নয়া দিগন্ত থেকে নেয়া: বেশির ভাগ দলই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের খসড়ার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে স্বাক্ষরের জন্য সম্মতির কথা জানিয়েছে। ৫ ও ৭ অক্টোবরের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে মতের ব্যবধান নিরসন করা সম্ভব হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে তিন বিকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করছে। এই তিন বিকল্পের যেটির বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেটি অনুসারে সনদ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। কমিশন এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনায় বসবে ৫ অক্টোবর। ৭ অক্টোবর হতে পারে শেষ বৈঠকের সমাপ্তি। আর ১৪ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষরের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ১৫ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের ঊর্ধ্বতন সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র অনুসারে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বিকল্প হলো- সংবিধান আদেশের মাধ্যমে এখন থেকেই সনদের ঐকমত্যের বিষয়গুলো কার্যকর করা। পরবর্তী নির্বাচনের সময় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের মাধ্যমে সনদের প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে জনগণের মতামত নেয়া।
কমিশনের দ্বিতীয় বিকল্প হলো- সংবিধান আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ঐকমত্যের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন শুরু করা। আর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের উপদেশ গ্রহণ করা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উপদেশ গ্রহণ করেছিলেন। এ বিকল্প অনুসারে জুলাই সনদের সম্মত বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন এখন থেকে শুরু হতে পারে।বাংলাদেশের পণ্য
তৃতীয় বিকল্প হলো- আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটি হবে গণপরিষদ নির্বাচন। এই গণপরিষদ নতুন সংবিধান প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিলে এর খসড়া তৈরি করবে এবং অনুমোদন হওয়ার পর নতুন সংবিধান কার্যকর হবে। ফ্রান্স, পাকিস্তানসহ অনেক দেশেই এই নজির রয়েছে। গণপরিষদ নতুন সংবিধান প্রণয়ন না করে পুরনো সংবিধানে ব্যাপক সংশোধনী এনে পুনর্বিন্যাস করতে চাইলে সেটিও করতে পারে।
জানা গেছে, বেশির ভাগ দলই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের খসড়ার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে স্বাক্ষরের জন্য সম্মতির কথা জানিয়েছে। ৫ ও ৭ অক্টোবরের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে মতের ব্যবধান নিরসন করা সম্ভব হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আনুপাতিক নির্বাচনের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ পাঁচটি দল কর্মসূচি পালন করছে। তারা সংসদের উভয়কক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন দাবি করছে। অন্য দিকে ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি উচ্চ কক্ষে আনুপাতিক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের খসড়ায় নিম্ন কক্ষে প্রচলিত এবং উচ্চ কক্ষে ভোটানুপাতিক নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে। আনুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষ ছাড় দিয়ে নিম্ন কক্ষে প্রচলিত এবং উচ্চ কক্ষে আনুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে একমত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সনদ এখন থেকেই বাস্তবায়নের পথরেখা
