শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি: শাহবাগে অবস্থান চলবে, শনিবার বিকেলে গণজমায়েত ◈ দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে ফের ‘মার্চ টু ঢাকা’: নাহিদ ইসলাম ◈ আজ রা‌তে পাকিস্তান থে‌কে বিশেষ বিমানে দুবাইয়ে যাবেন ‌ক্রিকেটার নাহিদ, রিশাদ ও বাংলাদেশি দুই সাংবাদিক ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে সিরিজ জিতে দেশে ফিরলো বাংলা‌দে‌শের যুবারা ◈ উত্তরায় মহাসড়ক অবরোধ করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ছাত্র-জনতার, ঘণ্টাব্যাপী যানজট ◈ বিভাজন নয় ঐক্য, প্রতিশোধ নয় ভালোবাসা—গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের ◈ আইপিএল আয়োজনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে আরব আমিরাত ◈ ভারত আসবে না বাংলাদেশ সফরে, হবে না এশিয়া কাপও ◈ এপ্রিলে  ১০১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বিজিবি ◈ ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়: সারজিস আলম

প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৮:২৫ রাত
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৮:২৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দিবসের গুরুত্ব ও ইসলামের অবমাননা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে

এস এম আশেক ইয়ামিন: ইসলামে দিবস পালন নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক গত দু’ দশকে বেশ চাউর হয়েছে। অথচ অবাক করা বিষয় হল, ইসলামের সকল আনুষ্ঠানিকতা দিবস কেন্দ্রিক। দুই ঈদ, রমজান, হজ্জ, পবিত্র মাস – মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ্জ। ক্বদর এর রাত্রি, জুমার দিবস ও তার পূর্ব রাত্রি, নফল রোজা রাখার দিনগুলো ইত্যাদি। এসবগুলোই নির্দিষ্ট তারিখ ও মাস কেন্দ্রিক। তাই যদি হয়, তাহলে ইসলামে আলাদা ভাবে দিবসের কোন গুরুত্বই নাই এটা একেবারেই ভিত্তিহীন ও ভ্রান্ত একটি প্রচারণা ছাড়া আর কী হতে পারে?

 এখন প্রশ্ন হল, এসব দিন ব্যতিত অন্য কোন দিবসের গুরুত্ব থাকতে পারে কিনা।

রাজনৈতিক ও সামাজিক কারনে নানা ধরনের দিবসের গুরুত্ব দেখা যায় সময়ের নানা প্রেক্ষাপটে। কোন দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা লাভ করা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাওয়া ইত্যকার কারনে আলাদা দিবস নির্ধারণ ও সেটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হতে দেখা যায়। দেশে স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য, এব্যাপারে সচেতনতা তৈরির জন্য ‘স্বাক্ষরতা দিবস’ সামাজিক কারনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হল, দিবস নির্ধারণ একটি উপলক্ষ মাত্র আর মূল লক্ষটি হল, কোন মত, আদর্শ, চেতনা বা বোধকে সমাজে গুরুত্বের সাথে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করা। যেহেতু প্রতিদিন আলাদা আয়োজন করা সম্ভব নয় এবং সেটা বাস্তবও নয়, আবার এ বিষয়ের আলোচনা, বিবেচনা, বয়ান ও চিন্তা সমাজে চালু রাখা প্রয়োজন তাই দিবস কেন্দ্রিক এধরনের আয়োজনের মাধ্যমে তা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা জারি রাখাই মূলত এর উদ্দেশ্য। সুতরাং এটি একটি মুবাহ বা জায়েজ বিষয়।

এখন ধরা যাক, কেউ যদি আজকের চেতনা রহিত মুসলিম সমাজে ইসলামের বিজয়ের চেতনা নতুন করে জাগ্রত করতে মক্কা বিজয়ের দিনটি বেছে নিয়ে এদিনে এই ঐতিহাসিক বিজয়ের আলোচনা, মিছিল অথবা বক্তব্য বা ওয়ায নসিহতের ব্যবস্থা প্রস্তাব করে তাহলে কি সেটা ইসলাম ধর্মে নতুন কোন কিছু অনুপ্রবেশের সামিল হবে? নাকি এটা একারনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে যে এমনটি তো রাসুল (সঃ) নিজে বা তার পরবর্তিতে অন্য কেউ করেননি বা করতে বলেননি? আমরা কি যুগের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহনে এতটাই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছি যে, ইসলামকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে মুখে স্বীকার করে নিয়ে কার্যক্ষেত্রে তার উপকার থেকে নিজেদের ও এই উম্মাহকে বঞ্চিত করে ফেলছি? নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত এই বস্তুবাদী সমাজের প্রাত্যহিক আধ্যাত্মিকতাহীন আয়োজনে যেখানে নানা উপলক্ষে ও উপায়ে ইসলামের আলোচনা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, সেখানে রাসুলের (সঃ) জমানায় এই আয়োজন এইভাবে ছিল কিনা, যদিবা থেকেও থাকে তাহলে তা ঐদিনেই ছিল কিনা এমন নির্বোধ প্রশ্ন উত্থাপন করে অঙ্কুরেই তা বিনাশের উপকার যে শেষ বিচারে ইসলাম শত্রুদের হাতে গিয়েই পৌঁছায়, সেটা বোঝার মত মন ও মস্তিষ্ক সম্ভবত আমাদের গড়ে ওঠেনি। এখানে একটি কথা বোধহয় উল্লেখ করা জরুরি যে, বর্তমানে আমাদের সমাজে বিদআতের প্রচলিত যে সংজ্ঞা রয়েছে তা কিন্তু ইসলামের সকল মনিষীর কাছে একইভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিভিন্ন মিডিয়ায় যাদেরকে সহসাই দেখতে পাওয়া যায়, কেবল তাদের অতি সরলীকৃত বক্তব্যের উপর নির্ভর না করে এব্যাপারে একটু পড়াশুনা করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।

ঈদে মিলাদুন্নবীর কথাই ধরা যাক। রাসুলের (সঃ) জন্ম দিবসটিকে উপলক্ষ করে রাসুলের (সঃ) উপর আলোচনা সভা, ওয়াজ, কবিতা বা নাত ইত্যাদির যে আয়োজন হয়, তার একটিও ইসলামি মূল্যবোধের বাইরের কোন বিষয় নয়। বরঞ্চ এই আয়োজনগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, সমাজে রাসুল (সঃ) এর পরিচয় নতুন করে তুলে ধরার একটি সুযোগ তৈরি হয়, তাকে চেনা ও জানার এবং তাঁর আলোচনা জারি রাখার একটি উপলক্ষ তৈরি হয়। রাসুল (সঃ) নিজে বেঁচে থাকা অবস্থায় এর প্রয়োজন ছিলনা। এবং তাঁর পরবর্তি অনেক প্রজন্মের জন্য হয়ত তার প্রয়োজন পড়েনি বা তারা বিষয়টিকে এভাবে চিন্তা করেননি । রাসুলের (সঃ) এর জন্মের দিনটি যে খুব সাধারণ ছিলনা সেটা হাদিস দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠীত। তো আজ যদি রাসুল (সঃ) এর জন্ম দিবসটিকে উপলক্ষ ধরে তাঁর চিন্তা ও আদর্শকে প্রচারের এবং তাঁর প্রতি আমাদের ভালবাসার দৃশ্যমান প্রকাশ ঘটানোর ইসলাম সম্মত কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়, সেটা কীভাবে ইসলামের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে? বরঞ্চ আজকের এই চাপিয়ে দেয়া পশ্চিমা সভ্যতার পটভূমিতে, সুপার হিরো/হিরোইনদের অবাস্তব কাল্পনিক মিথোলজির যুগে, প্রতিনিয়ত নফসের কুপ্রবৃত্তির প্রচারণার সর্বগ্রাসী বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের যুগে এধরনের আয়োজনই হয়ে উঠতে পারে ইসলামি মূল্যবোধের বার্তা পৌঁছে দেয়ার উৎকৃষ্ট একটি মাধ্যম।

তবে রাসুলের (সঃ) জন্ম দিবসটিকে ‘ঈদ’ হিসেবে নামাঙ্কিত করতে কারো কারো আপত্তি রয়েছে, যদিও এ দিবসটিকে যারা ‘ঈদ’ বলেন তারা কেউই তা শরয়ী ঈদ হিসেবে মনে করেন না। সেক্ষেত্রে এই দিনটিকে অন্য যেকোন বিশেষ্য বা বিশেষণে অভিহিত করার টেকনিক্যাল আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে কিন্তু তা যে মৌলিক কোন বিষয় নয়, সেটা আমাদের সবার কাছে সহজেই বোধগম্য হওয়ার কথা। সেই সাথে এই ফিকহি বিষয়টি, যার ব্যাপারে প্রচুর ইকতিলাফ রয়েছে, তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাসুলের (সঃ) আলোচনার আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ করে বিনষ্ট করা নিশ্চয়ই প্রকৃত ঈমানেরও পরিচয় দেয় না।

