২০২৬ সালকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এক বিশাল ও অত্যন্ত আগ্রাসী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই লক্ষ্যে মার্কিন কংগ্রেস ইতিমধ্যে ১৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজেট বরাদ্দ করেছে, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত আইসিই এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যয় করা হবে।
নতুন এই পরিকল্পনায় এখন শুধু আবাসিক এলাকা নয়, বরং বড় বড় কারখানা ও খামারগুলোতেও বড় ধরনের তল্লাশি ও গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
অভিবাসন সংস্থাগুলোর বার্ষিক বাজেট যেখানে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেখানে জুলাই মাসে পাস হওয়া নতুন প্যাকেজের আওতায় এটি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৭০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই অর্থ দিয়ে হাজার হাজার নতুন এজেন্ট নিয়োগ, নতুন ডিটেনশন সেন্টার তৈরি এবং আধুনিক ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
এতদিন অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কায় খামার বা কারখানাগুলোতে অভিযান কিছুটা এড়িয়ে চলা হলেও, হোয়াইট হাউসের বর্ডার চিফ টম হোমান জানান, আগামী বছর থেকে কর্মক্ষেত্রগুলোতেও গ্রেপ্তার অভিযান তীব্র হবে।
প্রশাসন প্রতি বছর ১০ লাখ অভিবাসীকে বহিষ্কারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লক্ষ ২২ হাজার মানুষকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সরকারি তথ্যমতে, অভিবাস সংস্থা- আইসিই বর্তমানে এমন অনেককে গ্রেপ্তার করছে যাদের অভিবাসন আইন লঙ্ঘন ছাড়া অন্য কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই।
ট্রাম্পের এই আগ্রাসী নীতির ফলে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। আবাসিক এলাকায় টিয়ার গ্যাস ব্যবহার এবং মার্কিন নাগরিকদের ভুলবশত আটকের ঘটনায় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির জনপ্রিয়তা ৫০ থেকে কমে ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে। এর প্রভাব আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপক অভিযানের ফলে কলকারখানায় শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে; অনেকে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন, অনেক মার্কিন নাগরিকও নিজেদের সাথে পাসপোর্ট বহন করছেন।
প্রশাসন শুধু অবৈধ অভিবাসীদের নয়, বরং বৈধভাবে আসা অনেকের ওপরও কঠোর হচ্ছে। হাইতি, ভেনেজুয়েলা ও আফগানিস্তানের হাজার হাজার অভিবাসীর অস্থায়ী আইনি মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি গ্রিন কার্ড ইন্টারভিউ দিতে আসা ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তার করার ঘটনা ঘটেছে।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের দাবি, অপরাধীদের দূর করতে এবং সীমান্ত সুরক্ষিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে সমালোচকরা একে মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন।
সূত্র: একাত্তর টিভি