জুলাই সনদ এখন থেকেই বাস্তবায়নের সাংবিধানিক পথরেখার ক্ষেত্রে সংবিধানের ভেতরে যেসব সুযোগ আছে তার মধ্যে অস্থায়ী সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি হিসেবে ১৯৭২-এর সংবিধানের ৭(১) ও ৭(২) অনুচ্ছেদ জনগণের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করে। জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈধতা পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকার এই ধারাগুলোর মাধ্যমে তার সাংবিধানিকতা দাবি করতে পারে।
১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদে দু-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেলে সংবিধান সংশোধন করা যায়। তবে বর্তমানে কোনো পূর্ণ সংসদ নেই; তাই অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অর্ডিন্যান্স জারি (৯৩ অনুচ্ছেদ) ও রূপান্তরমূলক ডিক্রি জারির পথ খোলা থাকে, যা পরে নবগঠিত সংসদ অনুমোদন করতে পারে।
বিচার বিভাগীয় বৈধতার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট এর আগে ফজলুল হক বনাম বাংলাদেশ এবং আনোয়ার হোসাইন চৌধুরির মামলায় জনগণের সার্বভৌমত্ব ও মৌলিক কাঠামো রক্ষা করেছে। ফলে আদালতের নজরদারিতেও এই প্রক্রিয়া আইনের শাসনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা সম্ভব।বাংলাদেশের পণ্য
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অস্থায়ী ব্যবস্থাপনা (২০২৫-২৬) অনুসারে অর্ডিন্যান্স ও ডিক্রি জারি করে জুলাই সনদের সংস্কার কমিশনগুলোকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেয়া যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদিকে স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের ঘোষণা করা যেতে পারে। জনগণের মতামত যাচাই করতে রেফারেন্ডাম আহ্বান করা যেতে পারে।
সাংবিধানিক সংশোধন (২০২৬ নির্বাচনোত্তর সংসদে) বিকল্প অনুসারে নির্বাচনের পর গঠিত সংসদ সংবিধান সংশোধন বিল পাস করে জুলাই সনদের মূল নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করবে। এর মধ্যে আসতে পারে- নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বা বিকল্প মডেল; বিকেন্দ্রীকৃত প্রশাসন (স্থানীয় সরকারকে সাংবিধানিক মর্যাদা); অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদে জনগণের মালিকানা নিশ্চিতকরণ; বৈষম্যবিরোধী ব্যবস্থা ও কোটানীতির নতুন সাংবিধানিক রূপ এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির নয়া কাঠামো।
দীর্ঘমেয়াদি সাংবিধানিক পুনর্লিখন বিকল্প অনুসারে জুলাই সনদ যদি ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ বা নতুন ধাঁচের রাষ্ট্রকাঠামো নির্দেশ করে, তবে সংসদকে সংবিধান পুনর্লিখন পরিষদ গঠন করতে হবে। পরিষদে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষার্থী ও প্রবাসী প্রতিনিধি থাকতে পারে। এই খসড়া পরে জনগণের গণভোটে অনুমোদন পেলে নতুন সংবিধান কার্যকর হবে।
সাংবিধানিক বৈধতা রক্ষার মূলনীতি অনুসারে জনগণের সার্বভৌমত্ব (সংবিধান ৭ অনুচ্ছেদ) হতে পারে জুলাই সনদের নৈতিক ভিত্তি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় রাখা হবে সাংবিধানিকতার অভ্যন্তরীণ চেক অ্যান্ড ব্যালান্স। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করার জন্য বৈশ্বিক অংশীদারদের সামনে আইনি বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। বস্তুত জুলাই সনদ এখন থেকেই বাস্তবায়নের সাংবিধানিক পথরেখা হলো- অন্তর্বর্তী সরকারের অর্ডিন্যান্স বা ডিক্রির মাধ্যমে প্রাথমিক বাস্তবায়ন এরপর নির্বাচনোত্তর সংসদে সাংবিধানিক সংশোধন এবং জনগণের অংশগ্রহণে দীর্ঘমেয়াদি সংবিধান পুনর্লিখন।
গণভোটের ভূমিকা
