দীর্ঘ ১৭ বছর লন্ডনে অবস্থান শেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার প্রভাব কখনোই নিস্তেজ ছিল না। বরং প্রযুক্তিনির্ভর ও সংগঠিত নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি দূর থেকে দল পরিচালনার এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থাকলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আন্দোলনের কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কৌশল নির্ধারণে তারেক রহমান ছিলেন সক্রিয়। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, লন্ডনে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্স, এনক্রিপটেড ফোনকল ও অনলাইন বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অবহিত থাকতেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতেন।
দলীয় সাংগঠনিক কাঠামোর ভেতরে তার ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত নেতাদের একটি নেটওয়ার্ক দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল। বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের মাধ্যমে তার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হতো। এর ফলে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ অটুট থাকে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দলের ভেতরে তার বার্তা পৌঁছানো থেমে থাকেনি। জাতীয় দিবস, রাজনৈতিক সংকট কিংবা আন্দোলনের সময় তার বিবৃতি বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য দিকনির্দেশনার ভূমিকা পালন করেছে। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়েই দলের রাজনৈতিক অবস্থান ও সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ভাষা নির্ধারিত হতো।
লন্ডনে অবস্থানের কারণে প্রবাসী রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগেও সক্রিয় ছিলেন তারেক রহমান। প্রবাসী বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো তার নেতৃত্বে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, কূটনৈতিক মহল ও বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টাও চালান তিনি।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকার হিসেবে তারেক রহমান বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতীক। দলীয় সমর্থকদের বড় অংশ তাকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। যা তার অনুপস্থিতিতেও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ভূমিকা রেখেছে।
তবে সমালোচকদের মতে, বিদেশে অবস্থানের কারণে মাঠের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকা তার নেতৃত্বের একটি সীমাবদ্ধতা ছিল। আন্দোলনের সময় বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে বলেও তারা মনে করেন। যদিও দলীয় সমর্থকদের দাবি, বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর সময়ে ভৌগোলিক দূরত্ব আর বড় বাধা নয়।