বাংলাদেশের রাজনীতির এক করুণ অধ্যায় তুলে ধরলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জনাব সালাউদ্দিন আহমেদ। দীপ্তি চৌধুরীর সঞ্চালনায় চ্যানেল আইয়ের বিশেষ আয়োজনে সালাম স্টিল স্ট্রেইট কাট অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি তুলে ধরেন ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ রাতের সেই বিভীষিকাময় ঘটনার বিস্তারিত।
তিনি জানান, রাজধানীর উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের এক বন্ধুর বাসায় অবস্থানকালে রাত আনুমানিক ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে কিছু “প্লেইন ক্লথসে” ব্যক্তি তাকে চোখ ও হাত বেঁধে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়। তিনি তখন ২০-দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্বে ছিলেন এবং প্রায়শই হাইডআউটে থাকতে হতো।
তুলে নেওয়ার পর তাকে ঢাকার আশপাশের কোনো একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার চোখ ও হাত বাধা অবস্থায় তাকে রাখা হয় একটি ছোট্ট অন্ধকার কক্ষে – আনুমানিক ৫ বাই ১০ ফুট মাপের, নিচতলার একটি ভবনের কক্ষ। সেখানে ছিল কেবল একটি স্টিলের দরজা, নিচে চার-পাঁচ ইঞ্চির ফাঁক দিয়ে খাবার দেয়া হতো। কক্ষে ছিল একটি মাত্র ফ্যান ও একটি হাই পাওয়ার লাইট। কোন জানালা ছিল না, ছিল না পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনও। প্রাকৃতিক প্রয়োজনের জন্য রাখা হয়েছিল একটি ছিদ্র নালা ও একটি পানির কল। দুর্গন্ধ ও পোকামাকড়ে ভরা ছিল সেই পরিবেশ।
তিনি জানান, “সেখানে কোনো মানুষ তো দূরের কথা, কোনো পশুও টিকে থাকতে পারবে না। আমি নখ দিয়ে দাগ কেটে দিন গুনতাম।”
প্রায় ৬১ দিন পর, তাকে চোখ বেঁধে মুখে মাস্ক পরিয়ে একটি লম্বা ড্রাইভে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তিনি জানতে পারেন, তাকে ভারতের মেঘালয়ের শিলং এলাকার গলফ লিংক মাঠের পাশে একটি স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। সেখানে সকালের হাঁটারত কয়েকজন মানুষ তাকে দেখে স্থানীয় পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে তাকে প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি করে। শারীরিক ও মানসিক দুরবস্থার কারণে তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকদের মাধ্যমে পরিবারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশ প্রথমে তাকে ‘পাগল’ মনে করে মানসিক রোগের ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। পরে চিকিৎসক ও নার্সের সহায়তায় পরিবারের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হলে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা যায়।
পরবর্তীতে ভারতের পুলিশ তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে। চিকিৎসা শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে জামিন দেওয়া হয়, তবে শর্ত ছিল তিনি শিলং ত্যাগ করতে পারবেন না এবং নিয়মিত কোর্টে ও পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে। প্রায় এক বছর তিনি এই নিয়মে ছিলেন।
দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর, ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর শিলংয়ের একটি আদালত তাকে মামলা থেকে খালাস দেয়। সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, “আমি আশা করছিলাম খালাসের পরে দেশে ফিরতে পারব, কিন্তু তার পরও চার-পাঁচ মাস পর্যন্ত আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমাকে ফেরানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।”
তিনি আরও জানান, খালাসের পরও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে তিনি দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।
আরও বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে