বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন এবং মোহনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলের সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে ভারত সরকারের অনুরোধের পর এ পদক্ষেপ নিয়েছে ইউটিউব।
আজ শুক্রবার এই চার চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয় বলে জানিয়েছে তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন এবং মোহনা টিভির ইউটিউব চ্যানেল ভারতের দর্শকেরা দেখতে পারবেন না। ভারতের ভূ-অবস্থান থেকে এই চ্যানেলগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করলে একটি বার্তা সামনে আসে। তাতে বলা হয়, ‘এই কনটেন্টটি বর্তমানে এই দেশে প্রবেশযোগ্য নয়। কারণ, এটি জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সরকারি আদেশের আওতায় রয়েছে।’
ডিসমিসল্যাব বলেছে, তাদের প্রতিবেদন প্রকাশের সময় (শুক্রবার রাত আটটা) পর্যন্ত চ্যানেলগুলোতে প্রবেশ করা যায়নি। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করলে চ্যানেলটি জানিয়েছে, ইউটিউব থেকে ব্লক–সম্পর্কিত একটি আনুষ্ঠানিক নোটিশ তারা পেয়েছে।
বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ডিসমিসল্যাব ভিপিএনে (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) যুক্ত হয়ে আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানায় ভারতীয় অবস্থান নিশ্চিত করার পর ইউটিউবের অফিশিয়াল সাইটে গিয়ে তাদের তালিকাভুক্ত ৩৮টি বাংলাদেশি সংবাদ ও মিডিয়া চ্যানেল যাচাই করে। যার মধ্যে যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন এবং মোহনা টিভিতে প্রবেশ করা যায়নি। পাশাপাশি চ্যানেলগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনাসংবলিত বার্তা দেখা যায়।
ডিসমিসল্যাব এই চার চ্যানেলের ইউটিউব লিংক নয়াদিল্লি ও কলকাতাভিত্তিক দুজন সাংবাদিককে পাঠায়। তাঁরাও নিশ্চিত করেন যে চ্যানেল চারটিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এর একটি স্ক্রিন রেকর্ডও তাঁরা ডিসমিসল্যাবকে পাঠান।
ইউটিউব ভারতের আইন ‘ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস ও ডিজিটাল মিডিয়া এথিকস কোড রুলস’ মেনে চলে। এ আইনের অধীনে ভারত সরকার কোনো কনটেন্ট (আধেয়) ও চ্যানেলকে জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বা জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি বলে মনে করলে তা ব্লক করার নির্দেশ দিতে পারে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটককে হত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে ভারত অপারেশন সিঁদুর নামে এক অভিযানের অংশ হিসেবে পাকিস্তানে হামলা চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেয়।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে ভারত সরকার দেশটির স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ার ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইট নিজ দেশে ব্লক করেছে। এ নিয়ে দ্য ওয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছে, এটা ভারতের সংবিধানে প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর আগে এক্স (সাবেক টুইটার) জানিয়েছে, ভারত সরকার আট হাজারের বেশি ‘অ্যাকাউন্ট’ ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের অ্যাকাউন্টও রয়েছে।
ভারতের নির্দেশে এক ডজনের বেশি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল এবং রাজনীতিবিদ ও তারকাদের ইনস্টাগ্রাম আইডি ভারতে ব্লক করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে। উৎস: প্রথম আলো।