নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলমান অধিবেশনের ফাঁকে ভারতে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিশেষ দূতের দায়িত্ব পাওয়া সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা—সার্ক পুনরুজ্জীবনের ইস্যুটি আবারও তুলেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার ভাষ্য অনুযায়ী—বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সার্ককে সক্রিয় করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে না সংগঠনটির।
প্রতি দুই বছর অন্তর সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালে কাঠমান্ডুতে। এর পর ২০১৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে নির্ধারিত শীর্ষ সম্মেলন বাতিল হয়ে যায় ভারতের উরিতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে। সেই থেকে ভারত বলে আসছে, পাকিস্তান সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাই সার্ক সংলাপ বা শীর্ষ সম্মেলন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে ভারত পাকিস্তান ছাড়া সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। দেশটির অভিযোগ, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ উন্নয়নের উদ্যোগগুলো পাকিস্তানই আটকে দিচ্ছে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে সার্ক ছাড়েনি, তবে পাকিস্তান সদস্য না থাকায় আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিমসটেককে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলেও সার্কের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়নি। গোরের কাছে ড. ইউনূসের সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি কী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তা জানায়নি ঢাকা। তবে ভারত যেকোনো বাহ্যিক চাপকে সতর্কতার সঙ্গে দেখবে। পাকিস্তান সার্কের ভার্চুয়াল সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব দিলেও পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষের জেরে সেই সম্ভাবনাও নষ্ট হয়ে গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন গোরকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করার বিষয়টি নয়া দিল্লি স্বাগত জানালেও দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা-সংকটময় ইস্যুগুলোতে তাঁর দ্বৈত ভূমিকার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কোনো হস্তক্ষেপ করছে কি না, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে চায়। বিশেষ করে, ঢাকা–ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতকে উদ্বেগে ফেলেছে। এ কারণে সার্ককে পুনর্জীবিত করার ড. ইউনূসের প্রচেষ্টায় ভারত এখনো তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দেশগুলো যেখানে সার্ক পুনরায় চালু করতে চাচ্ছে, ভারত বলছে ২০১৬ সালের পর থেকে কোনো বাস্তব পরিবর্তন হয়নি। সদস্য দেশগুলোর মধ্যেও সম্মেলন নিয়ে সর্বসম্মতি নেই।
সম্প্রতি চীনের কুনমিংয়ে চীন–পাকিস্তান–বাংলাদেশের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ভারত ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। ভারতের আশঙ্কা ছিল, এটি হয়তো নতুন কোনো জোট গঠনের উদ্যোগ। তবে পরে ঢাকা জানায়, এটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে জোট গঠনের প্রচেষ্টা ছিল না।
বৈঠকে ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও গোরের সঙ্গে আলোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, ঢাকাকে লক্ষ্য করে নানা ধরনের ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার খবর প্রকাশিত হলে ড. ইউনূস সেগুলো আগেও ‘ভুয়া সংবাদ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
ঢাকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, আসিয়ানভুক্ত হতে বাংলাদেশ আগ্রহী। ড. ইউনূস জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের উন্নয়নকে দ্রুততর করবে। তিনি গোরকে আরও জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্র: আজকের পত্রিকা