জান্নাতুন নাঈম প্রীতি: বিয়ে করার কয়েক ঘণ্টাও হয়নি, কিন্তু জাতি বের করে ফেলেছে সালমান মুক্তাদির দুই বাচ্চার মাকে বিয়ে করেছে। দুই বাচ্চার মা বিয়ে করলে কী সমস্যা? সমস্যা হলো জাতি অবচেতন মনে মেয়েদের এতোটাই পণ্য ভাবে যে দুই বাচ্চার মা তাদের মনের আশা পূর্ণ করতে পারবে না। জাতির সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো, নারীর চরিত্র ও শরীর নিয়ে কুরুচিপূর্ণ তামাশা করা। এই প্রসঙ্গে একটা দারুণ জিনিস শেয়ার করি।
সারা দুনিয়ায় মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে মেয়েদের সেক্স। স্পেসিফিকভাবে পৃথিবীতে মেয়েদের সবচেয়ে লজ্জা দেওয়া হয় বিয়ের রাতে মেয়েদের যোনি থেকে রক্ত বের হলে। কিন্তু নীনা ডভিক ব্রচমান আর এলেন সোকেন ডাল নামের দুজন ডাক্তার মিলে, ‘The wonder down under’ নামের একটা দারুণ বই লিখে প্রমাণ করে দিয়েছেন, মেয়েদের ভার্জিনিটির কথা যা বলা হয় তা মূলত মিথ। এই বইয়ে এনাটমিকাল রেফারেন্স-সহ ব্যাখ্যা করা আছে, মেয়েদের যোনি দেখতে কেমন।
এই দুই ডাক্তার একেবারে বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স এবং গবেষণার ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছেন, নারীর যোনি দেখতে মূলত কুচকে থাকা রাবার ব্যান্ডের মতো, যার মধ্যিখানে একটা ছিদ্র আছে রাবার ব্যান্ডের মতোই। অথচ বিগত একশ বছরের বেশি সময় ধরে পড়ানো পড়ানো হয়েছিলো, মেয়েদের যোনির সামনে একটা পর্দা থাকে, যেটা সেক্সের পরে ফেটে যায়। এই ধাপ্পা নিয়ে ইউটিউবে এই দুই ডাক্তারের টেড টকও আছে, দ্য ভার্জিনিটি ফ্রড।
এই দুজন বিজ্ঞানের ইতিহাসে কী করেছেন সেটা পরের কথা, কিন্তু এই দুজন একেবারে স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন কীভাবে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণের জন্য দিনের পর দিন হাইমেনের দোহাই দিয়ে খেলতে, শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং পেশায় যেতে, নিজের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ঠিক সালমান মুক্তাদিরের পার্টনারের মতো টিজ করা হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে একজন ডিভোর্সড এবং স্বাধীন নারীর পার্টনার চয়েজ দেখে গা জ্বালা করে, তামাশা করতে ইচ্ছা করে এবং এরপরও যদি আপনার মনে হয় মেয়েদের সব রকম অধিকার অনেক আগে থেকেই টইটম্বুর, তাহলে আপনাদের সেটা মাথার সমস্যা। যারা মাত্র দুইশ বছর আগে ভোটাধিকার পাইছে আর মাত্র কয়দিন আগে জানতে পারছে ধর্ম সমাজ আর সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে তাদের ভার্জিনিটির নামে কি অহেতুক অত্যাচার করা হইছে গত কয়েক হাজার বছর ধরে, তাদের এখনো অনেক কিছু পাওয়া বাকি। বুঝলেন? লেখক: কথাসাহিত্যিক। ফেসবুক থেকে