শাহরিয়ার: রুয়েট ইঞ্জিনিয়ার্স জোট অ্যালায়েন্স (REJA)–এর নির্বাচনকে ঘিরে ভুয়া ভোটার সংযুক্তি, কারচুপি ও নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ ভূমিকার অভিযোগে সংগঠনজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ভোটার, প্রার্থী ও কর্মীরা বলছেন—এই নির্বাচন রেজার ইতিহাসে “সবচেয়ে বড় জালিয়াতির ঘটনার” জন্ম দিয়েছে।
শর্ত ভঙ্গ করেই সভাপতি পদে নূর ইসলাম তুষারের অংশগ্রহণ
গত আগস্টে পূর্ববর্তী কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল—আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব নির্বাচন করতে পারবেন না। সেই শর্ত মেনেই মো. নূর ইসলাম তুষারকে আহ্বায়ক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে অভিযোগ অনুযায়ী, দায়িত্ব পাওয়ার পরই তিনি নির্বাচন আয়োজন না করে পুনরায় সভাপতি হতে গোপন তৎপরতা শুরু করেন। বিভিন্ন ব্যাচের সদস্যদের চাকরি ও ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে দল ভারী করাসহ একাধিক অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে সাধারণ সভায় শর্তটি হঠাৎ বাতিল করিয়ে তিনিও সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র তোলেন। কর্মীরা এই ঘটনাকে ব্যঙ্গ করে বলেন—“শিয়ালের হাতে মুরগির ঘর তুলে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত।”
নির্বাচন পেছানোর আবদারের আড়ালে ‘ষড়যন্ত্র’
১৪ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এর দুই দিন আগে, ১২ নভেম্বর, নির্বাচন কমিশনার মাহবুবুল আলম সকল প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে একমাত্র নূর ইসলাম তুষার ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। অন্য প্রার্থীদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও কমিশন বিষয়টি অগ্রাহ্য করে নীরব থাকে। অভিযোগকারীদের মতে, এই তারিখ পরিবর্তনই ছিল কারচুপির পুরো পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু।
ভুয়া ভোটার তৈরিতে অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থার অপব্যবহার
তারিখ পরিবর্তনের পর দ্রুত ভোটার তালিকার লিঙ্ক উন্মুক্ত করা হয়। এরপর বিভিন্ন ব্যাচ থেকে তড়িঘড়ি করে অচেনা নাম অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে—এই কাজে বাইরের কোম্পানির কয়েকজনকে ব্যবহার করা হয় এবং এর পেছনে অর্থ লেনদেনও হয়েছিল।
পরবর্তীতে পুরোনো নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে পরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে বাইরের লোকজনকে ‘ভোট দেওয়ার সুযোগ’ দেওয়াই ছিল এই পরিকল্পনার মূল অংশ।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩১টি ব্যাচের অনেকেই একে অপরকে না চিনে থাকায় সেই সুযোগ কাজে লাগানো হয়। অভিযোগ অনুযায়ী—
অভিযোগকারীরা বলছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার সহযোগীরা বিপুল অর্থের বিনিময়ে এই জালিয়াতির পুরো আয়োজন পরিচালনা করেছেন।
কারচুপির অভিযোগে বিজয়ী প্রার্থীর পদত্যাগ
নির্বাচন শেষে একজন বিজয়ী প্রার্থী—যার প্রতিদ্বন্দ্বী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন—ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উল্লেখ করে নির্বাচিত কমিটির সঙ্গে কাজ না করার ঘোষণা দেন এবং পদত্যাগ করেন। এতে রুয়েটের জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনিয়ম ও কারচুপিতে ভোটারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন—ইতিহাসের সবচেয়ে অস্বচ্ছ নির্বাচন হিসেবে এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।