মনিরুল ইসলাম: জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরায় সক্রিয় করা হবে এবং এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘শফিকুল কবির মিলনায়তনে’ আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এ্যানী বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—যা আঞ্চলিক আলাপ-আলোচনা ও সমাধানের একটি মঞ্চ। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সার্ককে অকার্যকর করে একটি নির্দিষ্ট প্রতিবেশী দেশকে প্রাধান্য দিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কূটনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। আমরা প্রভুর নয়, বন্ধুর সন্ধান করব—এই নীতিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাব।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি একটি দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল হিসেবে বর্তমান সংকটকালে জাতিকে সঠিক বার্তা দিয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং জনমনে আশ্বাস প্রদান করেছেন।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের সমালোচনা করে এ্যানী বলেন, “গত ১৭ বছরের দুঃশাসন সত্ত্বেও তারেক রহমানের দূরদর্শিতায় দেশে বড় কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসই তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থনের প্রধান কারণ। বিএনপি বিশ্বাস করে, আগামী দিনে তার নেতৃত্বেই দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে এ্যানী বলেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার ও কিছু মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়—এটাই এখন দেশবাসীর দাবি। সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশনের সব বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে এবং কাজ জোরালো গতিতে এগিয়ে চলছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু বিএনপিকেই নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষকেও দমন-পীড়ন চালিয়ে কণ্ঠরোধ করেছে। এর ফলে দেশের রাজনীতি ধ্বংস হয়েছে এবং গণতান্ত্রিক চর্চার পথ রুদ্ধ হয়েছে।
ভোটের ইতিহাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে ভোট হয়নি, ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ভোট হয়েছে, আর ২০২৪ সালে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে।”
তার বক্তব্যে আরও ছিল: “আওয়ামী লীগ কখনোই প্রকৃত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। অন্যদিকে শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি কখনোই ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরতন্ত্র চর্চা করেনি।”
সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গে এ্যানী বলেন, “তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির সংস্কার প্রক্রিয়া ও চলমান আন্দোলন আজ সরকারের প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফা অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ‘১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না’—তারেক রহমানের এ প্রস্তাব রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, ৯০-এর এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা, সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর অর্জন ও বারবার কারাবরণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়।