশের মাটিতে ৩৬ জয়ের বিপরীতে হার ৭টি আর দেশের বাইরে ২৩ জয় পাওয়া ভারতকে হারতে হয়েছে ১৮ ম্যাচে। ব্যাটারদের দিকে তাকালে আরও খানিকটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। গত এক দশকে ৫৮ জন ক্রিকেটার ভারতের হয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৫০ হাজার ৯৯০ রান করেছেন। তাদের ১১৫ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ২৩৪ হাফ সেঞ্চুরিও।
যেখানে দেশের মাটিতে ৫০ ম্যাচে ২৫ হাজার ৭১৮ রান করেছেন রোহিত, কোহলি, চেতেশ্বর পূজারা, লোকেশ রাহুলরা। ৬০ সেঞ্চুরি করা ভারতের ব্যাটারদের হাফ সেঞ্চুরি আছে ১২১টি। দেশের বাইরে ২৪ হাজার ৪১৩ রানের পাশাপাশি ৫৫ সেঞ্চুরি ও ১১১টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তারা। পরিসংখ্যানে স্পষ্ট দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাটাররা প্রায় একই ধরনের ক্রিকেট খেলেছেন।
সবশেষ ৫ বছরে দেশের বাইরে ২১ ম্যাচে ৯ হাজার ৪৮২ রান করেছেন ভারতের ব্যাটাররা। ১৫ সেঞ্চুরির বিপরীতে ৫০ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তারা। ঘরের মাঠে ২২ ম্যাচে ১০ হার ৬৯৪ রান করেছেন ২০ সেঞ্চুরি ও ৫২ হাফ সেঞ্চুরিতে। শুধুমাত্র সেঞ্চুরিতেই দেশের মাটিতে খানিকটা এগিয়ে কোহলিরা। তাতে পন্টিং যে একেবারে ফেলে দেয়ার মতো কথা বলেননি সেটা পরিসংখ্যানে স্পষ্ট। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মনে করেন, ভালো উইকেটে দুনিয়ার কোথাও ভারতকে হারাতে পারবে না নিউজিল্যান্ড।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে পন্টিং বলেন, ‘আমিও একটা পয়েন্ট করেছি এবং আমার মনে হয় এটা আসলেই সত্যি। আমি জানি না এটা নিয়ে এখানে কতটা কথা হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় ভারতের ব্যাটাররা দেশে যতটা ভালো খেলে তার চেয়ে দেশের বাইরে এখন ভালো খেলে। স্পিনের চেয়ে পেস বোলারদের বিপক্ষে তারা এখন ভালো ব্যাটার। এবং আমার মনে হয় এই সপ্তাহে এটা প্রমাণিত হয়েছ।
পার্থে গিয়ে জয়সাওয়ালের মতো তরুণ একজন একশ (১৬১ ) রান করেছে। এমনকি প্রথম ইনিংসে নীতিশ রেড্ডিও ৪০ রান (৪১) করতে পেরেছে। তাই আমার মনে হয় ঘরের মাঠে যে ধরনের ধীরগতির স্পিন উইকেট পায় সেটার চেয়ে এমন উইকেটে তারা ভালো খেলে। আমি যেটা বলতে চেয়েছি, এমন ভালো উইকেটে দুনিয়ার কোথাও ভারতকে নিউজিল্যান্ড হারাতে সুযোগ নেই।’
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির আগে বেশিরভাগ সাবেক ক্রিকেটারই সিরিজ নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করে থাকেন। ভারতের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের সিরিজ শুরুর আগে পন্টিং জানিয়েছিলেন ৩-১ ব্যবধানে জিততে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্টে হারলেও নিজের পুরনো অবস্থান থেকে সরে আসছেন না তিনি। পুরো সিরিজে ধারাভাষ্যকারের দায়িত্বে থাকা অজিদের সাবেক অধিনায়ক মনে করেন, এখান থেকেও অস্ট্রেলিয়ার ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :