মনিরুল ইসলাম: সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদে দেশত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারেক রহমান। শুক্রবার বিকালে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রশ্ন তুলেন।
তারেক রহমান বলেন, এই যে স্বৈরাচারের সরকারের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিমান বন্দর দিয়ে চলে গিয়েছে দেশ ছেড়ে।যেভাবে চলে গিয়েছে সেটি যদি আমরা মিলাই তাহলে দেখব যে, ৫ আগস্ট আরেকজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। ইনিও অনেকটা সেভাবে পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার নাকি তার এই দেশত্যাগের ব্যাপারে কিছুই জানে না।ঘটনাটি গতকাল এবং গতকাল থেকে আজকে পর্যন্ত যতজন মানুষের সাথে আমার কথা হয়েছে প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, প্রত্যেকে প্রশ্ন করছেন তাহলে অন্তবর্তীকালীন সরকার জানে টা কী?
তারেক রহমান বলেন, অত্যন্ত সুকৌশলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদী বিরোধী যে রাজনৈতিক দলগুলো আমরা যারা মাঠে ছিলাম সেই দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র হয়ত তৈরি করতে চাইছে। পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদেরও পুনর্বাসনের ক্ষেত্র হয়ত তৈরি করতে চাইছে। এই বিষয়গুলো ঘুরে ফিরে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।
তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি তার সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। জনগনের ভোটে জনগনে কাছে দায়বদ্ধ একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি এখনও তাদের সহযোগিতা এবং সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল(বার্ক) মিলনায়তনে বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের উদ্যোগে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উৎসব ‘ইস্টার ডে’ (যীশুর পুনরুত্থান দিবস) উপলক্ষ্যে এই পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
‘সুমনের বাসায় পুলিশ কেনো’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘ ২০১৩ সালে ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন র্যাব সদস্যরা ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে গুম করে। আজ পর্যন্ত এই সহকর্মীর আমরা হদিস পাই নাই। স্বৈরাচারের শাসনকালে শুধু একজন সুমন নয় ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে এরকম অসংখ্য সুমনদেরকে গুম-খুন-অপহরণ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে পলাতক স্বৈরাচারের সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদসদের নিয়ে গুম হওয়া সুমনের বোন নেতৃত্বে ২০১৪ সালে গঠিত হয়েছিলো সামাজিক একটি সংগঠন মায়ের ডাক।”
‘গণতন্ত্র না থাকলে কেউ নিরাপদ নয়’
তারেক বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকলে কথিত সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু অর্থাৎ আপনি কিংবা আমি আমরা কেউ কিন্তু নিরাপদ নই।এমন কি ক্ষেত্রে বিশেষে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও নিরাপদ নয়।
তারেক জিয়া বলেন, আমি প্রায়শঃই আমার আালোচনায় একটি কথা বলে থাকি, সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এগুলো হচ্ছে একটি রাষ্ট্রে ধর্ম-বর্ণ পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকদের বৈশিষ্ট্ কিংবা সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য একটি শব্দ মাত্র। খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী আপনি কিংবা আপনারা যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে পরিসংখ্যানে আপনি এখন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির সদস্য।
একইভাবে আমি এই মুহর্তে ইংল্যান্ডে এখানে আমি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির সদস্য। আপনি ইংল্যান্ডে আসলে … আমি বাংলাদেশে ফিরে গেলে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর এই হিসাবটি সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাবে। এর অর্থ আমাদের যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস যাই থাকুক ভৌ্গোলিক সীমা বেধে দিন শেষে আমরা একই মানুষ। কখনো আমরা সংখ্যালঘু, কখনো আমরা সংখ্যাগুরু। কোনো্ সভ্য রাষ্ট্রে এভাবে নাগরিকদের পরিচয় নির্ধারিত হয় না।
সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ এক সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে তারেক বলেন, ‘‘ এই দেশটা কোনো ব্যক্তি কিংবা দলের নয়।এদেশটা আমার-আপনার আমাদের সকলের।
রোমান ক্যাথলিক প্রধান হিসেবে ‘লিও চতুর্থদশ’ পোপ নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন,‘‘ আসুন আমরা সকলে প্রত্যাশা করি যুদ্ধ ও ঝংঘা বিক্ষুব্ধ এই বিশ্বে তিনি(পোপ) জনগনের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তির বার্তা ছড়িয়ে দেবেন।
সংগঠনের সভাপতি জন গোমেজের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অনিল লিও কস্তা‘র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আর্চবিশপ বিজয় এন ডি‘ক্রুজ, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, বিজন কান্তি সরকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গাজীপুর বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।