পুদিনা পাতার নাম কম-বেশি সবাই শুনেছেন। বিভিন্ন সময় সর্দি-কাশির মতো ছোট ছোট সমস্যায় পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেয়ে থাকেন অনেকে। কোনো কোনো এলাকায় বা কেউ কেউ আবার এর চা-ও পান করেছেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে প্রশান্তিদায়ক পানীয় হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পুদিনা পাতার চা বা পুদিনা চা।
কর্মব্যস্ত দিন শেষে রাতে এক কাপ পুদিনা চা পানে আরাম বোধ হয়। এর সতেজ সুবাস মনকে শিথিল করে এবং শীতল স্বাদ শরীরকে ভারী হওয়া থেকে বিরত রাখে। কেউ কেউ আবার মনে করেন, ঘুমের আগে এই চা পান শিথিল হতে সাহায্য করে। কিন্তু জানেন কি, একমাস বা ৩০ দিন নিয়মিত পুদিনা চা পান করলে হজম, ঘুমের মান এবং সামগ্রিক স্বস্তির ক্ষেত্রে কার্যকরী উপকারিতা পাওয়া যায়। এ নিয়েই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনডিটিভি। তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক-
হজমের অস্বস্তি কমায়:
পুদিনায় প্রাকৃতিক অ্যান্টিস্পাসমোডিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা আপনার পরিপাকতন্ত্রের পেশীগুলোকে শিথিল করতে সহায়তা করে। এটি গ্যাস, ফোলাভাব এবং বদহজম কমাতে পারে―এ ধরনের সমস্যাগুলো মূলত প্রায়ই রাতে অনিয়মিত খাবার খাওয়ার পর হয়ে থাকে। জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিতে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, পুদিনার তেল আইবিএসের লক্ষণগুলোকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে, যা পুদিনা চায়ের উপকারিতার সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে থাকে।
সহজে ঘুমাতে সাহায্য:
পুদিনা পাতা প্রাকৃতিকভাবে ক্যাফিনমুক্ত, এর শীতল সুবাস মনের শান্ত অবস্থা বজায় রাখে। যা ঘুমের আগে অনেকেই সহায়ক বলে মনে করেন। মেন্থল থেকে হালকা শিথিলকরণ প্রভাব এসে থাকে, যা শরীরকে নিজস্ব গতিতে বিশ্রাম নিতে উৎসাহ প্রদান করে। একমাস নিয়মিত পুদিনা চা পানে মসৃণ ঘুমের পরিবর্তন খেয়াল করতে পারবেন। এমনকি কখনো কিছুটা অস্থির বোধ করলেও এর উপকারিতা অনুভব হবে।
রাতে পরিষ্কার শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য:
পুদিনা পাতায়ি প্রাকৃতিক মেন্থল থাকে, যা নাকে থাকা পথগুলো খুলতে এবং হালকা রক্তক্ষরণের মতো সমস্যাগুলো কমাতে অবদান রাখে। মৌসুমি অ্যালার্জি বা রাতে পেট বন্ধ হওয়ার সমস্যা থাকলেও তা দূর করতে কাজ করে। নিয়মিত পুদিনা চা পান করলে বায়ুপ্রবাহ উন্নত হতে পারে এবং মাসের শেষ দিকে শ্বাস-প্রশ্বাস হালকা ও আরামদায়ক অনুভব হবে।
শ্বাস-প্রশ্বাস সতেজ করে ও মুখে আরাম দেয়:
পুদিনায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কমাতে কাজ করে। নিয়মিত রাতে পুদিনা চা পান করা হলে মুখে একটি পরিষ্কার ও সতেজ স্বাদ তৈরি হয়, যা পরদিন সকাল পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠার পর কম শুষ্কতা ও মনোরম মুখের অনুভূতি লক্ষ্য করতে পারবেন।
চাপ ও উত্তেজনা কমায়:
পুদিনা পাতার সুবাস স্নায়ুতন্ত্রের ওপর শান্ত প্রভাব ফেলে বলে প্রমাণ হয়েছে। নিয়মিত পুদিনা চা পান করলে সারাদিন তৈরি হওয়া দীর্ঘস্থায়ী চাপ প্রশমিত হয়। অনেকেই সহজে ঘুমানোর কৌশল হিসেবে পানীয়টি নিয়মিত একমাস পানের পর মানসিক ও শারীরিকভাবে হালকা বোধ করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
প্রতিরাতে পুদিনা চা পান কি নিরাপদ:
হ্যাঁ, অধিকাংশ মানুষের জন্য পুদিনা পাতার চা প্রতিদিন পান করা নিরাপদ। আপনার যদি পুদিনা পাতার রিফ্লাক্সের সমস্যা বা অ্যালার্জি না থাকে তাহলে নিরাপদ।
পুদিনা চা কি অ্যাসিডিটির কারণ:
কিছু মানুষের খাদ্যনালীতে স্ফিঙ্কটারকে শিথিল করতে পারে পুদিনা চা, যা রিফ্লাক্সের কারণ হতে পারে। এটি পানে যদি অস্বস্তি বোধ করেন, তাহলে রাতের বেলায় পুদিনা চা পান করা এড়িয়ে চলা উচিত। আর যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: চ্যানেল ২৪