রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্রুত বেড়ে গেলে তা হৃদ্যন্ত্রের দুর্বলতার বড় একটি ইঙ্গিত হতে পারে। তবে সুখবর হলো, খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। গবেষকরা বলছেন, সঠিক খাদ্যই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে কার্যকরভাবে সচল রাখার অন্যতম চাবিকাঠি। সাধারণত ফল, শাকসবজি ও সম্পূর্ণ শস্যজাত খাবারকে সুস্বাস্থ্যের প্রতীক ধরা হয়, কিন্তু বীজজাত খাবারগুলোর শক্তি অনেক সময়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। অথচ এই ছোট ছোট বীজে আছে প্রচুর আঁশ, ভালো ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং হার্টের সুস্থতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন পাঁচটি বীজ প্রাকৃতিকভাবে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকর এবং কীভাবে এগুলো খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
ফ্ল্যাক্সসিড (তিসির বীজ)
সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর বীজগুলোর একটি হলো ফ্ল্যাক্সসিড বা তিসির বীজ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, বিশেষ করে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড, যা হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফ্ল্যাক্সসিডে থাকা দ্রবণীয় আঁশ অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণ হতে বাধা দেয় এবং শরীর থেকে তা বের করে দেয়। নিয়মিত ফ্ল্যাক্সসিড খেলে এলডিএল বা ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ কমে যায় এবং সার্বিকভাবে রক্তের লিপিড প্রোফাইল উন্নত হয়। তবে পুরো বীজ নয়, গুঁড়ো করা ফ্ল্যাক্সসিড খাওয়াই ভালো, কারণ এর শক্ত খোসা হজম হয় না। দই, ওটমিল বা স্মুদি’তে মিশিয়ে সহজেই খাওয়া যেতে পারে।
তিলের বীজ
এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের রান্নায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত তিলের বীজও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে লিগনান, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্ল্যান্ট স্টেরল, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং প্রদাহ কমায়, যা হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। তিল সহজেই খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করা যায়, যেমন তাহিনি নামে পরিচিত পেস্ট আকারে বা রান্নায় উপকরণ হিসেবে।
কুমড়ার বীজ
কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, যা হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন ও আঁশ, যা একসঙ্গে কাজ করে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। প্রতিদিন একমুঠো ভাজা কুমড়ার বীজ খেলে বা সালাদ, পেস্টো কিংবা ট্রেইল মিক্সে মিশিয়ে খেলে শরীরের জন্য উপকারী পুষ্টি পাওয়া যায়।
চিয়া সিড
ক্ষুদ্র আকারের হলেও চিয়া সিডের গুণ অপরিসীম। মাত্র দুই টেবিলচামচ চিয়া সিডে থাকে প্রায় ১০ গ্রাম আঁশ, যা হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং কোলেস্টেরল শোষণ কমায়। এতে থাকা উদ্ভিজ্জ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী। চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে রাখলে জেলি জাতীয় গঠন নেয়, ফলে সহজেই পুডিং, পানীয় বা সালাদে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি তৃপ্তি বাড়ায় এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
সূর্যমুখীর বীজ
শুধু খাস্তা স্ন্যাকস নয়, সূর্যমুখীর বীজ হলো হৃদ্বান্ধব পুষ্টির ভাণ্ডার। এতে আছে ফাইটোস্টেরল নামক উদ্ভিজ্জ উপাদান, যা শরীরে কোলেস্টেরলের মতো কাজ করে এবং এলডিএল শোষণ রোধ করে। এর ফলে খারাপ কোলেস্টেরল দ্রুত কমে আসে। এ ছাড়াও সূর্যমুখীর বীজে থাকা ভিটামিন ই এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তনালিকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। লবণবিহীন সূর্যমুখীর বীজ সরাসরি খাওয়া যায় অথবা ভাজা সবজি ও স্যুপের ওপরে ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
বীজজাত খাবারগুলো প্রকৃতির এমন এক আশীর্বাদ, যা ছোট হলেও শরীরের জন্য বিশাল উপকার বয়ে আনে। তবে মনে রাখতে হবে, এগুলো কোনো ওষুধের বিকল্প নয়, বরং সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত এই পাঁচটি বীজ খাদ্যতালিকায় যুক্ত রাখলে হৃদ্যন্ত্র আরও সুস্থ থাকবে এবং কোলেস্টেরলের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে।
সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