সৌদি আরবের পাশের দেশ এক ইয়েমেনেই প্রতি বছর এই দিনটিতে যে লক্ষ কোটি লোকের সমাবেশ হতে দেখা যায় তা যদি পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই চালু থাকতো তাহলে কি আজ ইসলামের শত্রুরা এত সহজে ও নির্দ্বিধায় দু’দিন পরপর রাসুলের (সঃ) অথবা কুরআনের সম্মান বিনষ্ট করার দুঃসাহস দেখাতো? ভেবে দেখুন তো! তার অর্থ এই নয় যে তারা সকল ষড়যন্ত্র থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে বসে থাকতো, কিন্তু রাসুলের (সঃ) প্রতি ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সমর্থনের এধরনের প্রকাশ্য প্রদর্শনি নিঃসন্দেহে তাদেরকে চিন্তায় ফেলে দিতে পারতো এবং তাদের নিকৃষ্ট পরিকল্পনাগুলোকে ভিন্নভাবে সাজাতে বাধ্য করতো। 

একইভাবে আশুরার দিবস নিয়েও নানাভাবে তা প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলমান। আগে যেখানে আশুরার দিন মসজিদে, পাড়া-মহল্লায় ওয়াজ মাহফিল হতে দেখা গিয়েছে আজ সে আলোচনাই যেন ভীষণ স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ আশুরার আয়োজন ছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক মোক্ষম হাতিয়ার। তো এই আলোচনা দূরে সরিয়ে রেখে আখেরে কার লাভ হয়েছে? “আমরি বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার” এর জ্বলন্ত উদাহরণ ছিলেন ইমাম হুসাইন। নীতি বিবর্জিত রাষ্ট্রপ্রধানের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বস্ব ত্যাগ করে কিভাবে ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিতে হয়, সে শিক্ষা তিনি কারবালায় দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর মহান চরিত্র এবং তাঁর কর্মকাণ্ডের প্রতি রাসুলের (সঃ) সমর্থন এবং পরিশেষে কারবালায় তাঁর শেষ পরিণতি এসব কিছুই উল্লিখিত রয়েছে একটি দু’টি নয়, অসংখ্য হাদিসে। তাঁর শাহাদাত এতটাই মহান ও নজিরবিহীন ঘটনা যে, মহান আল্লাহপাক জীবরাইল (আঃ) কে দিয়ে কারবালার মাটি রাসুল (সঃ) এর কাছে প্রেরণ করেছেন। চিন্তা করে দেখুন তো যিনি এতদিন আল্লাহর ওহী বয়ে এনেছেন তিনি মাটি হাতে রাসুলের (সাঃ) কাছে এসেছেন! শুধু তাই নয়, উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামার (রাঃ) কাছে রক্ষিত সেই মাটি আশুরার দিনে রক্তে পরিণত হওয়ার হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু আজ আমরা এই দিবসটিকে বেমালুম চেপে গিয়েছি। আমরা এটাও বিস্মৃত হয়েছি যে সুরা শুরা এর ৩০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা যে রাসুল (সঃ) এর নিকট আত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের ফরজ দায়িত্ব দান করেছেন, ইমাম হুসাইনও সেই নিকট আত্মীয়দেরই অন্যতম একজন। কুরআন ও হাদিসের এতসব বর্ণনার পরও আশুরার দিনটির গুরুত্ব গিয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যান্য নবীর (আঃ) জামানায় কি ঘটেছিল সেই বয়ানে। সেগুলোও নিশ্চয়ই গুরুত্বহীন বিষয় নয়, কিন্তু তা নিশ্চয়ই কুরআন ও হাদিসের আলোকে গুরুত্ব আরোপকৃত বিষয়ের চাইতে অধিক গুরুত্বপুর্ণ নয়!

দেশে দেশে অন্যায় ও স্বৈরাচার যখন জনগণের উপর চেপে বসছে, তখন আশুরার আলোচনা ও স্মরণ কি নতুন চেতনা ও প্রেরণা লাভের অবলম্বন হয়ে উঠতে পারতো না? আজ যখন সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের মত ও পথের নানা দিবস আমাদের উপর ক্রমাগত চাপিয়ে দিয়ে চলেছে, তার জবাবে কি আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো এবং তাদের পথ আরো মসৃণ ও স্বচ্ছন্দ করতে ইসলামের দিবসগুলোকে এভাবে ভুলে যেতে থাকবো? নাকি আমাদের পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে ইসলামের চেতনা, মূল্যবোধ ও আদর্শকে তুলে ধরে, তা সমুন্নত করে, ও আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় - এমন আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহনে সচেষ্ট হবো?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়