মানবজমিন প্রতিবেদন: দলের সিনিয়র নেতাদের পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সরকার বা কোনো পক্ষের সঙ্গে বিবাদে না জড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট আয়োজনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে দলের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গণতন্ত্রকামী সমমনা দলগুলোর মধ্যে ঐক্য জোরদারেও গুরুত্ব আরোপ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে তিনি এসব নির্দেশনা দেন। শনিবার গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতারা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান। এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় লন্ডনের বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং নেতারা এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেন।
সূত্র জানায়, নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি সরকারের সঙ্গেও নির্বাচন সংক্রান্ত ইস্যুতে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেন। নির্বাচন ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ে নেতাদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
সূত্র জানায়, ঈদের দিন যখন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন, ওই সময় তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়টি জানতেন না। এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের কোনো কথা হয়নি। সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের এ বিষয়টি উত্থাপন করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই সময় প্রধান উপদেষ্টা নিজ থেকে আগ্রহী হওয়ায় স্থায়ী কমিটির সভায় এই বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসে। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক নির্দেশনা এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে বলে নেতারা মনে করছেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যে অবিচল আস্থা, সেই আস্থা তিনি সব সময় প্রকাশ করেন। তার প্রতিটি কথার মধ্যে আমরা সেই বিষয়টা দেখতে পাই। তিনি বিশ্বাস করেন যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া কোনো ব্যবস্থায় ঠিক সেভাবে কোনো রাষ্ট্র উপকার করতে পারে না।
বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ দাবি সামনে রেখে দলটির নেতারা বক্তব্য রাখছেন। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের এই দাবির মধ্যেই গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নির্বাচনের সময়রেখা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আসছে এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এপ্রিল নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযোগী সময় নয়।
ওদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। এই আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধান আসতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লন্ডনে হোটেল ডোরচেস্টারে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠককে রাজনীতিতে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ ছাড়া, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সেখানে বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও নির্বাচন, সংস্কার এবং বিচারসহ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি যে বক্তব্য কিংবা দাবি জানিয়ে আসছে, সেই কথাগুলো বৈঠকে বলার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেয়া হয়। মূলত এসব ইস্যুই লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তারেক রহমান উপস্থাপন করবেন বলে বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এই বৈঠকের আগ মুহূর্তে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী লন্ডন গেছেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক হলেও এই বৈঠককে সামনে রেখেই দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য লন্ডন সফর করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওদিকে অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার জন্য নেতাদের নিদের্শনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গণতান্ত্রিক চর্চা বজায় রাখার কথা বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক সহনশীলতা প্রদর্শনের কথাও জোর দিয়ে বলেছেন।
আলোচনার বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, মূলত ম্যাডামের সঙ্গে আমরা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছিলাম। এ সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলছেন, আমরা বড় দল, এজন্য দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার মধ্যদিয়ে একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে যেতে হবে, এজন্য সকলকে কাজ করতে বলেছেন তিনি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন গণতান্ত্রিক চর্চা সহনশীল রাজনীতি বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। লন্ডনের বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনায় আসতে পারে।