বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের অংশগ্রহণে ৭ দিনব্যাপী ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫-৩’ যৌথ মহড়া চলমান। এই যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হকে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর কয়েকটি সামরিক বিমান ও বেশ কিছু সদস্যের যাতায়াত ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছবি বা ভিডিও শেয়ার করে ফেসবুকে কেউ কেউ লিখছেন, ‘তিনটা আমেরিকার যুদ্ধ বিমান চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে, তাহলে কি আমেরিকার কাছে দেশ বিক্রি হয়ে গেলে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য।’
গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও গ্রুপে এরকম অসংখ্য পোস্ট ও ভিডিও শেয়ার করতে, মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
আসলে ঠিক কী ঘটছে চট্টগ্রামে ইউএস বিমান বাহিনীকে ঘিরে?
বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর মঙ্গলবার ও বুধবার (১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর) ২ দিন দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের অংশগ্রহণে সাত দিনব্যাপী ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫-৩’ যৌথ মহড়া চলছে। অর্থাৎ সে কারণেই ইউএস বিমান বাহিনীর ওই সদস্যরা চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।
আইএসপিআরের তথ্যমতে, এমন মহড়া নতুন কোনো বিষয় নয়, এর আগেও বাংলাদেশের বাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর এমন যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অন্যদিকে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুক পেজেও এই যৌথ মহড়ার খবর পোস্ট করা হয়েছে। যৌথ মহড়ার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমে।
এতে বলা হয়, প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল মহড়ার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এগিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।
এদিকে, চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নথিভুক্ত হওয়া ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অতিথি সেখানে থাকছেন এমন অভিযোগ সত্য নয়।
যা বলছে আইএসপিআর
আইএসপিআর মঙ্গলবার দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, এই মহড়ায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমান, একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার এবং প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের দুইটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমান অংশ নিয়েছে।
এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর দেড়শ সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের ৯২ জন সদস্যের অংশগ্রহণে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বক্তব্য
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ফেসবুক পেজেও এই যৌথ মহড়ার খবর পোস্ট করা হয়েছে। যৌথ মহড়ার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমে।
এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল মহড়ার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এগিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।
এতে বলা হয়েছে, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স অ্যাম্বাসেডর ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুরুল হক সেনানিবাসে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল ২৫ মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন।
মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত সাত দিনের বহুপাক্ষিক এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৯২ জন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৯০ জন সদস্য, শ্রীলঙ্কা বিমান বাহিনীর দুইজন চিকিৎসা কর্মী, ওরেগন এয়ার ন্যাশনাল গার্ড এবং আঞ্চলিক সহযোগী অংশীদাররা।
মহড়ার মূল লক্ষ্য চিকিৎসা প্রস্তুতি, বিমান নিরাপত্তা, প্রকৌশল সহায়তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।
তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এমন যৌথ মহড়ার ইতিহাস এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর দুই দেশের যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিনা তথ্যে হোটেলে থাকার তথ্য কতটা ঠিক?
চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্সের পোশাক পরিহিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যে ভিডিও শেয়ার করে অনেকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।
ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে এমন অভিযোগ করতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওই সদস্যরা হোটেলের গেস্ট বুকে রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়াই সেখানে উঠেছেন। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোটেল কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউএসের একটা গ্রুপ এসেছে এখানে। অ্যারাউন্ড ওয়ান হানড্রেড (প্রায় একশত)।’
তিনি জানান, অন্যান্য অতিথিদের যেভাবে হোটেলে পাসপোর্ট, ভিসা কপি দিয়ে উঠতে হয় ঠিক সেভাবেই তাদের বেলায়ও সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্স সদস্য কি না তা তিনি নিশ্চিত নন বলে উল্লেখ করেন। তবে তারা সামরিক বাহিনীর বলে অনুমান করেন এই কর্মকর্তা। অন্য আট-দশটা গেস্টের সঙ্গে যে প্রসেস সেই প্রসেস ফলো করেই তারা আমাদের হোটেলে স্টে করছেন। রেডিসনের মতো একটা চেইন হোটেলের প্রটোকল প্রত্যেকটা গেস্টের জন্য সমান। যেকোনো গেস্ট এখানে এলে তার পাসপোর্ট, ভিসার কপি দিয়েই ঢুকতে হয়।
তারা সব ধরনের ডকুমেন্ট হোটেল কর্তৃপক্ষকে দিয়েই ওই হোটেলে থাকছেন বলে জানান তিনি।