জুলাই সনদের মতো একটি বিপ্লবোত্তর রাষ্ট্রচুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় গণভোট হলো জনগণের সার্বভৌম মতামত যাচাইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সাংবিধানিক হাতিয়ার। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে (২০২৫-২৬) অন্তর্বর্তী সরকার অর্ডিন্যান্স দিয়ে জুলাই সনদের মূল কাঠামো কার্যকর করলে তাতে জনগণের পূর্ণ সম্মতি আছে কি না, তা স্পষ্টভাবে প্রমাণের জন্য গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় মহলে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা বাড়বে। তবে এই পর্যায়ে গণভোট বাধ্যতামূলক নয়; এটি মূলত রাজনৈতিক বৈধতা জোরদার করার উপায়।
সংসদে সাংবিধানিক সংশোধনের সময় যদি জুলাই সনদের নীতিগুলো বর্তমান সংবিধানে সংশোধনী আকারে অন্তর্ভুক্ত হয়, তা কেবল সংসদে দু-তৃতীয়াংশে পাস করলেই কার্যকর হতে পারে। তবে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন (যেমন- রাষ্ট্রের ধাঁচ, নির্বাহী ব্যবস্থার রূপান্তর, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ) হলে তা নিয়ে গণভোট বাধ্যতামূলক করে তোলা যেতে পারে। এতে জনগণের সম্মতি নিশ্চিত হবে এবং পরবর্তী সময়ে কোনো মহল এই পরিবর্তনকে অবৈধ দাবি করতে পারবে না।
দীর্ঘমেয়াদি পুনর্লিখিত সংবিধান
যদি জুলাই সনদ ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ বা নতুন সাংবিধানিক কাঠামো নির্মাণের পথে যায়, তবে নতুন সংবিধান খসড়া প্রণয়নের পর তা কার্যকর করার আগে অবশ্যই গণভোটে অনুমোদন নিতে হবে। এটিই হবে জনগণের চূড়ান্ত সার্বভৌম সিলমোহর। ইতিহাসে অনেক উদাহরণ আছে। ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্র (১৯৫৮), নেপালের প্রজাতন্ত্র কাঠামো (২০০৮), এমনকি বাংলাদেশের ১৯৭২-এর সংবিধানের মূল প্রক্রিয়াতেও জনগণের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ চাওয়া হয়েছিল।বাংলাদেশের পণ্য
গণভোটের ভূমিকা হলো- অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি বৈধতা যাচাই (রাজনৈতিক সমর্থন দৃঢ় করা); সংসদীয় সংশোধনীতে জনগণের সম্মতি নিশ্চিত করা (বিশেষ করে মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনে); নতুন সংবিধান অনুমোদনের চূড়ান্ত ধাপ (জনগণের সর্বোচ্চ সার্বভৌম মতামত)।
বাংলাদেশের সংবিধানে গণভোটের ভিত্তি রয়েছে ১৯৭২-এর মূল সংবিধানে। এতে স্পষ্ট বলা ছিল যে কোনো অনুচ্ছেদের সংশোধন জাতীয় সংসদে দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হলে তা কার্যকর হবে। তবে সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদে (যেমন- রাষ্ট্রধর্ম, রাষ্ট্রের চরিত্র, জাতীয় পতাকা, ভাষা ইত্যাদি মৌলিক বিষয়) পরিবর্তন আনার আগে গণভোটে অনুমোদন নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংশোধন ও পরবর্তী কয়েক দফা সংশোধনের মাধ্যমে এই গণভোট শর্ত প্রায় বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে ১৪২ অনুচ্ছেদ শুধু সংসদে দু-তৃতীয়াংশ ভোটের কথা বলে, গণভোট বাধ্যতামূলক নয়। তাই ভবিষ্যতে চাইলে জুলাই সনদভিত্তিক সংশোধনী এনে আবার গণভোট ধারা সংযোজন করা যেতে পারে।বাংলাদেশের পণ্য
জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে অনুচ্ছেদ ১১ ও গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ৭(১) অনুসারে ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’। ১১ নং অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্রে গণতন্ত্র হবে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতির ভিত্তিতে।’ এর ব্যাখ্যা থেকে আদালত একাধিকবার বলেছে যে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক রূপান্তরে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ (গণভোট বা গণমতামত) জনগণের সার্বভৌমত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে গণভোট-১৯৭৭ গুরুত্বপূর্ণ। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর বৈধতা অর্জনের জন্য একটি গণভোট আয়োজন করেন। তখন প্রশ্ন ছিল : ‘আপনি কি রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমানের জাতীয় পুনর্গঠন কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন প্রদান করেন?’ সরকারি ফলাফলে প্রায় ৯৮ শতাংশ সমর্থন দেখানো হয়। এই অভিজ্ঞতা দেখায় যে গণভোট হতে পারে বৈধতার হাতিয়ার। ১৯৮৫ সালে এরশাদও তার শাসন বৈধ করার জন্য গণভোট করেন।
১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সরাসরি গণভোট হয়নি, তবে নির্বাচিত গণপরিষদের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়। এই অভিজ্ঞতা দেখায় যে নতুন সংবিধান বা মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিকল্প হতে পারে গণপরিষদ বা সাংবিধানিক কমিশন।বাংলাদেশের পণ্য
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রাসঙ্গিকতা
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিশ্চিত করতে (১৯৭৭-এর মতো) গণভোট ব্যবহার হতে পারে। সংবিধান সংশোধন বা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনে ১৪২ অনুচ্ছেদে নতুন সংশোধনী এনে আবার গণভোট বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে অথবা সরাসরি সংবিধান পুনর্লিখনের পর খসড়া অনুমোদনের জন্য গণভোট আয়োজন হতে পারে। গণভোট হলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এটি প্রমাণ হবে যে পরিবর্তন চাপিয়ে দেয়া নয়, বরং জনগণের প্রত্যক্ষ সম্মতির ভিত্তিতে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে গণভোট প্রধানত বৈধতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। জুলাই সনদের মতো বিপ্লবোত্তর রাষ্ট্রচুক্তি কার্যকর করতে হলে : অন্তর্বর্তী সময়ে রাজনৈতিক বৈধতা যাচাইয়ে; মৌলিক সাংবিধানিক সংশোধনীতে জনগণের সম্মতি নিশ্চিত করতে এবং নতুন সংবিধান অনুমোদনে গণভোট অপরিহার্য হাতিয়ার হতে পারে।বাংলাদেশের পণ্য
গণভোট বাস্তবায়নের রূপরেখা
আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরি অন্তর্বর্তী সরকার অর্ডিন্যান্স বা ডিক্রি জারি করে গণভোট আয়োজনের আইনি কাঠামো তৈরি করবে। এ আইনে স্পষ্টভাবে থাকবে : কারা ভোট দেবে (ভোটার তালিকা নির্ধারণ), ভোটের প্রশ্ন বা প্রস্তাব কী হবে, ভোট পরিচালনার কর্তৃপক্ষ কে (নির্বাচন কমিশন বা বিশেষ গণভোট কমিশন), আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আমন্ত্রণের নিয়ম।
রেফারেন্ডামের প্রশ্ন হবে স্পষ্ট, একক ও বিভ্রান্তিমুক্ত। যেমন : ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদের ঘোষিত সংস্কার কাঠামোকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে আছেন? হ্যাঁ : না। তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন বা গণভোট কমিশন গঠন করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে সশস্ত্রবাহিনী বা নিরপেক্ষ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে সহিংসতা ও জালিয়াতি রোধ করতে হবে।
ভোটগ্রহণ হবে সর্বজনীন ভোটাধিকার ভিত্তিতে (১৮ বছর বয়স+)। ইভিএম বা কাগজের ব্যালট- যেটা সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ বলে মনে হয়, সেটি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিটি কেন্দ্রে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকবে। গণভোট কমিশন স্বচ্ছভাবে ফলাফল ঘোষণা করবে।
গণভোট বৈধ হতে ন্যূনতম শর্ত নির্ধারণ করা হতে পারে ভোটার উপস্থিতি অন্তত ৫০% + ১। এর মধ্যে ৫০% + ১ ‘হ্যাঁ’ পেলে প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে। ফলাফল প্রকাশের পর তা হবে চূড়ান্ত ও জনগণের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত।
ফলাফলে যদি ‘হ্যাঁ’ পক্ষে জয় হয় তাহলে সংসদ বা অন্তর্বর্তী সরকার ফলাফলকে সাংবিধানিক সংশোধনী বা নতুন সংবিধান অনুমোদন আকারে কার্যকর করবে। যদি ‘না’ পক্ষে জয় হয় তাহলে প্রস্তাব বাতিল হবে, নতুন প্রস্তাব বা সংশোধিত সনদ জনগণের কাছে আবার উপস্থাপন করা যেতে পারে।